Prothomalo:
2025-04-19@04:00:29 GMT

কালিমা শাহাদাত সত্য সাক্ষ্য

Published: 20th, February 2025 GMT

ইসলাম হলো সত্যকে গ্রহণ করা এবং অসত্যকে পরিহার, পরিত্যাগ বা বর্জন করা। ইমান বা বিশ্বাসের মূল কথা হলো কালিমা। কালিমা শাহাদাত হলো ইমান ও ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি। কালিমা অর্থ শব্দ, বাণী বা বাক্য; শাহাদাত অর্থ সাক্ষ্য দেওয়া। কালিমা শাহাদাত অর্থ সাক্ষ্য বাণী। কালিমা শাহাদাত ফারসিতে হয় ‘কালেমায়ে শাহাদাত’; মূল আরবিতে হবে ‘কালেমাহ শাহাদাত’ বা ‘আল কালিমাতুশ শাহাদাত’।

কালিমা শাহাদাত

কালিমা শাহাদাতে এই ঘোষণাই দেওয়া হয়, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু; ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু

কালিমা শাহাদাত এর অর্থঅর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নাই, তিনি এক ও একক, তাঁর কোনো শরিক বা অংশীদার নাই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার অতি প্রিয় খাস বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসুল।’

মহান আল্লাহ তায়ালা হলেন পরম সত্য বা মহাসত্য। এই সত্যের সাক্ষ্যই হলো ইমান বা ইমানের দাবি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয় নবী আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

) হলেন মহাসত্যবাদী ও পরম বিশ্বাসী বা বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তাঁর সত্য নবুয়ত ও রিসালাতের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও নিঃশর্ত সাক্ষ্য প্রদান ইমানেরই অংশ। তাঁর প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা হলো ইমান। তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ হলো ইসলাম।

সাক্ষ্য দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো প্রত্যক্ষ করা বা স্বচক্ষে অবলোকন করা বা দেখা। মহান আল্লাহ তায়ালা এমনই পরম সত্য, যা দৃশ্যমান হওয়া দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট; তাই এটি প্রত্যক্ষকারীদের অপেক্ষা রাখে না। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সততা ও সত্যবাদিতা জগৎ–খ্যাত ও প্রশ্নাতীত। যারা তাঁর জানের দুশমন ও প্রাণের শত্রু ছিল, তারাও তাঁর সত্যতা ও বিশ্বস্ততার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এ বিষয় দুটি উদ্ধৃত হয়েছে এভাবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মালিকুল হাক্কুল মুবিন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি ছদিকুল ওয়াদিল আমিন।’ অর্থাৎ ‘এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, তিনি শাসক অধিপতি, তিনিই সুস্পষ্ট ও পরম সত্য; হজরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, চরম সত্যবাদী, ওয়াদা ও অঙ্গীকার রক্ষাকারী এবং পরম বিশ্বস্ত ও অতি বিশ্বাসী। (আল মুফরাদাত, বুখারি)। সব নবী ও রাসুল সত্যবাদী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আপনি এই গ্রন্থে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বিষয় আলোচনা করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’ (সুরা- মারিয়াম, আয়াত: ৪১)।

আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইসলামের শিক্ষাসমূহের প্রধান তিনটি শিক্ষা হলো:

সত্যতা, পবিত্রতা ও প্রেম। আল্লাহ তায়ালাকে পেতে হলে তাঁর প্রতি প্রেম থাকতে হবে; তাঁর প্রিয়তম মানুষ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা থাকতে হবে, থাকতে হবে পূর্ণ আনুগত্য; এটাই হলো প্রেম।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি ‘সুব্বুহুন কুদ্দুস’ তথা পরম পবিত্র; তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বদা পবিত্র জীবন যাপন করেছেন। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রেমিক হতে হলে তাকে পবিত্র জীবন যাপন করতে হবে; এটাই হলো পবিত্রতা।

