নভেম্বর থেকে জানুয়ারি– এই তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নেমেছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বেশি। এ তথ্য খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এবার সয়াবিন বীজের আমদানিও ছাড়িয়েছে রেকর্ড।

গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ টন। এক মাসে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়নি আগে কখনোই। আমদানির এই হিসাব-কিতাবের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির যোজন যোজন দূরত্ব। চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জেই মিলছে না চাহিদার অর্ধেক ভোজ্যতেল। 

শুধু খাতুনগঞ্জ নয়, বোতলজাত সয়াবিন নিয়ে পুরো চট্টগ্রামে এমন সংকট চলছে চার মাসেরও বেশি সময়। তবে সমস্যা সমাধানে নেই কোনো উদ্যোগ। মিল মালিকরা বলছেন, তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন। আর পাইকাররা বলছেন, তারা চাহিদার অর্ধেক সয়াবিনও পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন আট ব্যবসায়ী। তারা পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখলে বাজারে সংকট তৈরি হতো না।

গত নভেম্বরে এ সংকট তীব্র হলে সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। তবু সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সরকার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ায়। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৭৫ টাকা। এখন এর চেয়ে বাড়তি দাম দিয়েও বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না খুচরা ক্রেতারা। 
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব বলছে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২২ লাখ টন। এর বড় অংশই আমদানি করতে হয়। দেশীয় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে। ভোজ্যতেলের বাজারে আটটির মতো আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

যা বলছেন মিল মালিকরা

বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দূর করে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি দুই দফা ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রথম বৈঠকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই বলে জানান। তারা দাবি করেন, আগের চেয়ে এখন বাজারে সরবরাহ বেশি আছে। 

সিটি গ্রুপের এক পরিচালক এ ব্যাপারে কথা বলতের অস্বীকৃতি জানালেও সেই বৈঠকে সিটি গ্রুপেরই উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারিতে ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম ওই সভায় জানান, টিকে গ্রুপ আগের বছরের চেয়ে বোতলজাত তেলের সরবরাহ ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে ১১ হাজার ৮১০ টন তেল সরবরাহ দিয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন।

কথার সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার

মিল মালিকদের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের শীর্ষ এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা এখন চাহিদার অর্ধেক পণ্যও পাচ্ছি না। গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলে যা তেল পেতাম, সেটাও হয়তো আর পাব না।’ খাতুনগঞ্জের তেল বিক্রেতা মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, বাজারে বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল নেই। ডিলাররা চাহিদার অর্ধেক তেলও সরবরাহ দিচ্ছে না। ৫ লিটারের বোতলে দাম ৮৫২ টাকা লেখা। এখন ১০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সেটা।

বন্দর দিয়ে চার গুণ বেশি আমদানি জানুয়ারিতে

গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে এই জানুয়ারিতে প্রায় চার গুণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রর উপপরিচালক ড.

মোহাম্মদ শাহ আলম। 

১৫ দোকান ঘুরে সয়াবিন মিলেছে চারটিতে

চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরেজমিন ঘুরে মিল মালিকদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম নগরীর পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, রিয়াজ উদ্দিন বাজারের অন্তত ১৫ দোকান ঘুরে মাত্র চার মুদি দোকানে মিলেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। নতুন চাক্তাই মোড়ের মেসার্স নুরে মদিনা নামে মুদি দোকানটিতে ৫ লিটার সয়াবিন তেলের একটি বোতলের দাম দাবি করা হয় ৯৫০ টাকা। অথচ ৫ লিটারের ওই বোতলে ৮৫২ টাকা দাম লেখা রয়েছে। একই দোকানে এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। পাশের মেসার্স এস আর ট্রেডিং নামে মুদি দোকানে দুই লিটারের ‘রূপচাঁদা’ ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। দুই লিটারে দাম ৩৬০ টাকা বলে জানান দোকানি। চাক্তাই ভাঙাপুল এলাকার মেসার্স হক ব্রাদার্সের মো. নাছির বলেন, ‘১০ দিন ধরে ডিলাররা বোতলজাত সয়াবিন তেল দিচ্ছে না।’ খাতুনগঞ্জের সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘বোতলজাত সয়াবিন নেই ১৫ দিন ধরে।’ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এগুলো কৃত্রিম সংকট। রমজান ঘিরে সিন্ডিকেট বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।’

অথচ দাম কমেছে বিশ্ববাজারে

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম আগের চেয়ে অনেক কমছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬১ ডলার, যা গত নভেম্বরের চেয়ে ১০০ ডলারের মতো কম। অথচ বাংলাদেশে এই পণ্যের দাম বাড়ছে। বোতলজাত তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক সপ্তাহে লিটারপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এখন খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ১৮২ টাকা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল খ ত নগঞ জ র ভ জ যত ল র সরবর হ বছর র বলছ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশের একটি রেওয়াজ আছে। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ এলে বাজারে ইলিশের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার বাজারে বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি বা একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং  ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুইটি রানী রাইজিংবিডিকে বলেন, “পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ না খেলে নববর্ষ উদযাপন হবে কী করে? তাই স্বামীকে নিয়ে ইলিশ নিতে এসেছি। এখানে ভালো মানের ইলিশ পাওয়া যায়। আমি এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশ নিয়েছি। আমার কাছ থেকে চার হাজার টাকা রেখেছে। গত সপ্তাহেও এই দামে নিয়েছি।”

আরো পড়ুন:

কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

শেষ মুহূর্তে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা

সাজ্জাদুল ইসলাম নামের আরেকজন ক্রেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের অফিসের জন্য ১৫ কেজি ইলিশ নিয়েছি। অফিসের সবাই ইলিশ দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করব। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম রেখেছে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। অন্য সময় হয়তো ১ হাজার ৫০০ তে পেতাম। তবে এখানকার মাছগুলো টাটকা।”

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতে আসা কাইয়ুম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে অন্য বছরের তুলনায় ইলিশের দাম কম দেখলাম। বড় ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মধ্যে। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত রয়েছে তাদের পক্ষে এই দামেও ইলিশ কেনা সম্ভব না।”

কারওয়ান বাজারে সুজন মৎস্য আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী মো. সুজন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ থাকার কারণে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। নদীর ইলিশের চাহিদা বেশি। এখন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে আগে যেমন পয়লা বৈশাখে বাজারে ভিড় থাকত। এ বছর ভিড় দেখছি না, বিক্রিও কম।”

বাবুল মৎস্য আড়ৎ এর ইলিশ বিক্রেতা বাবুল মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার বাজারে ইলিশের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বড় ইলিশ মাছের সরবরাহ ঠিক আছে।” 

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন বিনিয়োগ ‘পড়বে অসম প্রতিযোগিতায়’ 
  • যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি করবে না চীন
  • ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম
  • ইউক্রেনে গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র
  • ধরা পড়ছে না ইলিশ, জেলেদের দিন কাটছে অর্থকষ্টে
  • আদানির সরবরাহ কমে লোডশেডিং বেড়েছে
  • পানি নেই ঝিরি-ঝরনায় সংকটে দুর্গম গ্রামবাসী
  • টেসলা কতটা ‘মেড ইন আমেরিকা’
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু
  • রাবির ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের উত্তরপত্র