সরকারের যেকোনো উন্নয়নকাজে নাগরিকের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক। সেই ক্ষতিপূরণের অর্থসহ এই প্রকল্পের বরাদ্দ নির্ধারিত হয়। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের অভিযোগ নতুন নয়। যশোর ইপিজেড প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীদের ভেতরে ক্ষোভ থেকে গেছে। ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়াটি বেগবান না হলে অনেকে আরও বেশি ভুক্তভোগী হবেন। এতে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

২০১৯ সালের নভেম্বরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক একর জমিতে যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি তিন বছরের। এটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ইপিজেডের সীমানা নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। সীমানা ঘেঁষে লাল কালিতে ‘বেপজা’ লেখা কংক্রিটের সীমানা পিলারও পোঁতা হয়েছে। সীমানার মধ্যে মাছের ঘের, ধানের জমি, বাড়ি ও বিভিন্ন প্রকারের গাছপালা রয়েছে। এক পাশে একটি খাল খনন করা হচ্ছে। খালটির কাজও প্রায় ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

এখন সীমানার ভেতরে পড়ে গেছে অনেকের বসতবাড়ি, কৃষিজমি ও মাছের ঘের। একজন কৃষক বলছেন, তাঁর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করতে পারেননি। সেখানে কমপক্ষে এক হাজার মণ ধান হতো। ফলে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে তাঁর। মাছের ঘেরে নতুন মাছ ফেলতেও মানা করা হয়েছে এবং ঘেরে যা মাছ আছে, সেগুলোও তুলে ফেলতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসব মানুষের অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। খাল কাটতে কাটতে কারও বসতভিটার সীমা পর্যন্ত চলে এসেছে। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেলে তাঁরা অন্যত্র কোথাও যেতেও পারছেন না।

জমি হুকুমদখল কর্তৃপক্ষ বলছে, জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত দেড় সহস্রাধিক জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদন চলমান। ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনের তুলনায় সংখ্যাটি কমই বলতে হবে। এতে স্পষ্ট, ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার মধ্যে একটি দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। যশোর কালেক্টরেট ভবনে জমি অধিগ্রহণ শাখায় ঘুরতে ঘুরতে অনেকের পায়ের তলা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে, জমির মালিকানা নির্ধারণে কিছু সমস্যা রয়েছে। অনেকের জমির মামলা আছে, কাগজপত্রে সমস্যাও আছে। ফলে এখানে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আগামী জুনের মধ্যে বেশির ভাগ যোগ্য মালিক জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন।

আমরা তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আশা করি যথাসময়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আবেদন যাচাই–বাছাই ও চেক হস্তান্তর প্রক্রিয়া আরও বেগবান করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