দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতোমধ্যে নতুন বাঁক নিয়েছে, নির্দ্বিধায় বলা যায়। একদিকে নির্বাচন ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মূল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মেরূকরণ স্পষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের অনুসারী ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এমনকি ‘নিরপেক্ষ’ অন্তর্বর্তী সরকারও মূল অংশীজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে থাকলে তিনি শক্তি পান। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাতে কান না দিয়ে বরং অভিযোগ করছে– সরকার বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের দিকে হেলে পড়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের মুখ ছিল শিক্ষার্থীরা– সন্দেহ নেই। তবে এর মূল শক্তি ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে নানাজন এ নিয়ে লিখেছেন বা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে পরিষ্কার উঠে এসেছে, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কে কীভাবে ওই আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলনে হতাহতদের মধ্যে তাদের নেতাকর্মীর সংখ্যাও সেটা প্রমাণ করে। আন্দোলন পরিচালনাকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও স্বীকার করেছেন, এটি ছিল মূলত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি ছাতা সংগঠন, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছিল। তাদের ভাষায়, অভ্যুত্থানের পর এর দলীয় সদস্যরা নিজ নিজ সংগঠনে ফেরত গেছেন। যারা রয়ে গেছেন তাদের নিয়েই এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও শাখা কমিটিগুলো গঠিত হচ্ছে।

বোঝাই যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলেও এদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বতন্ত্র অভিলাষ ও পরিকল্পনা ছিল। অভিন্ন শত্রুর অনুপস্থিতিতে এরা সেগুলো বাস্তবায়নে সক্রিয় হবে– এটিই স্বাভাবিক। এ কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও এর সময়সীমা, এমনকি প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

বিএনপি যেখানে বলছে, কেবল নির্বাচন সংক্রান্ত ‘জরুরি’ সংস্কারগুলো করেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে; সেখানে জামায়াত নির্বাচনের আগে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। জামায়াত এও বলছে, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য নেতাদের বিচারও নির্বাচনের আগে শেষ করতে হবে। এসব দাবি স্পষ্টত বিএনপির দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই রাষ্ট্র সংস্কার যেমন সময়সাপেক্ষ বিষয়, তেমনি হত্যাকাণ্ডের বিচারও– অন্তত প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে দীর্ঘ সময় দাবি করে। 

আরেক দিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ বলে পরিচিত ছাত্রনেতারা নিজস্ব দল গঠনে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তারা অন্য রাজনৈতিক দলের মতো নিজস্ব ছাত্র সংগঠন গঠনেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। উপরন্তু, খোদ প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, দল গঠনে তিনিই তাদের ভরসা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর সরকারের তিন উপদেষ্টাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ওই দল গঠনে জড়িয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়; এই ছাত্রনেতারা গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব থেকে বিএনপিকে বঞ্চিত করারও একটি প্রচ্ছন্ন চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি তারা ও জামায়াত সমস্বরে দাবি তুলেছেন, নির্বাচন যদি দ্রুত হতেই হয়, তা হতে হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, বিএনপি যার ঘোর বিরোধী। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি হলো সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার সঙ্গে ছাত্রনেতাদের প্রস্তাবিত দলকে ভিত্তি গাড়তে সহযোগিতার কৌশল।

মজার বিষয়, ছাত্রনেতাদের মধ্যে নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে যে অন্তঃবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ছাত্রশিবিরের নামও জড়িয়েছে। এটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত, প্রকাশ্যে কাজ করার পাশাপাশি জামায়াত নানা দলেও গোপনে সক্রিয় থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এ ধারণা বিএনপির মধ্যেও একভাবে চাউর হয়েছে– জামায়াতের ইন্ধনে ছাত্রনেতারা বিএনপিকে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন; যার মধ্যে সরকারেরও হাত থাকা বিচিত্র কিছু নয়। 

