চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির সামনে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ—এমনটাই বলেছিলেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। শেষ পর্যন্ত তার সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলের জয় তুলে নিয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ ব্যবধানে হেরে ইউরোপের সেরা মঞ্চ থেকে ছিটকে গেল সিটি।

বুধবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্লে-অফের দ্বিতীয় লেগে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় রিয়াল। নিজেদের অর্ধ থেকে রাউল অ্যাসেনসিওর বাড়ানো পাসে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এমবাপ্পে গোলরক্ষক এডারসনের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠান জালে। গোল হজমের ধাক্কা সামলানোর আগেই আরও বড় ধাক্কা খায় সিটি। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার জন স্টোনস। তার পরিবর্তে নামানো হয় নাথান আকেকে, যা মানসিকভাবে পিছিয়ে দেয় সফরকারীদের।

১৫ মিনিটে বেলিংহ্যামের ফ্লিকে একবার গোলের সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল, তবে তা লক্ষ্যে থাকেনি। ২৯ মিনিটে এমবাপ্পেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। তবে ৩৩ মিনিটে আর ভুল করেননি তিনি। দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

বিরতির পরও ম্যাচের লাগাম ধরে রাখে রিয়াল মাদ্রিদ। ৬১ মিনিটে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপ্পে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে যা তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক। ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে এটি তার ২৪তম গোল, যা এই সময়ে অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।

৭৪ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দারুণ এক শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান এডারসন। ম্যাচের অন্তিম সময়ে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে একমাত্র গোলটি করেন নিকো গঞ্জালেজ, যা ইউরোপীয় আসরে তার প্রথম গোল। তবে সেটি কেবল ব্যবধান কমানোর কাজই করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এমব প প

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