ইমান ও ইসলামের জন্য যেহেতু জীবনের পবিত্রতা শর্ত, তাই বিশ্বাসী মোমিন বান্দাকে সদা সত্যাশ্রয়ী হতে হয়; এটাই হলো সত্যতা। আশেক ও মাশুকের মাঝে আড়াল থাকে না, সুতরাং এখানে মিথ্যার অনুপ্রবেশের সুযোগই থাকে না। মিথ্যার ধূম্রজাল হলো বেড়া বা আড়াল; মিথ্যা যেখানে আসে সেখানে প্রেম থাকে না।

সত্যতা মানুষকে সব কলুষ ও কালিমা থেকে পবিত্র করে, পবিত্রতা মানুষের মাঝে প্রেমভাব জাগ্রত করে; শুদ্ধাচারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, শুদ্ধাচার বা পবিত্রতা মানুষকে সত্যতা বা পরম সত্যে উপনীত করে।

সত্য সাক্ষ্যদানের মাধ্যমেই মোমিনের ইমানের সূচনা হয়; তাই মোমিন ব্যক্তির সারা জীবন এই সত্যকে আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়; এ যে তার ইমান, তার বিশ্বাস। বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা আত্মপ্রবঞ্চনার শামিল।

সত্য ব্যতীত মানুষ মোমিন হয় না; মুসলমান কখনো অসত্য বলে না। ইসলামে সব সময় সত্য বলা ও সত্য সাক্ষ্য দেওয়া ফরজ ইবাদত ও জরুরি কর্তব্য বলে পরিগণিত। এই সত্যতা মনোজগতে, চিন্তাচেতনায়, কল্পনায় ও পরিকল্পনায়। এই সত্যতা মুখের ভাষায়। এই সত্যতা যাবতীয় কর্মকাণ্ডে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। সত্যতা বা সততা প্রতিটি কদমে বা পদক্ষেপে; সত্যতা বা সততা প্রতিটি ছোঁয়া বা স্পর্শে; সত্যতা বা সততা প্রতিটি দৃষ্টি–পলক বা ভ্রু-কুঞ্চনে; সত্যতা বা সততা প্রতিটি ধ্বনিতে, প্রতিটি শব্দে ও প্রতিটি বাক্যে; সত্যতা বা সততা প্রতিটি শ্রবণে ও অনুভবে।

আরও পড়ুননামাজ বিশ্বাসীদের কাছে মিরাজ ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

অসত্য ভাষণ, মিথ্যা বিবৃতি, মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা সাক্ষ্য সমাজকে কলুষিত করে। এর দ্বারা ন্যায়বিচার বা সুশাসনের বিলুপ্তি ঘটে। সৎশাসনের অভাবে সমাজে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, অনাচার বেড়ে গিয়ে অরাজকতার সৃষ্টি হয়।

সত্যের বিপরীত হলো মিথ্যা বা অসত্য। মিথ্যা বলা হারাম ও চরম পাপকার্য। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘মিথ্যা পাপের জননী।’ (বুখারি শরিফ)। ‘সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।’ কারণ, মানুষ যখন হারাম বা পাপকার্য সংঘটন করে, তখন তার ইমান বা বিশ্বাস তার সঙ্গে সক্রিয় থাকে না। তখন তার ইমান বা বিশ্বাস তার থেকে আলাদা হয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকে; যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওই মিথ্যায় বা পাপে লিপ্ত থাকে। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)। পুনরায় তওবা করে অনুতপ্ত হয়ে মিথ্যা ও পাপ বর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করলেই ইমান আবার তার কাছে ফিরে আসে। (ফাতাওয়া আলমগিরি)।

মিথ্যার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা জগতে ভ্রমণ করো ও দেখো, মিথ্যাবাদীদের কী পরিণতি হয়েছিল!’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৭)।

আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রোজ কিয়ামতে হাশরের ময়দানে বিচারের সময় মানুষ নিজের প্রতি সাক্ষ্য দেবে। যারা ইহজগতে মিথ্যা বলে অভ্যস্ত তারা পরকালে মিথ্যা; তারা নিষ্পাপ পবিত্রাত্মা ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলবে। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের জবান বন্ধ করে দিয়ে তাদের পাপ সম্পাদনকারী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য নেবেন। ‘আজ আমি তাদের মুখে সিলমোহর করে দেব; তাদের হস্তসমূহ আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে, যা তারা (মিথ্যা-পাপ) অর্জন করেছিল। (সুরা-ইয়াসিন, আয়াত: ৬৫)। এমতাবস্থায় গত্যন্তর না দেখে কিছু লোক সত্য স্বীকার করবে (যদিও সেদিন তা কোনো কাজে আসবে না)।

একমাত্র সত্য সাক্ষ্য ও ন্যায় বিধানই পারে সমাজে দেশে বা রাষ্ট্রে শাস্তি বজায় রাখতে ও শৃঙ্খলা আনতে। আল্লাহ ন্যায়বান, তিনি ন্যায়বিচার করবেন।

প্রতিটি হারাম কর্ম ও হারাম বস্তু কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ। মিথ্যা হলো পাপের আকর বা মহাপাপ। স্বেচ্ছায় অভ্যাসে প্রকাশ্যে কবিরা গুনাহ করলে এবং তা থেকে খাঁটি তাওবা না করলে তাকে ফাসিক বলা হয়। ফাসিক অর্থ গুনাহগার বা পাপাচারী; ইসলামি আদালতে ফাসিকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সে কালিমা শাহাদাতের সাক্ষ্য ভঙ্গ করেছে। সুতরাং মোমিনের উচিত মৃত্যু পর্যন্ত সারা জীবন কালিমা শাহাদাতের সাক্ষ্যের ওপর দৃঢ় অবিচল থেকে স্বীয় ইমান ও ইসলাম রক্ষা করা।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্‌ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

আরও পড়ুনকবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত য় ল ইসল ম র

এছাড়াও পড়ুন:

শীতল অগ্নি

কয়েক দিনের মধ্যেই সারা শহরে হজরত ইবরাহিমের (আ.) মূর্তি ভাঙার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ল, একপর্যায়ে রাজা নমরুদের কানেও পৌঁছল। সেকালে রাজা-বাদশাহরা নিজেদের কেবল দুনিয়ার হর্তাকর্তাই না, বিভিন্ন কাল্পনিক দেবদেবীর অবতার মনে করত। কেউ বলত আমি অমুক দেবতার সন্তান, আবার কেউ বলত আমিই দেবতা, মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। মূলত ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ও জনতাকে বশে রাখতে তারা এসব মিথ্যা গল্প সাজাত। নমরুদও ছিল এই শ্রেণির রাজা, রাজত্বের পাশাপাশি সে দেবত্বেরও দাবিদার ছিল। (সহজ তাফসীরুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪১১, মাকতাবাতুল আশরাফ।)

ইবরাহিমের (আ.) এক আল্লাহর দাওয়াত তার মধ্যে কাঁপুনি সৃষ্টি করল। সে ভাবল, এই লোক তো আমার রাজত্বের জন্য হুমকি। সে নির্দেশ দিল, এখনই তাকে পাকড়াও করে রাজদরবারে নিয়ে আসো। হজরত ইবরাহিম (আ.) এটাকে দাওয়াতি কাজের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ধরে নিলেন।

আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজদরবারে ইবরাহিম (আ.) ও নমরুদ মুখোমুখি। উপস্থিত সভাসদ ও সাধারণ মানুষ। নমরুদ জিজ্ঞেস করল, তুমি যে খোদার কথা প্রচার করো—তার সম্পর্কে বলো। ইবরাহিম (আ.) বললেন, আমার রব তিনিই—যিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। নমরুদ বলল, আমিও তো জীবন ও মৃত্যু দিই! এই বলে একজন নিরপরাধ লোককে হত্যা করল, আরেকজন দাগি আসামিকে মুক্ত করে দিল। ইবরাহিম (আ.) বুঝতে পারলেন নমরুদ ভাষার মারপ্যাঁচ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি এবার বললেন, ‘আমার রব তিনি—যিনি পূবদিক থেকে সূর্য উদিত করেন, আপনি পারলে পশ্চিমদিক থেকে সূর্য উদিত করে দেখান তো!’ এ কথা শুনে নমরুদ লা-জওয়াব হয়ে গেল। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৮)

