সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রেস পরিচালিত ছয় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড সর্বশেষ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রায় ৮৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট ৬৫ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল বলে তথ্য দিয়েছিল সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিটি।
গতকাল রেস পরিচালিত ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, প্রথম জনতা, এক্সিম প্রথম, ট্রাস্ট প্রথম, আইএফআইসি প্রথম এবং ইবিএল প্রথম– এ ছয়টি ফান্ডের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। মেয়াদি ১০টিসহ রেস পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড ১২টি।
নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকার পাশাপাশি তদন্তে সহায়তা না করার দায়ে গত বছরের জুনে ফান্ডগুলো পরিচালনায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, গত রোববার প্রত্যাহার করেছে সংস্থাটি। এর পর গতকাল বুধবার ষান্মাষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের ইউনিটপ্রতি লোকসান (ইপিইউ) হয়েছে ৪২ পয়সা। প্রথম প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি মুনাফা ছিল ২৭ পয়সা। প্রথম জনতার ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকে ৩৩ পয়সা মুনাফার বিপরীতে লোকসান হয়েছে ৪৯ পয়সা। এক্সিম প্রথম ফান্ডের ২৬ পয়সা মুনাফার বিপরীতে লোকসান ৪৬ পয়সা। ট্রাস্ট প্রথমের ৩৮ পয়সা মুনাফার বিপরীতে লোকসান ৫৯ পয়সা, আইএফআইসি প্রথমের ৬৩ পয়সা মুনাফার বিপরীতে লোকসান ৫২ পয়সা এবং ইবিএল প্রথমের ৫৪ পয়সা মুনাফার বিপরীতে ৫৬ পয়সা হারে লোকসান হয়েছে।
রেস পরিচালিত এসব ফান্ডের মোট পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। লোকসানের কারণে গত বৃহস্পতিবারের বাজারমূল্যের হিসাবে ফান্ডগুলো সম্পদমূল্য
কমে সাকল্যে ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকায় নেমেছে। গতকালের বাজারদরে এসব ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল মাত্র ৬০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইবিএল প্রথম ফান্ডটি সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। বাকিগুলো ৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৪০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ম ন ফ র ব পর ত র স পর চ ল ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি টাকা আত্মসাৎ: সালমান-শিবলীসহ ৩০ জনের নামে দুদকের মামলা
সরকারের ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলামসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান এবং পরিচালক তিলাত শাহরিনকেও আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ করা হয়েছে, এসব অর্থ বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে সেখান থেকে নগদে ও বিভিন্ন লেনদেনের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ এবং আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন আসামিরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুদকের সহকারী পরিচালক (বিশেষ তদন্ত-২) সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে ঢাকায় সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেছেন। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭৩/১০৯সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৫ এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, (১) মো. মশিউজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড; (২) তিলাত শাহরিন, পরিচালক, শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড; (৩) সালমান এফ রাহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৪) আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৫) মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৬) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৭) রাবেয়া জামালী, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (০৮) এ আর এম নাজমুস সাকিব, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৯) কামরুন নাহার আহমেদ, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১০) গোলাম মোস্তফা, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১১) মো. জাফর ইকবাল, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১২) শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি); (১৩) রুমানা ইসলাম, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৪) মিজানুর রহমা, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৫) শেখ শামসুদ্দিন আহমে, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৬) মো: আবদুল হালিম, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৭) সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১৮) শাহ মো: মঈনউদ্দিন, হেড অব লোন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১৯) মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল), আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২০) গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ বিজনেস অফিসার (কর্পোরেট), আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২১) মো: নুরুল হাসনাত, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অব আইটি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২২) মনিতুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৩) মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ট্রেজারি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৪) নাজিমুল হক, সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক, ধানমন্ডি শাখা ও এফভিপি, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৫) হোসাইন শাহ আলী, সাবেক ব্যবস্থাপক, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৬) সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, রিলেশনশিপস ম্যানেজার, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৭) নিমাই কুমার সাহা, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; (২৮) মো. মিজানুর রহমান, কোম্পানি সেক্রেটারি, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; (২৯) আয়েশা সিদ্দিকা, এসপিও, শাহজালাল এভিনিউ শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৩০) সিলভিয়া চৌধুরী, এফএভিপি, গুলশান শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করেই ও প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তি সরেজমিনে পরিদর্শন বা মূল্য যাচাই না করেই অস্বাভাবিক অতি মূল্যায়ন (৮৭ কোটি টাকার জমিকে ১০২০ কোটি টাকায় মূল্যায়ন) করে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মাসখানেক আগে রেজিস্ট্রি করা কথিত কোম্পানির তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনপূর্বক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের চলতি হিসাবে জমা করেন। এর পর সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করে অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা (সরকারি অর্থ) বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে ব্যাংকিং নিয়মাচারের তোয়াক্কা না করে নগদে ও বিভিন্ন রকম সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭৩/১০৯সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৫ এর ৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় দুদকের অনুমোদনক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক