নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ আট আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করতে নাইকো মামলায় জড়ানো হয়েছে।

খালাস পাওয়া বাকি সাতজন হলেন– খালেদা জিয়ার সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এর মধ্যে কাশেম শরীফ, মীর মইনুল হক ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী পলাতক।

রায়ের আগে বিচারক বলেন, ‘প্রশ্ন হতে পারে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে। ডিএলআর-এর ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত এ বিষয়ে উল্লেখ আছে, কোনো আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। রায়ও দেওয়া যায়।’

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মামলা বাতিল করা হয়েছিল। তবু এ মামলার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়েছে। আসামি ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে নির্যাতন করে জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। সেখানেও তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার কথা বলেছেন।’ বিচারক বলেন, ‘সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪-কে ট্রু (সত্য) বলার সুযোগ নাই। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করার জন্য এ ১৬৪ নেওয়া হয়েছে।’

রায়কে ঐতিহাসিক ও দৃষ্টান্তমূলক বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সরকার খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে এ মামলা করেছিল। সেখানে শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে নাইকো মামলা থেকে কোয়াশম্যান্ট (বাতিল) নেন। কিন্তু থেকে যায় খালেদা জিয়ার মামলাটি। মূলত রাজনৈতিকভাবে তাঁর সম্মানহানি করতে নাইকো মামলাকে ব্যবহার করে ক্ষমতাচ্যুত সরকার।’

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ দিন রাখা হয়। এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য হয়েছে।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় মামলায়।

খালেদার সঙ্গে অবিচার হয়েছে: আপিল বিভাগে ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন

রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন ও বিচার বিভাগের সীমাহীন অন্যায়-অবিচারের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবিচারের শিকার হয়েছেন– এমন দাবি করে তাঁকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দিতে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চে গতকাল জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন এক মামলার শুনানিতে মৌখিকভাবে এই আবেদন করেন। 

পরে এ প্রসঙ্গে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছি, এ দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে নষ্ট হয়েছে এবং ফ্যাসিজম যেভাবে ডেভেলপ করেছে, তার অধিকাংশের দায় বিচার বিভাগের। একজন নাগরিক হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। তাঁকে সাজা দেওয়া হয় এবং সাজা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সে মামলাটি যখন আপিল বিভাগে আসে তখন দেখা গেল, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে একটা প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইনজ ব অব চ র

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি তিন দিনের রিমান্ডে

পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে কলেজশিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শীরিন এ আদেশ দেন।

এর আগে ২২ মার্চ গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুমকী থানার উপপরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম। আজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মজিবুর রহমান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. রুহুল আমিন সিকদারসহ আটজন আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিদের জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম হোসেন।

শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. রুহুল আমিন সিকদার রিমান্ডের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁকে দুমকী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তাঁর কলেজশিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তাঁর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তাঁর মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের ১৭ ও ১৯ বছর বয়সী দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। যদিও পুলিশ বলছে, দুজনই কিশোর। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০টির বেশি ভিসা বাতিল, অধিকাংশই ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের: মার্কো রুবিও
  • সমালোচনার মুখে আইসিটির প্রসিকিউটর সিলভিয়ার নিয়োগ বাতিল
  • প্রতারণার মামলায় ইথার ফারিয়েলের জামিন আবেদন নাকচ
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও চার নতুন প্রসিকিউটর
  • পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি তিন দিনের রিমান্ডে
  • ফিলিস্তিনিদের সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্রে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার, ভিসা বাতিল
  • ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় নিন্দা নাগরিক সমাজের
  • স্বাধীনতা দিবসে বিজয়স্তম্ভে আইনজীবী সমিতির শ্রদ্ধা নিবেদন 
  • পাঁচ বালুমহাল ইজারা না দিতে ১৩ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ
  • মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি পেলেন রেকর্ড ক্ষতিপূরণ