খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প মনে করে বাবরকে অশ্বিনের ‘খোঁচা’
Published: 20th, February 2025 GMT
খরগোশ ও কচ্ছপের গল্পটি প্রায় সবারই জানা। গল্পটির কাহিনী এই যে, এক খরগোশ একটি কচ্ছপের ধীর গতি নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কচ্ছপ এতে ক্ষুব্ধ হয় এবং খরগোশকে একটি দৌড় প্রতিযোগীতায় চ্যালেঞ্জ করে। প্রথমে তাচ্ছিল্য করলেও একসময় খরগোশ দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে রাজী হয়।
দৌড় শুরু হয়। খরগোশ খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে। সে কিছুদূর গিয়ে একটা গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে আলস্যে। সে ভাবে কচ্ছপ এত দূর আসতে আসতে সে একটা ঘুম দিয়ে ফেলতে পারে। এদিকে কচ্ছপ আসে। সে দেখতে পায় খরগোশ ঘুমিয়ে আছে। খরগোশকে রেখে কচ্ছপ দৌড়ে শেষ সীমানা ছুঁয়ে ফেলে। খরগোশ ঘুম থেকে উঠে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে কচ্ছপ বিজয়ীর মেডেল নিচ্ছে।
হঠাৎ এমন গল্প বলার কারণ নিশ্চয়ই আছে? ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন সেই গল্পকেই মনে করালেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের ক্রিকেটার বাবর আজমের ব্যাটিং দেখে তার গল্পটি মনে পড়ে।
অশ্বিনের গল্পের চরিত্রে বাবর ছিলেন খরগোশের ভূমিকায়। আর কচ্ছপের ভূমিকায় সালমান আগা। নিউ জিল্যান্ডের দেওয়া ৩২০ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে বাবর অতি মাত্রায় ধীর গতির ব্যাটিং করেন। তাতে চাপ বেড়ে যায় পাকিস্তানের লক্ষ্য তাড়ায়। ক্রিজে এসে সালমান আগা পাল্টা আক্রমণে চাপ কমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আসকিং রান রেট অনেক বেশি হওয়ায় তাকে ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হয়। তাতে বেশিদূর যায়নি তার ইনিংস।
একই উইকেটে, একই ম্যাচ পরিস্থিতিতে দুই ক্রিকেটারের বিপরীতমুখী ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে হাস্যরস তৈরি হয়েছে। অশ্বিন তো রীতিমত খোঁচাই দিলেন বাবরকে।
‘‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাবরের ৫০ রানের সফর এবং সালমান আলী আগার ব্যাটিং, "দ্য টর্টোয়েজ অ্যান্ড র্যাবিট স্টোরি"- এর চিত্রায়ন করা উচিত। আশা করি ৫০-এর যাত্রা খুব শিগগিরিই আসবে।"
ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন বাবর। ঘরের মাঠে তার ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখার অপেক্ষায় ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমিরা। কিন্তু মন্থর ব্যাটিংয়ে বাবর প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ। ৯০ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করে আউট হন বাবর। যেখানে ৫১ বলই ডট খেলেছেন। ব্যাটিংয়ের শুরুতে পাওয়ার প্লে’তে ২৭ বল খেলে মাত্র ১২ রান তুলেছিলেন। পরের ২০ রান তুলতে তার খেলতে হয় আরো ২৭ বল। বৃত্তের সুবিধা কাজে লাগাতে না পারায় তার ওপর চাপ বেড়েছিল। সেই চাপ সামলে নিতে পারেননি পরেও। মাত্রাতিরিক্ত ডট বল খেলছিলেন। থিতু হওয়ার পরও রান বের করতে পারছিলেন না স্পিনারদের বিপক্ষেও।
চিরচেনা কন্ডিশনে এমন ব্যাটিংয়ে মুখ থুবড়ে পরে পাকিস্তানের ব্যাটিং। শুধু বাবর নন, টপ ও মিডল অর্ডারে প্রায় প্রত্যেকেই একই ব্যাটিং করেছেন। ওপেনিংয়ে সৌদ সাকিল ১৯ বলে ৬ রান করেন। ফিলিপসের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে রিজওয়ান করেন ১৪ বলে ৩ রান। চোট নিয়ে ব্যাটিং করা ফখর পারেননি মান রাখতে। ৪১ বলে করেন ২৪ রান। স্রোতের বিপরীতে যাওয়া সালমানের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৪২ রান।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পূরণ হলো না স্বপ্ন, আহত রিয়ালে দুঃখী এমবাপ্পে
টিম বাসের সামনে পেছনে প্যারেড ঘোড়ার কুচকাওয়াজ। রাস্তার দুধারে সমর্থকের হাতে রাখা রংমশাল থেকে মায়াবী ধোঁয়া, যেন রাজার আগমন ঘটছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দুর্গে! ম্যাচের আগে এমবাপ্পেদের প্রবেশপথের এই দৃশ্য ফেসবুক ‘রিল’-এ ভাইরাল হয়েছিল! সেই সঙ্গে বেলিংহামের ‘প্রত্যাবর্তনের’ হুঙ্কার কিংবা সমর্থকদের ‘আর্সেনালকে দেখিয়ে দেওয়ার’ বিভিন্ন পোস্ট– সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা গর্জে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বাস্তবের ম্যাচে বর্ষেনি ততটা!
