Samakal:
2025-03-24@08:10:52 GMT

‘এখন আর ক্লাস মিস হবে না’

Published: 19th, February 2025 GMT

‘এখন আর ক্লাস মিস হবে না’

ঈশ্বরদীতে ৪০ শিক্ষার্থী উপহার হিসেবে পেল নতুন বাইসাইকেল। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাদের এ উপহার দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের হাতে সাইকেল তুলে দেন এমটিবি ফাউন্ডেশনের সিইও সামিয়া চৌধুরী। 

নতুন সাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী আরিশা নূর নাবিলা জানায়, বিদ্যালয় থেকে তাদের বাড়ি সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে। আসা-যাওয়ার পথে ঠিকমতো গাড়ি পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারত না। সাইকেল পাওয়ায় এখন আর ক্লাস মিস হবে না। 

উচ্ছ্বসিত আরেক শিক্ষার্থী সামিহা জাহান জানায়, তার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। সংসারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। সাইকেল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই তাঁর। সাইকেল পেয়ে খুব ভালো লাগছে। সাইকেল পেয়ে তার খুব আনন্দ হচ্ছে। এই প্রাপ্তির প্রতিদান সে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে দেবে বলে জানায়।

প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘এমন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে যারা অনেক দূর থেকে স্কুলে আসে হেঁটে। সচ্ছলতা না থাকায় রিকশায় আসতে পারে না। দূরের পথ হেঁটে স্কুল করায় অসুস্থ হয়ে পড়ত। ক্লাস মিস হতো অনেকের; যার প্রভাব পড়ত পরীক্ষার ফলাফলে। তাদের অনেকেই সাইকেল পেয়েছে। এতে পড়ালেখা ও স্কুলে আসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। পরীক্ষার ফলও ভালো হবে।’

এমটিবি ফাউন্ডেশনের সিইও সামিরা চৌধুরী বলেন, দূরত্ব ও আর্থিক অনটনের কারণে গ্রামের মেয়েশিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। তারা যাতে পড়ালেখায় পিছিয়ে না থাকে সেজন্য এ উদ্যোগ। খুঁজে খুঁজে এ ধরনের শিশুদের সাইকেল উপহার দিয়ে স্কুলে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।

‘স্কুলে যেতে দূরত্ব যেন বাধা না হয়’–স্লোগানে এ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান। 

উচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ঈশ্বরদী শাখা ব্যবস্থাপক জামিলুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম, আজীবন দাতা সদস্য তাসলিম আরিফ, সাংবাদিক সেলিম সরদার। উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক রাজন আলী, উম্মে হুমায়রা, শিক্ষার্থী সামিহা জাহান, আরিশা নূর নাবিলা প্রমুখ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থায়ন বন্ধ, যক্ষ্মার ঝুঁকি বেড়েছে 

দেশে যক্ষ্মার বোঝা অনেক বড়। যক্ষ্মারোগীর ১৭ শতাংশ এখনো শনাক্ত করতে পারে না স্বাস্থ্য বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজে প্রভাব পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি সহায়তা ছাড়াই যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে সাতটি দেশে একই সঙ্গে সাধারণ যক্ষ্মা ও ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, বাংলাদেশ সেই তালিকায় আছে। অন্য দেশগুলো হচ্ছে অ্যাঙ্গোলা, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি ও ভিয়েতনাম। দীর্ঘদিন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রতিবছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। গতকাল রোববার প্রথম আলোকে দেওয়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, গত বছর তারা সারা দেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পেরেছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মারোগী শনাক্তের বাইরে। তাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তাঁরা যক্ষ্মা ছড়াচ্ছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো।  অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা, বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব 

এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া।’ দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পক্ষ থেকে আজ সকালে মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ব্র্যাক সেন্টার ইনে দুটি পৃথক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির কাজ বন্ধ

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, প্রায় আড়াই দশক ধরে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) সরকারি কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ায় হঠাৎ করেই এর প্রভাব পড়েছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। আইসিডিডিআরবি ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ করেছে এবং প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা ও কর্মী ছাঁটাই করেছে।

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটিতে যক্ষ্মা শনাক্তে সরকারকে সহায়তা করত। তারা শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তেও কাজ করত। এ ছাড়া শ্যামলীর যক্ষ্মা হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করত। আইসিডিডিআরবি প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে মেডিকেল অফিসার দিয়েছিল। এখন এসব কাজ বন্ধ। 

একদিকে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৭ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে শনাক্তের কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। এসব করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত না হলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়বে।’

১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে যেকোনো নাগরিকের জন্য যক্ষ্মা শনাক্তের পরীক্ষা, ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের যক্ষ্মা কর্মসূচি। 

গতকাল রোববার জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) জুবাইদা নাসরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তামূলক কাজ বন্ধ হওয়ার ফলে কিছু সমস্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। আমরা পরিস্থিতি দ্রুত সামলে নিয়েছি। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগিয়েছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