মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ফারুক আহমেদ। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ প্রকৌশলী কোম্পানির প্রথম এমডি, যিনি প্রশাসন ক্যাডারের আমলা নন।

আওয়ামী লীগ আমলে এমডি নিয়োগের শর্ত পরিবর্তন করে আমলাদের জন্য সুবিধা করা হয়। এমডি পদের যোগ্যতা হিসেবে ‘যোগাযোগ খাতের সাবেক সচিব’ শর্ত যোগ করা হয়। এতে ২০১৬ সালের অক্টোবরে সদ্য সাবেক সড়ক পরিবহন সচিব এম এ এন ছিদ্দিক এমডি পদে নিয়োগ পান। তিনি গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রকৌশলী ডিগ্রিসহ বৈশ্বিকভাবে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। 

নিয়োগ পেতে দেশি-বিদেশি ৭৬ জন আবেদন করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সাতজনকে বাছাই করে। তা থেকে ফারুক আহমেদকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তাঁর অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকং– পাঁচটি দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৩৭ বছরের কর্মজীবনের ২৫ বছর তিনি কাজ করেছেন মেট্রোরেল খাতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন চালু করার কাজেও যুক্ত ছিলেন ফারুক আহমেদ।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। 

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।

অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়। 

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ

৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।

অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’

পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।

আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”

আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