বরং ঘরের উঠোনে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে আর্সেনালের কাছে ১-২ গোলে কঠিনভাবে আহত হয়েছে লা ব্ল্যাঙ্কোসরা। পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী স্প্যানিশ ক্লাবটি এবার আটকে গেল কোয়ার্টারেই। সেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ১৬ বছর পর সেমিতে। যেখানে তাদের মোকাবিলা এখন প্যারিসের দল পিএসজির সঙ্গে।
অথচ এই পিএসজি ছেড়েই ইউরোপের কিং হতে মাদ্রিদে এসেছিলেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে গেলেই শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ইচ্ছাপূরণ হবে– এমন অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাড়া করেছিল তাঁকে। এই মুহূর্তে আহত রিয়ালে তাই সবচেয়ে দুঃখী এই মানুষটিই। বুধবার রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে অফসাইডের একটি গোলের মিথ্যা হুল্লোড় ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলিয়ান যে তারকাকে নিয়ে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার বয়কট করেছিল রিয়াল, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই বা কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ৬৭ মিনিটে যে গোলটি তিনি করেছেন, সেটাতেও আর্সেনালের ডিফেন্ডারের স্পষ্ট ভুল ছিল। এমবাপ্পেকে ফাউল করার কারণে যে পেনাল্টি ভিএআর করে দিয়েছে বলে মাদ্রিদ সমর্থকরা অভিমান করেছেন, এর বাইরে আর ক’টা সুযোগই বা তারা তৈরি করতে পেরেছে।
পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ বল পজিশনে রেখেও গোলমুখে ‘শটস অন টার্গেট’ মাত্র চারটি। যেখানে তিন গোলের বোঝা কাঁধে নিয়ে ম্যাচে নামা ফরোয়ার্ডদের ডিবক্সের কাছাকাছি এসেই আক্রমণ শানানোর কথা, সেখানে কিনা বেলিংহাম, ভিনিরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেষ্টা করে গেছেন। মিডফিল্ডে ভালভার্দে আর চুয়েমেনিকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্য অনেকটাই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে।
তবে গোলরক্ষক কতুর্য়া বার্নাব্যুর দুর্গ সামলানোর চেষ্টা করে গেছেন সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্সেনালের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকাও সাকার দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন কর্তুয়া। কিন্তু সেই সাকারেরই চিপ শটে গোল রিয়ালের এদিন প্রথম গোল হজম করতে হয়। সাকা বক্সে ঢোকার সময় একই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিয়ালের চার ডিফেন্ডার! ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়া রিয়ালের জালে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।
এদিন ম্যাচের পর সবার শেষে মাঠ ছাড়েন কর্তুয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক সাত বছর ধরে আছেন দলটির সঙ্গে। তাই এদিনের হারের কারণ হিসেবে তাঁর চোখে ধরা পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গভীর এক শূন্যতা। ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। এবং সবকিছু বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কেন একটি দল হয়ে খেলতে পারছি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। আপনি যদি শুধু ভিনি আর এমবাপ্পের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, তাহলে তা মাঝে মাঝে কাজে দেবে, কিন্তু সবসময় দেবে না।’
কর্তুয়ার ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, যে রিয়াল সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে বলে ম্যাচের আগে তাদের ভিডিও দেখানো হয়েছিল লকার রুমে, সেই মাদ্রিদ অন্তত এটা না। প্রত্যাবর্তন করার প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ, মিডফিল্ডের দুর্বলতা এবং আক্রমণ ভাগে তারকাদের স্বার্থপরতা– রিয়ালের মুকুট হরণে আপাতত এই তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ দৈনিকগুলো। যেখানে মার্কা শিরোনাম করেছে– ‘নো মিরাকল’।
প্রথম লেগের ম্যাচেই আর্সেনালের ডেকলান রাইস গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় লেগে এসেও তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বার্নাব্যুতে সেলফি তুললেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে রাইসের বাধায় পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি রাইসকে হলুদ কার্ড পেনাল্টি দিলেও রাইস জোরালো যুক্তি দেন এই বলে যে তিনি পেছন থেকে এমবাপ্পেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরালো ছিল না। ভিএআর রাইসের এই যুক্তি মেনে নিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ঠিক এখানেই মাদ্রিদের যত অসহায় আফসোস জমাট বাঁধে।