স্মরণ করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন হঠাৎ রাষ্ট্রপতির অপসারণের জন্য সরকারকে চাপ দেন, তখন বিএনপি দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। তাদের যুক্তি ছিল, নির্বাচন দেরি করার কৌশল ছাড়া এটা কিছু নয়। এর পর ডিসেম্বরে ছাত্রদের জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলার কর্মসূচিও বিএনপির বিরোধিতার মুখে পণ্ড হয়ে যায়। জামায়াত নেতারা ওই দুই ইস্যুতে তাদের চিরাচরিত স্বভাব অনুসারে মাঝামাঝি অবস্থান নিলেও ইদানীং নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে ছাত্রনেতাদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন। 

এতদিন নানা ইস্যুতে আপাতনিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও সরকার যেন তা ধরে রাখতে পারছে না। বিশেষত সর্বশেষ জাতীয় ঐক্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটি নানা ভাবনা উস্কে দেয়। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো কে কতটুকু সংস্কার চায়, তা তিনি ওয়েবসাইটে দিয়ে জাতির সামনে সবার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। কথাটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকি আছে এবং এর প্রধান লক্ষ্যবস্তু যে বিএনপি, তা পর্যবেক্ষকদের মতো বিএনপি নেতাদেরও সম্ভবত বুঝতে কষ্ট হয়নি। সম্ভবত এ কারণেই এ প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার যশোরের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি’ (সমকাল)। তিনি এমনও বলেছেন, দল করতে চাইলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।

বলা দরকার, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বাম রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিরাও ছিলেন। এমন মতও আছে, তাদেরই কারণে আন্দোলনে ‘সেক্যুলার ফ্লেভার’ যুক্ত হয়, যা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মাঝে আন্দোলনটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। এটিও বলা দরকার, তাদের বেশির ভাগ নিজস্ব অবস্থান থেকে লড়াই করেছেন; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা আন্দোলনের মূল কাঠামোতে জড়াননি। সম্ভবত সে কারণে সরকারে তাদের প্রভাব তেমন নেই। তবে মাঠে বিশেষ করে নির্বাচনসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত বিষয়ে যেভাবে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ও অন্যান্য বামশক্তি ধারাবাহিক বক্তব্য ও কর্মসূচি দিয়ে চলেছে, তার একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। অন্তত সরকারের ওপর নির্বাচন বিষয়ে চাপ তৈরিতে তা ভূমিকা রাখছে।

সব কিছু মিলিয়ে যদি বলা হয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্লাইমেক্স বা চরমক্ষণের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে, তাহলে হয়তো ভুল হবে না। বিশেষত মঙ্গলবার খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটল, তাতেও এ ধারণা পোক্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে যে মেরূকরণ ঘটেছে, মূলত তারই প্রতিফলন কুয়েটের ঘটনা। 

আমার ধারণা, জাতীয় নির্বাচনটি এ বছরই হবে কিনা– মার্চ-এপ্রিলেই তা পরিষ্কার হবে। যদিও বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে বিএনপি তার বর্তমান অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবে, তার ওপর। যদি অন্যথা হয়, সেটিও নতুন রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাবে, যা দুর্ভাগ্যজনক হলেও চলমান অরাজকতাকে দীর্ঘমেয়াদি করবে।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল র জন ত গণঅভ য ত থ ন র জ ল ই আগস ট ক পর স থ ত ন উপদ ষ ট অবস থ ন সরক র র বল ছ ন ব এনপ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস

সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে জাতি পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তবে বারবার সেই স্বাধীকার আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে হাতছাড়া। কখনও স্বৈরাচার, কখনও ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে জাতির ওপর। 

তবে জাতি বারবার লড়াই করেছে, যার সবশেষ উদাহরণ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। আর প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে একাত্তর, আর বারবার ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ডাক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৫ তম দিবস পালনকালে আবারও সেই আকাঙ্ক্ষার কথাই উঠে এলো রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকসহ আপামর মানুষের কণ্ঠে।

বুধবার (২৬ মার্চ) দিবসের প্রথম প্রহর সকাল ৫টা ৪৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ৬টা ৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি। 

