রাজউকের প্লট: শেখ হাসিনার আনুগত্যের পুরস্কার ঝিলমিলেও
Published: 20th, February 2025 GMT
ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মতো কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পেও ‘অনুগত ও তোষামোদকারীদের’ মূল্যবান প্লট দিয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে ঝিলমিলে দেওয়া প্লট সংখ্যা অন্তত ২০৬।
অসামান্য অবদানের নামে প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। ২০১৩ সালে তাঁকে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটায় তিন কাঠার একটি প্লট দেওয়া হয়। তিনি প্রথম মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।
অসামান্য অবদান দেখিয়ে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ২০৬টি প্লট দেওয়া হয়। প্লট পাওয়া অনেকেই আওয়ামী লীগ সরকারঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত।অধ্যাপক সোবহান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০২১ সালে নিজের মেয়াদের শেষ কার্যদিবসে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেন। এ নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। পরে ওই নিয়োগকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আবদুস সোবহানের মতো প্লট পেয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘অনুগত ও ঘনিষ্ঠ’ অনেকে। শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ঝিলমিল প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটায় ২০৬টির বাইরে আর কাউকে প্লট দেওয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
অসামান্য অবদানের নামে ঝিলমিলে প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলের সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, আইনজীবী, সরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী, সাংবাদিক, গৃহিণী, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ীরা। কেউ তিন কাঠা, কেউ পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ প্লট দেওয়া হয়েছে আনুগত্য ও তোষামোদির উপহার হিসেবে। অল্প কিছু প্লট দেওয়া হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের।
শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ঝিলমিল প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটায় ২০৬টির বাইরে আর কাউকে প্লট দেওয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
‘অনুগত ও তোষামোদকারীদের ৮৩০ প্লট উপহার দেন হাসিনা’ শিরোনামে গত ২০ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে অসামান্য অবদানের নামে অন্তত ৮৩০ জনকে রাজউকের প্লট দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন বিগত তিন সংসদের (নবম, দশম ও একাদশ) সাবেক সংসদ সদস্যরা। তাঁদের সংখ্যা অন্তত ২৫৬। এ ছাড়া সাবেক অন্তত ২২ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রী ও ৩৯ জন সচিব ‘অসামান্য অবদানের’ নামে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্য ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার প্লট পান রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বাইরে ৩০ জন সাংবাদিক, ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী পেয়েছেন প্লট। তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিচারপতি, প্রবাসী, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে।
ঝিলমিল প্রকল্পে অসামান্য অবদান দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া প্লটের তালিকায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি প্লট দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে। ৩৮ জন ব্যবসায়ী ঝিলমিলে প্লট পেয়েছেন। প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩১ জন সরকারি চাকরিজীবী, ১৩ জন সাবেক সংসদ সদস্য, ১২ জন আইনজীবী এবং ১০ জন সাংবাদিক রয়েছেন। অসামান্য অবদানের নামে ঝিলমিলে প্লট দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িচালক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদেরও। কেউ কেউ প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন।