ইবরাহিম (আ.) ও নমরুদের কথোপকথন থেকে আমরা কথা বলার চারটি সূত্র বের করতে পারি:

১. এমন ভাষায় কথা বলতে হবে, যেভাবে কথা বললে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।

২. কথায় কোনো ফাঁকফোকড় থাকবে না। কারণ মন্দ মানুষ সব সময় কথার ফাঁকফোকড় কাজে লাগিয়ে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

৩. কথা হবে সারগর্ভ। আমাদের কথা ‘হালকা’ হলে চলবে না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষেরা হালকা কথা বলেন না।

৪. অতিরিক্ত কথা না বলে ‘সুনির্দিষ্ট’ কথা বলতে হবে।

আরও পড়ুনরানি বিলকিস ও হজরত সোলায়মানের (আ.) ঘটনা১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যাই হোক, সত্যকে স্বীকার করার বদলে নমরুদ ধরে নিল তাকে অপমান করা হয়েছে। রাজা থেকে প্রজা সবাই একজোট হয়ে গেল—পূর্বপুরুষের ধর্মের বিরোধিতা ও দেবতাকে অসম্মানের দায়ে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। পোড়ানোর দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভীড় করল। চারদিকে হইহই রব পড়ে গেল, লোকজন প্রবল উৎসাহে লাকড়ি জোগাড় করতে লাগল। চারদিকে দেয়াল বানিয়ে অগ্নিকুণ্ড বানানো হলো। কিন্তু হজরত ইবরাহিমের (আ.) মনে কোনো ভয় ছিল না, তিনি ছিলেন একদম শান্ত। কারণ তিনি জানেন আল্লাহ-তাআলাই একমাত্র সহায়ক, তিনি যদি হেফাজত করতে চান তবে কারুর সাধ্য নাই তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করার।

নমরুদ একটি চড়কায় করে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) সেই আগুনে নিক্ষেপ করল। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা আগুনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগুন, তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬৯)

অমনি আগুন ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমি অগ্নিকুণ্ডে অবস্থাকালীন যে আরাম-আয়েশ পেয়েছিলাম, জীবনে আর কোনো দিনও তা পাইনি। ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে ৭দিন অবস্থান করেন, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেন ৪০দিন। যতদিনই হোক, এ ছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখান।

কয়েকদিন বাদে নমরুদ আগুনে উঁকি মেরে ইবরাহিমকে (আ.) নিরুদ্বিগ্ন দেখতে পেয়ে সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। সে ইবরাহিমকে (আ.) আগুন থেকে বের হয়ে আসতে বলে। তিনি বের হয়ে এলে নমরুদ বলল, ইবরাহিম, তোমার খোদা তো অনেক শক্তিশালী, আমি তার নামে চার হাজার গরু কোরবানি করব। ইবরাহিম (আ.) বললেন, কুফরি অবস্থায় আপনার কোরবানি কবুল হবে না, আপনাকে প্রথমে ঈমান গ্রহণ করতে হবে। নমরুদ বলল, আমি তো আমার রাজত্ব ছাড়তে পারব না। এরপর সে সত্যি সত্যিই ৪,০০০ গরু জবাই করেছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, ১/৩৪৩-৩৪৪, ইফাবা)

নমরুদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট বিবরণ নেই। অনেকে বলেন, তার নাকের ছিদ্র দিয়ে একটি মশা ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কে উৎপাত করতে শুরু করে। সে হাতুড়ি দিয়ে ক্রমাগত নিজের মাথায় আঘাত করত। এভাবেই তার মৃত্যু হয়। (তাফসীরে তাবারী, ৫/৫৫, ইফাবা)

আরও পড়ুনবিপদে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পাঠের মাহাত্ম্য০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শীতল অগ্নি