এরপর সকাল ৬টা ৭ মিনিটের দিকে স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ৬টা ১৫ মিনিটে তিনি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পরেই স্মৃতিসৌধ এলাকা সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর ফুলের ডালা নিয়ে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।

শিশু থেকে প্রবীণ সব বয়সী মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষও। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদি।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা।

একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭১ ও ২৪ এর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা সুষ্ঠু করা। এজন্য সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “৭১ এ দেশকে জন্ম দিয়েছে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। আমরা মনে করি, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে।”

একই ভাষ্য আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর। তিনি বলেন, “অনেকে বলেন যে একাত্তর এবং চব্বিশ কি এক? না, অবশ্যই এক না। একাত্তর ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম, আর চব্বিশ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার অর্জনকে পুনঃস্থাপন করার সংগ্রাম।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের সাতচল্লিশের আজাদির লড়াই—এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।’’

আর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বললেন, ‘‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্ব সংগঠিত হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্বের লড়াই চলমান।’’

দেশে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে চলমান শঙ্কা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মন্তব্য, “এমন সময় যদি কখনও আসে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন পড়বে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজন পড়ব/, তখন কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে যাব। এখানে কোনো ভুল নাই। এখন দলীয় আদর্শিক স্বার্থে হয়তো আলাদা কথা বলছি, হতে পারে। কিন্তু যখন প্রয়োজন হবে, তখন বাংলাদেশের জনগণ এক হয়ে যাবে।”

একই কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই।”

এদিকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের অভিযোগ, “গত সাড়ে ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে একপেশে করা হয়েছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেইরকম একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

অন্যদিকে সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিবি ও গণসংহতি।

নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলছি, সংস্কারের অনেকগুলো জায়গা আছে। কিছু নির্বাচনের আগেই নির্বাহী আদেশে সংস্কার করা সম্ভব। আবার অনেকগুলো সংস্কারের প্রশ্নে যেগুলো মৌলিক কাঠামোগত, এগুলো আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের করতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা আসলে কঠিন।’’

আর দ্রুত নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “ভালো সংস্কার করে নির্বাচন ডিসেম্বরে কেনো তার আগেই বাংলাদেশে সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ বড় ইসলামীক সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেখা যায়নি।

স্বাধীনতা দিবস পালনকালে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এদিন লাল পতাকা হাতে একদল লোক আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করেছেন। এ সময় উপস্থিত জনতা তাদের ধাওয়া দেয় এবং কয়েক জনকে মারধর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির জানান, আনুমানিক সকাল ১১টার সময় ৫/৬ জন জাতীয় স্মৃতি সৌধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। এমন অভিযোগে তাদের আশুলিয়া থানা পুলিশ আটক করে।

গতবছরের তুলনায় এবছর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত মানুষের ঢল থাকলেও পরে উপস্থিতি কমতে থাকে। বিকেল ৫টার দিকে স্মৃতিসৌধের ফটক বন্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। দিনভর এ আনুষ্ঠানিকতায় নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত ছিল প্রায় ৪ হাজার পুলিশ সদস্য।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছাত্র-জনতার ভোটের অভ্যুত্থানে জুলুমবাজের দল পালিয়ে যাবে’
  • নির্বাচনের পরে সংস্কার হবে না: নাহিদ ইসলাম
  • ফ্যাসিস্ট সরকার আর এক বছর থাকলে আমাকে ঝুলিয়ে দিত: বাবর
  • ‘বৈষম্য দূরীকরণে আর কাউকে যেন রক্ত দিতে না হয়’
  • গণঅভ্যুত্থান বৃথা হতে দেওয়া যাবে না: গিয়াস উদ্দিন
  • ‘অভ্যুন্থানে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব’
  • চাঁদাবাজি আর বরদাশত করা হবে না: আসিফ মাহমুদ
  • শহীদ পরিবারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঈদ উপহার বিতরণ
  • বৈষম্যমুক্ত মানবিক দেশ গড়ার প্রত্যয়
  • একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস