Samakal:
2025-03-31@23:44:30 GMT

চা দোকানি থেকে ‘ফুল জুয়েল’

Published: 20th, February 2025 GMT

চা দোকানি থেকে ‘ফুল জুয়েল’

ঈশ্বরদী বাজারে ছোট্ট একটি দোকান মাহমুদুর রহমান জুয়েলের। পাশাপাশি অল্প কিছু গোলাপ ফুল বিক্রি শুরু করেন। চাহিদা বাড়তে থাকলে ব্যবসার পরিসর বাড়ান। এক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের আবাদ শুরু করেন। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পড়েছে তাঁর আসল নাম। এলাকার লোকজন এখন তাঁকে ‘ফুল জুয়েল’ নামেই ডাকেন। 

ফুল জুয়েল নামের সঙ্গে বদলে গেছে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া গ্রামের চিত্র। অর্ধশত বিড়ি শ্রমিক কাজ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তাঁর বাগানে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাপনের ধরন। বিড়ির কারখানায় কাজ করায় আগে ঘন ঘন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। এখন আর অসুস্থ হন না। মনের আনন্দে ফুল বাগানে ফুল ফোটানোর কাজ করছেন। কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউবা ফুল তুলছেন। মালা গেঁথে সাজিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত অনেকে।  

বাগানেই কথা হয় জুয়েলের সঙ্গে। বললেন, যশোরের গদা খালী এলাকায় ফুল চাষের ব্যাপকতা দেখে ভাবি, ওরা পারলে আমি কেন পারব না। সেই থেকে শুরু। ফুলের ব্যবসা করতে এসে অনেকের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভালোবেসে যখন কেউ ফুল জুয়েল বলে ডাকে, তখন মনটা ভরে যায়। 

পাশেই কাজ করছিলেন শ্রমিক মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করিনি। না বুঝে বিড়ি বাঁধার কাজ করেছি।  সারাদিনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পেতাম। এখন জুয়েল ভাইয়ের বাগানে ফুল তুলে বাড়িতে বসে মালা গাঁথি। সংসারের অন্য কাজ করেও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। 

শ্রমিক মালা খাতুন ও শেফালী খাতুন জানান, বিড়ি কারখানায় কাজ করার সময় অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। এখন ফুল নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আয়ও হয় বেশি, শরিরেও কোনো রোগ নেই। তাদের মতো ঘরে বসে মালা গেঁথে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করছেন বীথি খাতুন। তিনি বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন ফুলের মালা গেঁথে আয় করছি। এতে স্বামী খুশি হয়, আমারও ভালো লাগে। 

যেভাবে ফুলের ব্যবসা শুরু 

সময়টা ছিল ২০০২ সাল। ঈশ্বরদী বাজারের রিকশা সমিতির মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান ছিল জুয়েলের। চা, বিস্কুট, শরবতের পাশাপাশি গোলাপ ফুল বিক্রি করতেন। স্থানীয়ভাবে ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন দিবসে। বিক্রিবাট্টা ভালোই হতো। দিনে দিনে চাহিদা বাড়তে থাকে। যশোরের গদা খালী থেকে ফুল আনতে গেলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল আবাদের চিন্তা মাথায় আসে। সেই থেকে শুরু ফুলের সঙ্গে তাঁর পথচলা। 

২০১২ সালে গ্রামের ঝোপজঙ্গলে ভরা ১০ কাঠা জমি পরিষ্কার করে ফুলের আবাদ শুরু। এখন ১২ বিঘা জমিতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলী, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, চেরি, রক্তগাঁদাসহ হরেক রকম ফুলের সমাহার। এলাকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। বাগান ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ জন নারী-পুরুষের। একজন ম্যানেজার রয়েছেন। ১২ বিঘা জমিতে ফুল আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির বার্ষিক খাজনা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শ্রমিকের মজুরিসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। বছরে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় হয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে মিয়ানমারে। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

এদিকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস।  খবর- বিবিসি

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না। 

শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। 

সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। 

২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