বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে ইতালির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত
Published: 20th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় ইতালি সরকারের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক উপমন্ত্রী মারিয়া ত্রিপোদি।
গতকাল বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মারিয়া ত্রিপোদি। এ সময় তিনি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং চলমান কর্মসূচিতে সমর্থনের ঘোষণা দেন। খবর বাসসের।
ইতালির উপমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ইতালি ও বাংলাদেশ একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ। অনেক বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস করেন এবং তারা আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। অবৈধ অভিবাসন রোধে বাংলাদেশকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আইনসম্মত অভিবাসন সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ মানব পাচার রোধে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং দক্ষ কর্মীদের বৈধ চ্যানেলে বিদেশে পাঠানোর প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনার এই সফর একটি ঐতিহাসিক সময়ে হচ্ছে। জুলাই ঘটনার পর এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। আমরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জবাবে ইতালির উপমন্ত্রী বলেন, ইতালি বাংলাদেশের জনগণ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করবে না। অনেক ইতালীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, বিশেষ করে টেক্সটাইল, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন তিনি।
এ সময় তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড.
একই সময়ে সপ্তম জাতীয় কমডেকা ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি সিলমোহর অবমুক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মুহাম্মদ এহছানুল হক, কমডেকা-প্রধান মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ছেঁড়াফাটা ময়লা নোটেই কি বাচ্চাদের ঈদ সালামি
এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টাকার নতুন নোট বাজারে আসবে না। এটা পুরোনো খবর। কিন্তু বাচ্চাদের ঈদ সালামি বা ঈদি কি পুরোনো নোটেই দিতে হবে? সাধারণত ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকার নতুন নোটেই ঈদের সালামি বেশি দেন সবাই। ছেলে-মেয়ে, ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজি-ভাতিজাসহ প্রিয়জনদের নতুন নোট দিয়ে ঈদের সালামি দেওয়া বছরের পর বছর অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
বাজারে এখন ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার নোটের অবস্থা বেশ খারাপ। ময়লা ও ছেঁড়াফাটা নোটই বেশি। নতুন নোট না থাকায় এবার সালামি দিতে এসব পুরোনো নোট ব্যবহার করতে হবে। পুরোনো নোটে বাচ্চাদের কতটা খুশি করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ঈদ আনন্দে ভাটা পড়বে না তো?
আবদুল্লাহ আল মামুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিবছর তাঁর ছেলে অনুভব ও ভাইয়ের সন্তানদের ঈদ সালামি দিতে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিনে উত্তরার একাধিক ব্যাংক শাখায় গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেননি। কারণ, ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকার নোট নেই। ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নোট আছে শুধু। আবদুল্লাহ আল মামুন চিন্তায় আছেন, কীভাবে বাচ্চাদের বোঝাবেন যে এবার ঈদ সালামিতে নতুন টাকা নেই। পুরোনো টাকাই ভরসা।
ঈদের সালামি পেতে বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। কতটা আগ্রহ আছে, এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আর্থিক খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এ হক ভূঁইয়া। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে মালদ্বীপ বেড়াতে যাবেন। কিন্তু তাঁর আট বছরের ছেলে মালদ্বীপ বেড়াতে যেতে আগ্রহী নয়। কারণ, সে তাঁর বাবাকে জানিয়েছে, ঈদের সময় বেড়াতে গেলে তাঁর নতুন টাকার ঈদ সালামি ‘মিস’ হয়ে যাবে। এ নিয়ে তাদের পরিবারে হাসি–মশকরা চলছে।
যে কারণে টাকার নতুন নোট নেইপ্রতিবছর ঈদের সময় ১৫–২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোট বাজারে ছাড়া হয় প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায়। বাজার থেকে সমপরিমাণ পুরোনো নোট তুলে নেওয়া হয়।
১০ মার্চ নতুন নোট বিতরণ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ঈদ উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দেওয়া হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকে টাকার নতুন নোট বিতরণ নেই। কোনো কোনো শাখায় ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নতুন নোট মিলছে। ঈদের সালামি হিসেবে ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকা খুব বেশি জনপ্রিয় নয়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের তেজগাঁও শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর ব্যাংকের শাখায় গড়ে ২০০ কোটি টাকার মতো আমানত থাকে। প্রতিবছর ঈদের সময় এ শাখায় ৩০-৪০ লাখ টাকার নতুন নোট পাওয়া যায়। ব্যাংকের আমানতের অনুপাত অনুসারে নতুন নোটের সরবরাহ করা হয়। এবার নতুন নোট বিতরণ স্থগিত থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিদিন গ্রাহকেরা নতুন নোটের জন্য আসেন। কিন্তু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পুরোনো নোটের বাজারে দাম বেশিএবারের ঈদে নতুন নোট না আসার খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই মতিঝিল ও গুলিস্তানের এই নতুন টাকার বাজার চড়া। ২, ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কিনলে আগের চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্তে এমন প্রভাব পড়েছে।
প্রতি বান্ডিলে গতবারের ঈদের মৌসুমের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদাই বেশি।
১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রির জন্য ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হাঁকছেন। এক বান্ডিলে ১০০টি নোট থাকে এবং এর মূল্যমান ১ হাজার টাকা। দর-কষাকষি করে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে একেকটি বান্ডিল ক্রেতারা কিনছেন। গত বছর পবিত্র রোজার সময় এমন এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ নতুন নোটের বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের বাড়তি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা গত বছর পবিত্র রোজার সময় ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার এক বান্ডিলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ৪৫০ টাকার কমবেশি।
নতুন নোট আসবে আগামী মাসেকেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। টাকার নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।