প্রথমবার বিধায়ক হয়েই বসছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে, কে এই রেখা গুপ্ত
Published: 20th, February 2025 GMT
প্রথমবারের বিধায়ককেই যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা যায় রাজস্থানে ১৪ মাসে আগেই তা করে দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। বসুন্ধরা রাজে, সিপি জোশীর মতো হেভিওয়েটদের দূরে সরিয়ে বেছে নিয়েছিলেন আনকোরা ভজনলাল শর্মাকে। ২৭ বছর পর ক্ষমতা দখলের পরে এবার দিল্লিতেও প্রথমবারের বিধায়ক রেখা গুপ্তের উপরেই ভরসা রাখলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে যিনি এখনও দিল্লি পৌরসভার কাউন্সিলর।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শালিমার বাগ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত রেখা গুপ্তকে বেছে নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে নতুন মুখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা শপথ নেবেন। খবর-টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার অনলাইন
দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে প্রথমবার বিধায়ক হলেই দিল্লির পৌরসভা ভোটে টানা তিনবার জিতেছেন রেখা গুপ্ত। শেষবার ২০২২-এর ডিসেম্বরে। কিন্তু তার পরেই মেয়র নির্বাচন ঘিরে বেঁধেছিল গন্ডগোল। তিন বার ভেস্তে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে মেয়র নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রার্থী শেলি ওবেরয় ৩৪ ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির রেখাকে। আরেক ফেব্রুয়ারি তাঁর কাছে এনে দিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব।
এবারের বিধানসভা ভোটে চাঁদনি চক এলাকার শালিমার বাগ কেন্দ্রে তিন বারের আপ আদমী পার্টির বিধায়ক বন্দনা কুমারীকে সাড়ে ২৯ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন রেখা। ২০১৫ এবং ২০২০ সালে এই আসনেই বন্দনার কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন রেখা। ঘটনাচক্রে, ১৯৯৮ সালে দিল্লির ক্ষমতা হারানোর সময়ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন এক নারী নেত্রী- সুষমা স্বরাজ। সুষমা, শীলা দীক্ষিত, আতিশী মার্লেনার পরে চতুর্থ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লি পেল রেখাকে।
রাজনৈতিক জীবন: হরিয়ানার জুলানায় ১৯৭৪ সালে রেখার জন্ম। পড়াশোনা, দিল্লির দৌলতরাম কলেজ এবং উত্তরপ্রদেশের মেরঠের চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বণিক (বানিয়া) সমাজের প্রতিনিধি রেখা নব্বইয়ের দশকে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির নেত্রী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। সেবার সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন এ বারের বিধানসভা ভোটে জামানত হারানো কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা। ১৯৯৬ সালে রেখা জেতেন সভাপতি নির্বাচনে। ২০০৭ সালে প্রথম বার দিল্লির পৌরসভা জিতেছিলেন। হয়েছিলেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আরএসএসের সদস্য রেখা বর্তমানে বিজেপির মহিলা মোর্চার অন্যতম সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ৪৮টিতে। মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা নিজে জিতলেও, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হেরে গিয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ। তারা পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিজেপির জয়ের ফলে আবার দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা থেকে যাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বুধের সন্ধ্যায় সেই জল্পনার নিরসন ঘটালেন রেখা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র প রথমব র হয় ছ ল ন ব ধ নসভ
এছাড়াও পড়ুন:
যেদিন প্রথম চট্টগ্রামে নামানো হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’
দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ২২ মার্চ। ১৯৭৭ সাল। সকালের জোয়ারের সময় সাগর থেকে জেটিতে আনা হয় ‘এসএস টেনাসিটি’ জাহাজ। জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার সময় বন্দরকর্মীদের ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কারণ এই জাহাজে প্রথমবারের মতো আনা হয় ধাতব কনটেইনার, যেটিকে তখন বলা হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’।