রাজউক দুভাবে প্লট দিয়ে থাকে। এক. লটারির মাধ্যমে। দুই. অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ ধারা অনুযায়ী। এ ধারায়‘অসামান্য অবদানের’ জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ধারাটি বাতিল করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা আবাসিক প্রকল্পে লটারির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আবেদন করে অনেকে প্লট পেয়েছেন। অবশ্য এরপর আর লটারির মাধ্যমে প্লট দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয়নি রাজউক। এর বাইরে ১৩/এ ধারায় প্লট নিয়েছেন অনেকে।
৩৮ জন ব্যবসায়ী ঝিলমিলে প্লট পেয়েছেন। প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩১ জন সরকারি চাকরিজীবী, ১৩ জন সাবেক সংসদ সদস্য, ১২ জন আইনজীবী এবং ১০ জন সাংবাদিক রয়েছেন।প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন ১৩/এ ধারায় প্লট বরাদ্দ নিয়ে। অর্থাৎ লটারির বাইরে যাঁদের সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে অসামান্য অবদান দেখিয়ে প্লট দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়ে। বিগত সময়ে লটারির মাধ্যমে যাঁরা প্লট পেয়েছেন, প্রতিবেদনে সে তালিকা যুক্ত করা হয়নি। গত ২০ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিও ছিল শুধু ‘অসামান্য অবদান’ দেখিয়ে বরাদ্দ করা প্লট নিয়ে।
তখন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সংরক্ষিত কোটা একটি বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছিল। প্লট তাঁদেরই দেওয়া হয়েছে, যাঁরা সরকারের অনুগত, তোষামোদকারী।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার অসামান্য অবদান দেখিয়ে বরাদ্দ করা প্লটের তালিকা করার নির্দেশ দেয়। রাজউক সূত্র বলছে, বিএনপি সরকারের সময়ও এভাবে প্লট দেওয়া হয়েছিল।
সংরক্ষিত কোটা একটি বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছিল। প্লট তাঁদেরই দেওয়া হয়েছে, যাঁরা সরকারের অনুগত, তোষামোদকারী।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানসাবেক সংসদ সদস্য
কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প। ৯১১ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রকল্পে প্লট রয়েছে ১ হাজার ৭৪০টি। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আব্বাস আলী মণ্ডল, মোহাম্মদ জামাল হোসেন, কবিরুল হক মুক্তি, জয়নাল হাজারী (প্রয়াত), আশরাফুন নেছা, আফজাল হোসেন, গোলাম সারোয়ার হিরু, মো. মনিরুল ইসলাম, উম্মে রাজিয়া কাজল, হ্যাপী বড়াল, টিপু সুলতান, অপরাজিতা হক ও লুৎফুননেছা অসামান্য অবদান শ্রেণিতে প্লট পেয়েছেন।
আইনজীবী
আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন আরিফ আহমেদ দুলাল, কাজী সফিউল আলম, মো. জাকির হোসেন, গাজী মো. শাহ আলম, মোহাম্মদ ফোরকান মিঞা, মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া, আবদুর রহমান হাওলাদার, মো. আলী আকবর, মো. আখতার হোসেন, মো. জামাল উদ্দিন, এ বি এম মাহবুবুর রহমান ও মুরাদ রেজা (সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল)।
সরকারি চাকরিজীবী
প্লট পাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন এনামুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনীল চন্দ্র দে, শাহাদাত হোসেন, এম সাইদুর রহমান, শহীদুল হক জীবন, তাপস আহমেদ, মো. মোশারফ হোসেন, মো. ইফতেখার বিন আজিজ, মো. আবুল বাশার, জিনাত হামিদ, শামীমা সুলতানা, মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার ভূঁঞা, মো. মাহফুজ উর রহমান, শ্যামলী নবী, মো. শাহাদাৎ হোসেন, তন্দ্রা সিকদার, মো. মামুন অর রশিদ, মো. জামাল উল্লাহ, সারা আরা মাহমুদ, সেলিম মাহমুদ, দুলাল কৃষ্ণ সাহা, মো. আকতার উজ জামান, হাবিবুল আজিজ, সায়ীদুল হক, মো. ইমরুল চৌধুরী প্রমুখ।
প্লট পাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের কেউ কেউ সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত ও গাড়িচালক ছিলেন। গাড়িচালক ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীদের প্লট দেওয়া হয়েছে যৌথভাবে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শহীদুল হক জীবন, মো. সাইফুল ইসলাম গং (যৌথভাবে তিন কাঠা দুজনকে দেওয়া হয়), মো. মিজানুর রহমান গং, মো. নুরুল ইসলাম লিটন গং, মো. মতিউর রহমান গং, মো. মাহবুব হোসেন গং, মো. বোরহান উদ্দিন গং, লাহুত মিয়া গং, মো. আবদুর রহমান শেখ গং এবং মো. নুরুল আলম, নুরনবী ও মো. শাহীন।
