গত বছর সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের হাতে উঠল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক।

আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে দলের পক্ষে মর্যাদার এই পদক গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সর্বশেষ সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী দলের অন্য ফুটবলাররাও।

শুরুতে পদকের জন্য নারী ফুটবল দলের ১১ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোন ১১ জন পাঠাবে—এ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিপদেই পড়ে যায় তারা। পরে ফেডারেশন দলের ৩২ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বিবেচনা করে ২৩ ফুটবলারের পাশাপাশি কোচ-কর্মকর্তাসহ আরও ৯ জনকে আমন্ত্রণ জানায় মন্ত্রণালয়।

গত বছরের অক্টোবরে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। যে দলে ছিলেন রুপনা চাকমা, ইয়ারজান বেগম, মিলি আক্তার, মাসুরা পারভীন, কোহাতি কিসকু, আফিদা খন্দকার, নিলুফা ইয়াসমিন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শিউলি আজিম, মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, আইরিন আক্তার, মাতসুশিমা সুমাইয়া, শাহেদা আক্তার রিপা, ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার ও মোসাম্মাৎ সাগরিকা।

এর আগে কোনো ক্রীড়া দল একুশে পদক পায়নি। সংস্থা হিসেবে ২০০১ সালে স্বাধীনতা পদক পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে স্বাধীনতা পদকের জন্য স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল অনেকবারই আবেদন করেছিল; কিন্তু তারা এখনো পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসে যা বলে গেল ভূত

ঘটাং ঘট, রাতের ট্রেন। ছুটে চলছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। কেবিন–যাত্রী শিশির মোড়ল, সহযাত্রী সে কি ভূত! মধ্যরাতে আঁধার কেবিনে সহযাত্রীর হঠাৎ প্রশ্ন, ‘আপনি কখনো ভূত দেখেছেন?’ আচমকা প্রশ্নে বিরক্ত শিশির মোড়ল।

অনেক ভূতের গল্প শুনেছি দাদি, নানি, নানার মুখে। দারোগাভূত, গেছোভূত, বাঁশভূত, ব্যাঙভূত, চ্যাংভূত আরও কত নামের ভূত! ছড়া কেটেছি বন্ধুরা তালে তালে, ‘তেঁতুলগাছের তলা/ রাত্রিদুপুর বেলা/ ভূতে মারে ঠেলা।’ কিন্তু ‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসের লেখক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক আমাদের, মানে পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছেন এক প্রাপ্তবয়স্ক ভূতের জীবনভিত্তিক এক তরজমা। লেখকের এই ভূত বাংলা নিয়ে লেখাপড়া করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনটা শুরু হয়েছিল তার স্বপ্ন বুনে। বিয়ে করে ব্যবসায় থিতু হয়েছিল গল্পপটু এই ভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আনুকূল্যে গল্পবন্ধুও জুটে গিয়েছিল মেসেঞ্জারে। তা-ও আবার এই নারীবন্ধুর স্বামী থাকে প্রবাসে। বেশ সময় কাটত মেসেঞ্জারে গল্প বলে অবসরে। বউয়ের সন্দেহের তালিকায়ও নাম উঠেছিল। রাতের ট্রেনের আঁধার কেবিনে বসে এই ভূতপ্রেম, নীতিনৈতিকতা, সন্তানবাৎসল্য, শিশুমনের স্বপ্ন, লড়াকু জীবন আর নেতা নামের নির্মম লেবাসের আড়ালের ক্রূরতার গল্প বলে যায়। নিষ্ঠুরতার আগুন কী করে নিমেষে সব স্বপ্নের যবনিকাপাত ঘটিয়ে দেয়, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা কাঁদিয়ে দেয় সামাজিক বিবেককে। ভূতটি যখন মানুষ ছিল, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল ব্যবসার কাজে। সেই সঙ্গে আকাঙ্ক্ষাও ছিল মেসেঞ্জার-প্রেমিকার সঙ্গে মধুর সময় কাটানোর। শিশির মোড়ল গল্পের মধ্যে এতটাই লীন হয়ে গিয়েছিলেন যে তাঁর তাড়া ছিল গল্পের যবনিকায় পৌঁছানোর, কিন্তু ভূত নামের আত্মাটি সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বলে যেতে থাকে পরতের পর পরত তার দেখা মানুষজীবনের গল্প। শিশির মোড়লের তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে ভূতটি ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ছাপা হওয়া এক রসাত্মক ধারাবাহিক উপন্যাসের কিয়দংশের অবতারণা করে। ওই অংশ ছিল এমন: ‘নায়ক ও নায়িকা ঘরে ঢুকল। তারা দরজা বন্ধ করল। রাতের বেলা। তারা বাতি বন্ধ করল। বিছানায় গিয়ে বসল দুজন পাশাপাশি।’ তারপর লেখা: ‘বাকি অংশ পরের লেখায়।’ পরের সংখ্যায় লেখা শুরু হলো, ‘নায়িকা গোসল সেরে এসেছে। তার চুল বেয়ে পানি ঝরছে। সে একটি গামছা দিয়ে চুলে বেণি বানাচ্ছে।’ এরপর পাঠকদের কাছ থেকে প্রচুর চিঠি আসতে লাগল, ‘দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী হলো?’ উপায়ান্তর না দেখে সম্পাদক নোট দিলেন, ‘এই দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী ঘটিয়াছে, তাহার জন্য সম্পাদক দায়ী নহেন।’ ভূতের জবানিতে গুরুগম্ভীর একটি লেখা লিখতে গিয়ে পাঠকদের এমন একটি রসাত্মক অনুষঙ্গ উপহার দেওয়া কি সব লেখকের পক্ষে সম্ভব!

আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তারাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত?

যে শিশুর স্বপ্ন ছিল পাইলট কিংবা অ্যাস্ট্রোনট হবে, হিংসার আগুন তাকে মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয়। যে শিশুটি ট্রেনের দুলুনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবি এঁকে চলে, নিমেষে সে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, ভেবেছিল কি শিশুটি, কিংবা তার মা-বাবা-স্বজন! কষ্ট মোচড় দিয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, শিশুটি মারা গেলেও তার স্কুলব্যাগটি অক্ষত রয়েছে। হয়তো সে পুড়ে মরার আগে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলেছিল দূরে।

আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তাঁরাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত? কে দেবে এর জবাব? এই প্রশ্নটা দেহ থেকে আত্মা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগের ভূতের, নাকি আপনার, আমার—সবার?

আনিসুল হক

সম্পর্কিত নিবন্ধ