জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা না হলেও রাজশাহীর সংসদীয় আসনগুলোতে ভোটের হাওয়া বিদ্যমান। এদিক থেকে এগিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাই। তবে বছরের পর বছর সম্মেলন না হওয়ায় দলটির জেলা, মহানগর, ওয়ার্ড, থানাসহ ইউনিটগুলোতে আসেনি নতুন নেতৃত্ব।

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল তিন মাসের জন্যে। অথচ সেই কমিটির বয়স এখন ছয় বছর। একইভাবে সালে মহানগর বিএনপির কমিটিও তিন মাসের জন্য গঠন করে তার বয়স চার বছর পেরিয়েছে। প্রতিটি ইউনিটেই রয়েছে একাধিক গ্রুপ। প্রভাব বাড়াতে গিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ওপর হচ্ছে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সংগঠনে  শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিটি ইউনিটেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাবেক নেতারা।

২০২১ সালের ১০ মার্চ তিন মাসের জন্য মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়। মহানগরে এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুন অর রশীদকে করা হয় সদস্য সচিব। দীর্ঘদিন বিএনপির প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান মিনু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলন নগর বিএনপির নেতৃত্বে থাকলেও তাদের অনুসারীদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয় সিনিয়র নেতাদের বিপরীত মেরুর লোকদের। নতুন এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার এক দিন পরই শহরের ৩৭টি ওয়ার্ড ও সাতটি থানা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে শুরু হয় তৃণমূলের সঙ্গে মহানগর কমিটির দূরত্ব ও বিরোধ। এ কারণে সম্মেলনের দিকে আর অগ্রসর হতে পারেনি কমিটি। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি হলেও এর এক বছর পর ২০২২ সালের ৫ মার্চ নতুন করে ৬১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন পায়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিপরীত বলয়ের নেতৃত্ব দায়িত্ব পাওয়ার পর দীর্ঘদিন মিজানুর রহমান মিনু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলনকে নতুন আহ্বায়ক কমিটির কোনো কর্মসূচিতে ঢাকা হতো না। কিংবা তারাও যেতেন না। সেই বিরোধ বা দূরত্ব এখনও মেটেনি।

নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণবিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘মহানগরে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন শহরের ৩৭টি ওয়ার্ড, সাতটি থানা কমিটি ভেঙে দেয়। এ কারণে তৃণমূল মুখ ফিরিয়ে নেয়। তৃণমূলের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে এই কমিটি ৩৭টি ওয়ার্ড এবং সাতটি থানা ইউনিটের কোনোটিতে সম্মেলন করতে পারেনি। আবার আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামতে পারেননি। তবে গত ৫ আগস্টের পর নতুন মুখের হিড়িক পড়েছে। তাদের দিয়ে ঘরে বসে আহ্বায়ক কমিটি করা হচ্ছে। এতে কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যাচাই করে ত্যাগীদের সামনে রেখে প্রতিটি কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘প্রায় সব ওয়ার্ডে নতুন কমিটি হয়ে গেছে। এখন থানা কমিটি করার জন্য সম্মেলনের চেষ্টা করছি। থানার সম্মেলন শেষ করে মহানগর সম্মেলন দিয়ে দেব।’

জেলার তিন মাসের কমিটি এখন ছয় বছরে

২০১৯ সালের মে মাসে রাজশাহী জেলা বিএনপিতে আবু সাঈদ চাঁদকে আহ্বায়ক ও বিশ্বনাথ সরকারকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এর পর থেকে আবু সাঈদ চাঁদের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে সারাদেশে শতাধিক মামলা করা হয়। মাসের পর মাস কারাগারে কাটান তিনি। সরকারের দমন-পীড়নের কারণে জেলার ৯টি উপজেলা ও ১৪টি পৌরসভার সম্মেলন করতে অনেকটাই পিছিয়ে যায় জেলা বিএনপি। ৯টি উপজেলার মধ্যে চারঘাট, গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপজেলা ছাড়া কোনোটির সম্মেলন করা যায়নি। এ ছাড়া পৌরসভার মধ্যে গোদাগাড়ী, কেশরহাট, কাঁকনহাট, নওহাটা, পুঠিয়া, তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ ছাড়া আর কোথাও সম্মেলন হয়নি।

জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, আহ্বায়ক কমিটি ২৩টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৮টিতে কমিটি দিতে পেরেছে। সব ইউনিটের সম্মেলন হয়ে গেলে তারা আর দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না বলে নতুন কমিটি দিচ্ছেন না।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কোনোভাবেই আহ্বায়ক কমিটি থাকতে পারে না। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের দাবি করছি।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, জেলার ৫-৬টি ইউনিট বাদে সবক’টির সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলোর সম্মেলন শিগগির হবে। দিন-তারিখ এখন জানাতে না পারলেও আশা করছি খুব দ্রুত জেলার সম্মেলন দিতে পারব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ নগর ব এনপ র র জন য কম ট র ইউন ট সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে অপহৃত শিক্ষককে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

অপহরণের শিকার এক মাদরাসা শিক্ষককে রাজশাহী থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে মো. রিফাতুল ইসলাম (২৫) নামে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে। 

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-৫ এ তথ্য জানায়।

আরো পড়ুন:

শরিয়তপুরে ককটেল বিস্ফোরণ, প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ঈদে র‌্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রবিউল ইসলাম (২৭), রুবেল চৌধুরী (২৭), নাজমুল হোসেন (৪২) ও নাহিদ মিয়াজ (৩৫)। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। 

র‌্যাব জানায়, গত ৫ এপ্রিল রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে কর্মস্থল হাজারিবাগে যাচ্ছিলেন রিফাতুল। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গত ৭ এপ্রিল রিফাতুলের পরিবারকে ফোন করে অপহরণকারীরা এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রিফাতুলের পরিবার বিকাশের মাধ্যমে অপহরণকারীদের দফায় দফায় টাকা পাঠান। সর্বমোট দেড় লাখ টাকার বেশি পরিশোধ করেন তারা। এরপরও রিফাতুলকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার র‌্যাব-৪-এ অভিযোগ করে। গোয়েন্দা তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৫-এর যৌথ অভিযানে রিফাতুলকে উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