সরকারের কাছে আমাদের বসার জায়গা চেয়েছি, লোকবল ও সম্মানী চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানিয়েছি। দেখা যাক সামনে কী হয়।হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীব্যবসায়ী
অসামান্য অবদানের নামে প্লট পাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান, হুমায়ুন কবির, মো. সেলিম উল্লাহ, মুনির চৌধুরী, মো. মাহমুদুল হক, আবদুল লতিফ মোল্লা, লাভলী সুলতানা, আবদুল ওয়াহিদ, পারুল আক্তার, মো. বাসের উদ্দিন, মো. ফারুক আহমেদ, মো. ইকবাল হোসেন, মো. এইচ এম সেলিম, আবদুর রাশেদ, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, জসীম মাহমুদ, আবু বকর ছিদ্দিক, মো. নূর আলম, মো. মঞ্জুরুল আলম, মো. আনোয়ার হোসেন, খান মঈনুল ইসলাম, মো. রাসেদুল মাহমুদ, মো. সাইদুল ইসলাম, মৃধা মোহাম্মদ শাহজাহান ইসলাম, কাওছার উজ্জামান, কে বি এম মফিজুর রহমান, রুমেশা বেগম, মো. ইলিয়াস হোসেন, মো. লিয়াকত আলী, মো. মনির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শামসুন নাহার, গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া, মাহামুদ সালাহউদ্দিন, সীমা রহমান, মঈনুল হোসেন, রোমান মিয়া ও মো. আবুল কায়সার।
সাংবাদিক ও অন্যান্য
অসামান্য অবদান দেখিয়ে সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা রূপা, সোহেল হায়দার চৌধুরী, ইয়াছিন কবির, মাহবুবুর রহমান টিপু, অরূপ কুমার দত্ত, মশি শ্রাবণ, আফজাল হোসেন, আইনি ইলিয়াস ও শান্ত মিস্ত্রিকে প্লট দিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এর বাইরে পূর্বাচলে প্লট পাওয়া (অসামান্য অবদান দেখিয়ে) আটজন সাংবাদিকের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মিথিলা ফারজানা, আবদুল্লাহ আল ফারুক (প্রয়াত), মাসুদা ভাট্টি, হারুনুর রশীদ, কার্তিক চ্যাটার্জি, নুরুল আমিন, শওকত জামিল খান ও দুলাল কৃষ্ণ আচার্য।
অসামান্য অবদানের নামে প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম গোলাম কবির, ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিন, অভিনয়শিল্পী এস এম শাহরিয়ার নাজিম জয়, চন্দন সিনহা, ফ্যাশন ডিজাইনার মানতাসা আহমেদ, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শেখ ফারুক হাসান হিটলু প্রমুখ।
সাবেক উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন শিক্ষক। ২০১৫ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন। ঢাকায় তাঁর কোনো প্লট ছিল না। এসব কারণে তাঁকে প্লট দেওয়া যৌক্তিক।
২০২৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তখন কয়েকটি ফোনালাপও ফাঁস হয়। তিনি তখন দাবি করেন, অডিও সঠিক নয়। যদিও পরে নিয়োগ বোর্ডের সভা স্থগিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে উঠে এসেছে, ঝিলমিলে নিজের প্লট তদারকিতে তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচ করেছিলেন শেখ আবদুস সালাম।
কমিটি কাজই শুরু করেনি
রাজউকের বরাদ্দ করা প্লট পর্যালোচনায় আদালতের গঠন করে দেওয়া কমিটি এখনো কাজই শুরু করেনি। গত ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট এই কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির প্রধান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের বসার জায়গা চেয়েছি, লোকবল ও সম্মানী চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানিয়েছি। দেখা যাক সামনে কী হয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ খ আবদ স স ল ম সরক র র ক ছ ল প রকল প সরক র র স ল গ সরক র চ কর জ ব স ব ক উপ উপ চ র য ল ইসল ম ত সরক র র রহম ন ব যবস য় র জউক র ব চ রপত ন সরক র আইনজ ব দ ল হক মন ত র হয় ছ ল আওয় ম আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি
নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর।
ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।
ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে।
সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’
ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।