সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে অর্ধশতাধিক অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের প্রতিটিই যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অথচ এসব অবৈধ রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিনই পার হচ্ছে পথচারী ও যানবাহন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারির দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এসব ক্রসিংয়ের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি।
গত ৫ বছরে এই রুটে সিলেটের শিববাড়ী, ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর, মাইজগাঁও, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিং, কুলাউড়া স্কুল চৌমোহনা ও বরমচাল রেলক্রসিংয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করলেও টনক নড়েনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা তাদের আওতাধীন। এ অঞ্চলে অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে ৫৬টি। এ তিন জেলায় অনুমোদিত রেলক্রসিং ১৯টি। এর মধ্যে সাতটিতে গেটম্যান থাকলেও বাকি ১২টি লেভেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইলাশপুর ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কুলাউড়া-বড়লেখা রেলক্রসিংয়ে ছয়জন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্টদের মতে, আইন অমান্য করে রেললাইনে চলাফেরা, লেভেলক্রসিং ও রেল সেতু পারাপার এবং গেটম্যান ছাড়া লেভেলক্রসিং এসব দুর্ঘটনার কারণ। সে ক্ষেত্রে পুলিশের টহল বৃদ্ধি, রেললাইনে অবাধে চলাচল নিয়ন্ত্রণ, লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জনসচেতনতা বাড়িয়ে এসব দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিষয়টি মেনে নিয়ে আখাউড়া জিআরপি থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, সমস্যাগুলো সমাধানে সীমিত জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট-আখাউড়া রেল রুটে অর্ধশতাধিক অবৈধ রেলক্রসিং গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৩০টিরও বেশি। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো হচ্ছে– সিলেটের শিববাড়ী, খালেরমুখ বাজার, মোগলাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন, মাইজগাঁও রেলস্টেশন, মণিপুর চা বাগান ও মোমিনছড়া চা বাগান, ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কের বরমচাল, ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়ক ক্রসিং, মনু স্টেশন-শমসেরনগর, ভানুগাছ-কুমড়াকাপন সড়ক, ভানুগাছ-মুন্সিবাজার সড়ক, সাতগাঁও-সিন্দুর খান সড়ক, শাহজীবাজার-আশিদ্রোন সড়ক ও মিরপুর-তুঙ্গেশ্বর মাছের বাজার রেলক্রসিং।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে অসংখ্যবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর নতুন সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় লেভেলক্রসিংগুলোতে পারাপারে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।
২০১৫ সালের ৬ মার্চ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্তিশ গ্রামের যুবক তারা মিয়া মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন। ১৫ মার্চ দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারান আব্দুল মুকিত নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মী। ৯ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে কাটা পড়েন ফেঞ্চুগঞ্জ কটালপুর ডন্ডি গ্রামের কটন আলী।
২০১৬ সালের ২০ জুন একই ক্রসিংয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২৪ জুন রাতে মিরাজ মুন্সি নামের ফরিদপুর গ্রাসরুট টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন।
২০১৭ সালের ২০ জুন ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে ছাতকের শিক্ষক টিটু আচার্য্য কাটা পড়েন। ২০১৮ সালের ৯ মে নাইম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ রেল ব্রিজে এবং একই দিন হবিগঞ্জের মিরপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান।
একই বছরের ৪ জুলাই মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে আয়না বিবি সিলেটগামী জালালাবাদ ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন। ১৬ জুলাই ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন ক্রসিংয়ে সুরমা মেইল ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক। ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর মোমিনছড়া চা বাগানসংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃত্যু হয়।
২০১৯ ও ২০২০ সালে কভিট-১৯-এর কারণে দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ কুলাউড়া সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের হোসেনপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমাংশে একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে তিনজন নিহত ও আটজন আহত হন। একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর মাধবপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এরশাদ মিয়া নামে এক রেল কর্মচারী।
২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান সাদেক, পাবেল ও রুবেল নামে তিন যুবক। পাবেলের চাচাতো ভাই রোমান আহমদ জানান, একটি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু কত কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। গেটম্যানরা সতর্ক থাকলে এরকম দুর্ঘটনা ঘটত না।
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে সুজন মিয়া নামে এক কিশোর। ১৫ অক্টোবর ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর পয়েন্টে গেটম্যানের অবহেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু ঘটে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস শহীদের। ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট শ্রীমঙ্গল রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় আন্তঃনগর উপবন ট্রেনের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষে সারাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন ক্রসিং অতিক্রমকালে ট্রেনের ধাক্কায় ৩০ গজ দূরে ছিটকে পড়ে একটি প্রাইভেট কার। এতে চালক হোসেন আহমদ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে সময় গাড়িতে আর কোনো যাত্রী না থাকায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গেটম্যান সাগর ইসলাম জানান, গেট বন্ধ করলেও অনেকে তা অমান্য করে পার হতে চান। অনেক সময় অটোরিকশাগুলো ক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের প্রকৌশলী আশরাফুল আলম খান জানান, অবৈধ রেলক্রসিংগুলো বন্ধ করার জন্য ২০০৯ সালে রেল মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২-এর পক্ষ থেকে দেশের সব অবৈধ রেলক্রসিং বাতিল করতে রেল মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পরবর্তী সময়ে রেল সচিবালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নির্দেশ আসে যে, এলাকার স্বার্থে অবৈধ রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে স্থানীয়ভাবে গেটম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন স প ট ম বর দ র ঘটন য় র লওয় ন সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
