চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার ১৫ নম্বর ঘাট। নদী পারাপারের জন্য এখানে দিন-রাত ভিড় লেগেই থাকে। নগরের সবচেয়ে কাছের দুই উপজেলা আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর বাসিন্দারা এই ঘাট ব্যবহার করেন। কিছুদিন আগে এই ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকার সময় মাঝিদের কথোপকথন কানে আসছিল। ঠিক বাংলা বা স্থানীয় চট্টগ্রামের ভাষা নয়। একটু কাছে গিয়ে শোনার চেষ্টা। সংলাপগুলো এমন, ‘এহোন কিসকা নাম্বার?’, ‘আজ পাসিন্দার কম’, ‘আমরাবি ইনকাম কম উয়াঁই’, ‘সাইনকো পাসিন্দার বারেগা।’

কোন ভাষায় কথা বলছেন, জানতে চাইলে কয়েকজন মাঝি হেসে বললেন, এটা তাঁদের মাতৃভাষা, খোট্টা। অনুবাদও করে দিলেন কথোপকথনের। ‘এখন কার সিরিয়াল’, ‘আমার ইনকাম কম হয়েছে’, ‘সন্ধ্যায় যাত্রী বাড়বে’।

জানা গেল ১৫ নম্বর ঘাটের অনেক মাঝির বাড়িই আনোয়ারা উপজেলার উত্তর বন্দর গ্রামে। ওই গ্রামের ১০ হাজার বাসিন্দা খোট্টা ভাষায় কথা বলেন। ৪০০ বছর ধরে ভাষাটি টিকে আছে। মূলত হিন্দি, উর্দু আর স্থানীয় ভাষার সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে খোট্টা ভাষা। চট্টগ্রাম ছাড়াও ভারতের কলকাতায় এই ভাষার লোকজন রয়েছেন বলে জানা যায়।

আনোয়ারা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে উত্তর বন্দর গ্রাম বা খোট্টাপাড়ার অবস্থান। গ্রামের পশ্চিমে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) আর বঙ্গোপসাগর, উত্তরে মেরিন একাডেমি ও কর্ণফুলী নদী এবং পূর্বে দেয়াঙ পাহাড়। ঘনবসতিপূর্ণ ওই গ্রামে তাঁদের আগমন, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এলাকায় নানান তর্কবিতর্ক থাকলেও লোকজন এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। তবে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের কারণে তাঁদের পরিচয় ‘খোট্টাভাষী’ কিংবা ‘খোট্টা সম্প্রদায়’ হিসেবে।

গতকাল বুধবার দুপুরে উত্তর বন্দর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ওই গ্রামের লোকজন দোকানপাট এবং রাস্তাঘাটে পরস্পরের সঙ্গে খোট্টা ভাষায় কথা বলছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল ভারতের বারানসিতে। মোগল শাসনামলে এখানে মগ আর পর্তুগিজ দস্যুদের দমন করতে তাঁদের পাঠানো হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে মোগলদের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পতনের পর ভারতবর্ষ শাসনের জন্য ১৮৬০ সালে ইংরেজরা পেনাল কোড জারি করে। এর ফলে পেশা হারান খোট্টারা। অনেকেই তখন চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন। এভাবে বন্দর গ্রামে তাঁদের নিবাস গড়ে ওঠে। সে সময় থেকে এখনো তাঁরা নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন।

খোট্টা ভাষায় কথা বলা দুই তরুণ। চট্টগ্রামের আনোয়ারার উত্তর বন্দর গ্রামের খোট্টা পাড়ায় গতকাল সকালে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে’ আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুদিনেও গ্রেপ্তার নেই

বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে’ আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সন্দেহভাজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ হওয়ায় তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নাম-পরিচয় প্রকাশ হওয়ায় অভিযুক্ত গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে রোববার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সোমবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরুর আগেই ডিটেকশনের (শনাক্তের) ক্ষেত্রে সন্তোষজনক পর্যায়ে চলে যাব। সম্ভব যদি হয়, বাই দিস টাইম (এই সময়ের মধ্যে) দুর্বৃত্তদের অ্যারেস্ট করতে সক্ষম হব, ইনশা আল্লাহ।’

তবে ডিএমপি কমিশনার এমন কথা বললেও পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পরও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়ার ঘটনার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহপাঠীরা ‘অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে পারার’ কথা জানান। তাঁরা বলেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওই যুবক থাকতেন মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে আর হলে দেখা যায়নি।

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল শোলা দিয়ে নতুন করে বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’

সম্পর্কিত নিবন্ধ