কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলা। জামগাছটির গোড়ায় ইট, বালু আর সিমেন্টের পাকা মঞ্চ। ভাষার মাসে সেখানে আয়োজন করা হয়েছে একুশের অনুষ্ঠান। জামতলায় থাকা মঞ্চের সামনেই ত্রিপল বিছানো, পাশে রয়েছে চেয়ারও। সেখানে বসেছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। জামতলার মঞ্চ থেকে শোনানো হচ্ছে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই জামতলার মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয় কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘তিন নদী পরিষদ’। এই কাজ এক দিন বা এক সপ্তাহের জন্য নয়। কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সংগঠনটি। এমন আয়োজন কিন্তু কয়েক বছর ধরে নয়, ৪২ বছর ধরে চলছে এই ধারা।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিন নদী পরিষষের ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান চলছে। এ বছরের কর্মসূচি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ ছাত্র-জনতার স্মৃতির উদ্দেশে’। কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা বলছেন, দেশে এমন আয়োজন আজও দ্বিতীয়টি করতে পারেনি অন্য কোনো সংগঠন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বুকেও এমন আয়োজন বিরল ঘটনা।

১৯৮৩ সালে গোমতী, মেঘনা ও তিতাস, এ তিনটি নদীপাড়ের বৃহত্তর কুমিল্লার সংস্কৃতিচর্চাকে বিকশিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘তিন নদী পরিষদ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। তিন নদী পরিষদের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রামও।

তিন নদী পরিষদের পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবুল হাসানাত (বাবুল) জানান, ১৯৮৪ সালে তিন নদী পরিষদ প্রথম ২১ দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সময় কুমিল্লা পৌর পার্কে থাকা একটি বিশাল জামগাছের তলায় হয়েছিল ওই অনুষ্ঠান। জামগাছটি এখনো আছে। বর্তমানে ওই স্থানই কুমিল্লা নগর উদ্যানের ‘জামতলা’ নামে পরিচিত। ৪২ বছর ধরে প্রতিবছরই একুশের অনুষ্ঠান এই জামতলায় হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জামতলায় চলে একুশের অনুষ্ঠান। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন একুশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। গতকাল বুধবার জামতলায় আসেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুরুতে একুশ নিয়ে আলোচনায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসনাত আনোয়ার উদ্দীন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। তিন নদী পরিষদ ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান করছে, যা বিশ্বের বুকে বিরল।

একই দিন আয়োজনে অংশ নেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ (ইয়াছিন)। তিনি বলেন, ‘বরকত, সালাম, জব্বার, রফিক, জব্বার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বাংলা ভাষার জন্য। তাই আমাদের বাংলা ভাষা মন দিয়ে ভালোবাসতে হবে। কারণ, একুশ আমাদের অহংকার। আর একুশের কথাগুলোই নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়াচ্ছে তিন নদী পরিষদ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ মতল য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাভারে স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান, আটক ৩

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’–এর পতাকা হাতে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর স্মৃতিসৌধের বেদির সামনে থেকে তাঁরা ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’সহ নানা স্লোগান দিয়ে ফটকের দিকে আসেন।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে আশুলিয়া থানা-পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের মহাসচিব সেলিম রেজা (৪৭), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (৫০) ও আশুলিয়ার গাজীরচট শের আলী এলাকার সোহেল পারভেজ (৪১)।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা স্মৃতিসৌধ থেকে বের হওয়ার সময় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’সহ নানা স্লোগান দেন। পরে স্মৃতিসৌধে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এলে তাঁরা বিভিন্ন দিকে দৌড় দেন। কয়েকজন মূল ফটকের দিকে গেলে জনতার সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে একজনকে পিটুনি দেন জনতা। মারধরের সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজন তাঁদের থামানোর চেষ্টা করেন। পরে তিনজনকে আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশ।

স্লোগান দেওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে সংগঠনটির কয়েকজন স্লোগান দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, আমরা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি।’ পরিচয় জানতে চাইলে তাঁদের একজন বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এটা আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়।’ পরে জানান, তাঁর নাম আমিন মুসল্লি। তিনি বরগুনা সদর থেকে এসেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, স্মৃতিসৌধ চত্বর থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাসব্যাপী নামাজ পড়া ৩২ কিশোরকে সাইকেল দিল মহানগর উত্তর বিএনপি
  • পেপার ও পেপার বোর্ড আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ চান ব্যবসায়ীরা
  • সয়াবিনের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন নেতাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ
  • সাভারে স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান, আটক ৩