প্রথমবার আসা সেই জাহাজে ছয়টি কনটেইনার নামানোর জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না। না জাহাজে, না জেটিতে। কীভাবে নামানো হবে সেই কনটেইনার, তা নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তখনকার বন্দর কর্মকর্তাদের। সে সময় ভরসা হয়ে আসে বন্দরে জেটি পুনর্নির্মাণের কাজে থাকা নির্মাণকাজের একটি ক্রেন। সেই ক্রেন দিয়ে দিনভর কৌশল করে নামানো হলো ছয়টি কনটেইনার।
এত দিন শুধু বাল্ক বা ব্রেক বাল্ক জাহাজের হ্যাচ বা খোলে করে খোলা বা বস্তায় ভরে আনা হতো পণ্য। জাহাজ কিংবা জেটিতে থাকা ছোট ছোট ক্রেন দিয়ে তা নামানো হতো। বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার পর এভাবেই কেটে গেছে ৮৯টি বছর। এখন নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে কনটেইনার।
বন্দরকর্মীদের ভাবনায় ফেলে দেওয়া এই ‘জাদুর বাক্স’টি আবিষ্কার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা ম্যালকম ম্যাকলিন (১৯১৩-২০০১)। শুরুতে ছিলেন ট্রাকচালক। পরে ট্রাক কোম্পানির কর্ণধার। ট্রাকে করে এনে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর ঝামেলা, ঝুঁকি ও খরচ কমাতেই ধাতব বাক্সে পণ্য পরিবহনের ধারণার উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি।
দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২৬ এপ্রিল। সেদিন নিউ জার্সির নিউয়ার্ক বন্দর থেকে ‘এসএস আইডিয়াল এক্স’ ট্যাংকারের ডেকে ৫৮টি কনটেইনার নিয়ে টেক্সাসের হিউস্টেন বন্দরে যাত্রা শুরু হয়। ম্যাকলিন দেখলেন, জাহাজের খোলে করে পরিবহন হলে প্রতি টনে খরচ পড়ত ৫ দশমিক ৮৩ ডলার। কনটেইনারে তা নেমে আসে টনপ্রতি প্রায় ১৬ সেন্টে। কমে এল পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। চুরির শঙ্কাও থাকল না।
ম্যাকলিনের ‘সি ল্যান্ড সার্ভিসেস’ শিপিং কোম্পানি ১০ বছর পর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন ছড়িয়ে দেয় ইউরোপে। প্রায় ২১ বছরের মাথায় বিশ্বঘুরে তা পৌঁছে যায় বাংলাদেশেও। প্রথমবার কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর সে সময় বন্দরের ভাবনাচিন্তা কী ছিল, তা জানা যায় বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা হাদী হোসাইনের মুখে। কনটেইনারের যাত্রা শুরুর বছর ১৯৭৭ সালে তিনি বন্দরের পরিকল্পনা বিভাগে যোগদান করেছিলেন। অবসরে যান ২০১২ সালে।
৪৮ বছর আগের কাহিনি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমি বন্দরে যোগ দেওয়ার আগে টেনাসিটি জাহাজ থেকে ছয় কনটেইনার নামানো হয়েছিল। তখন আসলে পরীক্ষামূলকভাবে কনটেইনার পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছিল। প্রথম যে জাহাজে করে কনটেইনার আনা হয়, সেটি ছিল বাল্ক জাহাজ। কনটেইনার নামানো হয় বাল্ক জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানোর জেটিতে। যন্ত্রপাতিও ছিল না। পরের বছরই মূলত কনটেইনার জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে তৈরি হয় প্রথম কনটেইনার জেটি-সিসিটি।’
প্রায় ৬৯ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে লোহা দিয়ে তৈরি এই কনটেইনার পাল্টে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই যেমন যে দেশে আবিষ্কার হয়েছিল কনটেইনার, সেই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের পরিবর্তে সমুদ্রপথে ১০ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বাস বানিয়ে নিতেও খরচ কম পড়ছে। বাংলাদেশে কোনো আপেল উৎপাদন না হলেও সুদূর চীন থেকে কনটেইনারে এনে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিমানভাড়ার চেয়ে কমে পৌঁছানো যাচ্ছে আস্ত ১৪ টন পণ্যের এক কনটেইনার পণ্য। বাংলাদেশে রপ্তানির বড় অংশই কনটেইনারে করে বিশ্বের নানা গন্তব্যে নেওয়া হচ্ছে।
৪৮ বছর আগে ছয় কনটেইনার দিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরে এখন বছরে ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার পরিবহন হচ্ছে। বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় রয়েছে এই বন্দরের নাম। গতবার ছিল ৬৭তম অবস্থানে। দেশ হিসেবে কনটেইনার পরিবহনে এই অবস্থান আরও এগিয়ে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের হিসাবে তা ৪১তম অবস্থানে।
তবে কনটেইনারের সংখ্যায় বাংলাদেশ যত এগিয়ে যাবে ততবার ফিরিয়ে আনবে ২২ মার্চের কথা। কারণ এদিন পণ্য পরিবহনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল এ দেশে। তিন-চার দশক আগে পিটার হান্টারের দ্য ম্যাজিক বক্স: অ্যা হিস্ট্ররি অব কনটেইনারাইজেশন কিংবা জন এইচ হোয়াইটের দ্য ম্যাজিক বক্স: জেনেসিস অব দ্য কনটেইনার বই লিখে জানিয়ে দিয়ে গেছেন সত্যিকারের ‘জাদুর বাক্স’ কনটেইনার-ই।