অনিরাপদ ক্রসিংয়ে মরণফাঁদ
সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে অর্ধশতাধিক অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের প্রতিটিই যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অথচ এসব অবৈধ রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিনই পার হচ্ছে পথচারী ও যানবাহন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারির দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এসব ক্রসিংয়ের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি।
গত ৫ বছরে এই রুটে সিলেটের শিববাড়ী, ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর, মাইজগাঁও, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিং, কুলাউড়া স্কুল চৌমোহনা ও বরমচাল রেলক্রসিংয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করলেও টনক নড়েনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা তাদের আওতাধীন। এ অঞ্চলে অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে ৫৬টি। এ তিন জেলায় অনুমোদিত রেলক্রসিং ১৯টি। এর মধ্যে সাতটিতে গেটম্যান থাকলেও বাকি ১২টি লেভেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইলাশপুর ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কুলাউড়া-বড়লেখা রেলক্রসিংয়ে ছয়জন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্টদের মতে, আইন অমান্য করে রেললাইনে চলাফেরা, লেভেলক্রসিং ও রেল সেতু পারাপার এবং গেটম্যান ছাড়া লেভেলক্রসিং এসব দুর্ঘটনার কারণ। সে ক্ষেত্রে পুলিশের টহল বৃদ্ধি, রেললাইনে অবাধে চলাচল নিয়ন্ত্রণ, লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জনসচেতনতা বাড়িয়ে এসব দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিষয়টি মেনে নিয়ে আখাউড়া জিআরপি থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, সমস্যাগুলো সমাধানে সীমিত জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট-আখাউড়া রেল রুটে অর্ধশতাধিক অবৈধ রেলক্রসিং গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৩০টিরও বেশি। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো হচ্ছে– সিলেটের শিববাড়ী, খালেরমুখ বাজার, মোগলাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন, মাইজগাঁও রেলস্টেশন, মণিপুর চা বাগান ও মোমিনছড়া চা বাগান, ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কের বরমচাল, ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়ক ক্রসিং, মনু স্টেশন-শমসেরনগর, ভানুগাছ-কুমড়াকাপন সড়ক, ভানুগাছ-মুন্সিবাজার সড়ক, সাতগাঁও-সিন্দুর খান সড়ক, শাহজীবাজার-আশিদ্রোন সড়ক ও মিরপুর-তুঙ্গেশ্বর মাছের বাজার রেলক্রসিং।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে অসংখ্যবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর নতুন সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় লেভেলক্রসিংগুলোতে পারাপারে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।
২০১৫ সালের ৬ মার্চ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্তিশ গ্রামের যুবক তারা মিয়া মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন। ১৫ মার্চ দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারান আব্দুল মুকিত নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মী। ৯ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে কাটা পড়েন ফেঞ্চুগঞ্জ কটালপুর ডন্ডি গ্রামের কটন আলী।
২০১৬ সালের ২০ জুন একই ক্রসিংয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২৪ জুন রাতে মিরাজ মুন্সি নামের ফরিদপুর গ্রাসরুট টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন।
২০১৭ সালের ২০ জুন ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে ছাতকের শিক্ষক টিটু আচার্য্য কাটা পড়েন। ২০১৮ সালের ৯ মে নাইম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ রেল ব্রিজে এবং একই দিন হবিগঞ্জের মিরপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান।
একই বছরের ৪ জুলাই মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে আয়না বিবি সিলেটগামী জালালাবাদ ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন। ১৬ জুলাই ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন ক্রসিংয়ে সুরমা মেইল ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক। ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর মোমিনছড়া চা বাগানসংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃত্যু হয়।
২০১৯ ও ২০২০ সালে কভিট-১৯-এর কারণে দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ কুলাউড়া সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের হোসেনপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমাংশে একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে তিনজন নিহত ও আটজন আহত হন। একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর মাধবপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে এরশাদ মিয়া নামে এক রেল কর্মচারী।
২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান সাদেক, পাবেল ও রুবেল নামে তিন যুবক। পাবেলের চাচাতো ভাই রোমান আহমদ জানান, একটি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু কত কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। গেটম্যানরা সতর্ক থাকলে এরকম দুর্ঘটনা ঘটত না।
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে সুজন মিয়া নামে এক কিশোর। ১৫ অক্টোবর ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর পয়েন্টে গেটম্যানের অবহেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু ঘটে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস শহীদের। ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট শ্রীমঙ্গল রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় আন্তঃনগর উপবন ট্রেনের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষে সারাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন ক্রসিং অতিক্রমকালে ট্রেনের ধাক্কায় ৩০ গজ দূরে ছিটকে পড়ে একটি প্রাইভেট কার। এতে চালক হোসেন আহমদ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে সময় গাড়িতে আর কোনো যাত্রী না থাকায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গেটম্যান সাগর ইসলাম জানান, গেট বন্ধ করলেও অনেকে তা অমান্য করে পার হতে চান। অনেক সময় অটোরিকশাগুলো ক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের প্রকৌশলী আশরাফুল আলম খান জানান, অবৈধ রেলক্রসিংগুলো বন্ধ করার জন্য ২০০৯ সালে রেল মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২-এর পক্ষ থেকে দেশের সব অবৈধ রেলক্রসিং বাতিল করতে রেল মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পরবর্তী সময়ে রেল সচিবালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নির্দেশ আসে যে, এলাকার স্বার্থে অবৈধ রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে স্থানীয়ভাবে গেটম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।