‘জামতলা’ থেকে ৪২ বছর ধরে ছড়াচ্ছে একুশের গল্প
Published: 20th, February 2025 GMT
কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলা। জামগাছটির গোড়ায় ইট, বালু আর সিমেন্টের পাকা মঞ্চ। ভাষার মাসে সেখানে আয়োজন করা হয়েছে একুশের অনুষ্ঠান। জামতলায় থাকা মঞ্চের সামনেই ত্রিপল বিছানো, পাশে রয়েছে চেয়ারও। সেখানে বসেছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। জামতলার মঞ্চ থেকে শোনানো হচ্ছে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই জামতলার মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয় কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘তিন নদী পরিষদ’। এই কাজ এক দিন বা এক সপ্তাহের জন্য নয়। কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সংগঠনটি। এমন আয়োজন কিন্তু কয়েক বছর ধরে নয়, ৪২ বছর ধরে চলছে এই ধারা।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিন নদী পরিষষের ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান চলছে। এ বছরের কর্মসূচি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ ছাত্র-জনতার স্মৃতির উদ্দেশে’। কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা বলছেন, দেশে এমন আয়োজন আজও দ্বিতীয়টি করতে পারেনি অন্য কোনো সংগঠন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বুকেও এমন আয়োজন বিরল ঘটনা।
১৯৮৩ সালে গোমতী, মেঘনা ও তিতাস, এ তিনটি নদীপাড়ের বৃহত্তর কুমিল্লার সংস্কৃতিচর্চাকে বিকশিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘তিন নদী পরিষদ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। তিন নদী পরিষদের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রামও।
তিন নদী পরিষদের পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবুল হাসানাত (বাবুল) জানান, ১৯৮৪ সালে তিন নদী পরিষদ প্রথম ২১ দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সময় কুমিল্লা পৌর পার্কে থাকা একটি বিশাল জামগাছের তলায় হয়েছিল ওই অনুষ্ঠান। জামগাছটি এখনো আছে। বর্তমানে ওই স্থানই কুমিল্লা নগর উদ্যানের ‘জামতলা’ নামে পরিচিত। ৪২ বছর ধরে প্রতিবছরই একুশের অনুষ্ঠান এই জামতলায় হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জামতলায় চলে একুশের অনুষ্ঠান। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন একুশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। গতকাল বুধবার জামতলায় আসেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুরুতে একুশ নিয়ে আলোচনায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসনাত আনোয়ার উদ্দীন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। তিন নদী পরিষদ ২১ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান করছে, যা বিশ্বের বুকে বিরল।
একই দিন আয়োজনে অংশ নেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ (ইয়াছিন)। তিনি বলেন, ‘বরকত, সালাম, জব্বার, রফিক, জব্বার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বাংলা ভাষার জন্য। তাই আমাদের বাংলা ভাষা মন দিয়ে ভালোবাসতে হবে। কারণ, একুশ আমাদের অহংকার। আর একুশের কথাগুলোই নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়াচ্ছে তিন নদী পরিষদ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ মতল য়
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীর পথসভায় বক্তারা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা ছাড়া আট মাসে এ চুক্তি বাস্তবায়নে তেমন কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পথসভায় এ কথা বলেছেন বক্তারা।
আজ শনিবার রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে এ সভা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখাসহ সাত দফা দাবিতে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাস্তবায়ন আন্দোলন নামের সংগঠনটি। এর মধ্যে আছে ছয়টি পথসভা, প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ। এর অংশ হিসেবে সকালে বাহাদুর শাহ পার্কের সভাটি হয়।
আজকের সভায় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বন্দোবস্তের আওয়াজ তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বন্দোবস্তের বাস্তব রূপ দিতে হবে। আর এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সরকারের কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা নেই।
সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ২৭ বছরে এই চুক্তির কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি, কোনো ধরনের মৌলিক বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি। যারা চুক্তি করেছিল, তারাও করেনি। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছে, তারাও করছে না।
রুহিন হোসেন বলেন, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। পাহাড়িদের অধিকার রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। এ সময় তাঁরা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বের হয়ে লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার মহানগর দায়রা জজ আদালত, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার এলাকায় সাত দফা কর্মসূচির প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষে আজ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি নেওয়া হয়