২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৩ মাসের মধ্যে নিয়োগের রায় পুনর্বহাল
Published: 20th, February 2025 GMT
২৭ তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগবঞ্চিতের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়ে ১৬ বছর আগে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা পুনর্বহাল করেছেন আপিল বিভাগ।
এই বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে করা পৃথক আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করে এই রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়া নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে তিনটি আপিল করা হয়। এই আপিলের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আজ রায়ের দিন ধার্য করেন। আজ সকাল ১০টার দিকে রায়ের সিদ্ধান্ত অংশ ঘোষণা করেন আদালত।
ওই বিসিএসে প্রথমবারের মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের অপর এক বেঞ্চের দেওয়া রায় বহাল রেখে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন। এই রায় আজ বাতিল ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে আপিলকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন ও মো.
রায়ের পর আপিলকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, এ রায়ের ফলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের মধ্যে যাঁরা যোগদান করতে চাইবেন, তাঁরা ২৭ তম ব্যাচে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ পাবেন।
আইনজীবীর তথ্যমতে, এক-এগারোর সরকারের সময় ২৭ তম বিসিএসে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১ হাজার ১৩৭ জন চূড়ান্ত সুপারিশের পর চাকরিতে প্রবেশ করবেন—এ পর্যায়ে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
১৭ বছরের আইনি লড়াইদ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করেন। এ ক্ষেত্রে ২০৫ জন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন।
২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে যোগদান করা ব্যক্তিরা চাকরিতে থাকবেন এবং রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠতা আইন অনুসারে নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি রিট আবেদনকারীদের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের আজকের রায়ে হাইকোর্টের ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এর আগে ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগবঞ্চিত ২৫ জন আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। এদিকে হাইকোর্টের দ্বিতীয় রায়ের বিরুদ্ধে সরকার তিনটি লিভ টু আপিল করে। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১০ সালের ১১ জুলাই রায় দেন। এই রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া সঠিক বলা হয়।
আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন গত বছর পৃথক আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় পৃথক তিনটি আপিলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আজ আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন। আজকের রায়ে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭ তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিএসসি ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে। ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন। পরে তাঁদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব ত য় ম খ ক পর ক ষ ন য় গবঞ চ ত স ল র ১১ ফল ব ত ল আইনজ ব এই র য় সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকাত–আতঙ্কে ঝালকাঠি পৌরসভায় মাইকিং, মব তৈরি করে শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ
‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে’ বলে গতকাল সোমবার রাতে ঝালকাঠি শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকটি মসজিদে মাইকিং করা হয়। পরে এলাকার লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। পরে তাঁরা ৯ জন নির্মাণশ্রমিককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেন। রাত একটার দিকে পৌরসভার বাসন্ডা ঝোড়াপোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে সদর থানা–পুলিশ জানিয়েছে, গুজব ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে ডাকাত–আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। জেলার কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আটক ওই ৯ জন নিরীহ শ্রমিক। এ সম্পর্কে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিরা নিরীহ শ্রমিক। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝোড়াপোল এলাকায় রাত একটার দিকে বাসন্ডা খালের তীরবর্তী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য বনি আমিন বাকলাইয়ের বাংলো বাড়ির সামনের ঘাটলায় নির্মাণশ্রমিকদের মালামালবোঝাই একটি ট্রলার থামে। এ সময় আইনজীবী বনি আমিন সিসিটিভির ফুটেজে বিষয়টি দেখতে পেয়ে মুঠোফোনে এলাকার কয়েকজনকে জানান। তখন এলাকার মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে ৯ জন শ্রমিককে আটক করে পিটুনি দেন। পরে তাঁরা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ গিয়ে ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করে থানায় আনে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিকে শ্রমিকদের আটক করার খবর শুনে স্থানীয় ঠিকাদার ফাইজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এলাকার লোকজনকে জানান, ওই ৯ শ্রমিক তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এরপরও তাঁকে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে আমার একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বিল বকেয়া থাকায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের এলাকায় চলে আসতে বলেছিলাম। রাত গভীর হওয়ায় আইনজীবী বনি আমিনের বাড়ির সামনের ঘাটলায় শ্রমিকদের ট্রলার ভেড়াতে বলি। এ সময় নিরীহ শ্রমিকদের ডাকাত বানিয়ে মব জাস্টিস করা হয়েছে।’
বনি আমিন বাকলাই বলেন, তাঁদের (শ্রমিক) সন্দেহজনক আচরণ ও চলাচলের কারণে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।