খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে বেধড়ক পিটুনি খান কিশোর ইব্রাহিম। তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন সেনাসদস্যরা। সেই কিশোরকেই আটক করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রিজন সেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ইব্রাহিম প্রিজন সেলেই ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরাফাত নামে আরেক কিশোরকেও সেই সেলে দেখা যায়। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় আহত কিশোরকে প্রিজন সেলে আটকে রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। 

গত মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে এক কিশোরকে মারধর করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক শিক্ষার্থী কিশোরকে পেটাচ্ছেন। এক সেনাসদস্য রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সে অবস্থায়ও তাঁকে আঘাত করা হচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আক্রান্ত কিশোর কুয়েট ক্যাম্পাসের পাশের যোগীপোল ইউনিয়নের জাব্দিপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর বাবা আবুল বাশার বাদশা ভাঙাড়ির দোকানে কাজ করেন, মা নাজমা বেগম কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। যোগীপোল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশেই তাদের বাড়ি। ইব্রাহিম নিজেও ঢাকায় চাকরি করেন। গত রোববার রাতে ছুটিতে খুলনার বাড়িতে আসেন।

প্রতিবেশীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ইব্রাহিম বাড়িতে ছিল। বিকেলে মারামারির খবর পেয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সেও দেখতে যায়। 

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে গিয়ে জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে আটক করে প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ইব্রাহিমের বয়স ১৯ এবং আরাফাতের বয়স দেখানো হয়েছে ১২ বছর। ইব্রাহিমের বাবা বাদশা বলেন, ইব্রাহিমের বয়স ১৬। 

ইব্রাহিমের মা নাজমা বেগম বলেন, দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ইব্রাহিম ছোট। ঢাকায় কাজে গিয়ে ছেলের মন টিকছিল না। তাই রোববার রাতে খুলনায় এসেছে। মারামারির খবর শুনে সব জায়গায় দৌড়েছি, কোনো খবর পাইনি। পরে একজন ফোন করে বলেছে, ওকে পুলিশে নিয়ে গেছে। 

মায়ের মাধ্যমে ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় এক পাশে ছাত্র, অন্য পাশে বিএনপির লোকজন ছিল। মাঝে মন্টুর ক্লিনিকের সামনে তারা কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছাত্রদের ধাওয়ায় অন্যরা পালিয়ে গেলে তারা দৌড়ে ক্লিনিকের ভেতর ঢুকে আশ্রয় নেন। সেখানে অন্য গ্রুপেরও কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে ক্লিনিকে ঢুকে সবাইকে কমবেশি পিটিয়েছে ছাত্ররা। 

প্রিজন সেলে আটক অন্যরাও ইব্রাহিমের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। তারা জানান, উৎসাহী হয়ে সংঘর্ষ দেখতে এসেছিল বেশ কয়েকজন কিশোর। বাকিরা পালিয়ে গেলেও কিশোর ইব্রাহিম পাশের একটি ক্লিনিকে আটকা পড়েন। আরাফাত আটকা পড়ে আরেকটি ভবনের ছাদে। সেখান থেকে তাদের আটক করা হয়।

কুয়েটের কয়েকজন ছাত্র জানান, মারধর করা কিশোরও ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। 

মঙ্গলবার মারধরের পর ইব্রাহিমকে কুয়েট সড়কের ফ্রেশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক দাউদ আলী মীর বলেন, ছেলেটির মাথা সামান্য কেটে গিয়েছিল। ড্রেসিংয়ের পর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। সেলাই লাগেনি। আঘাত ছোট হওয়ায় আমরা তখনই ছেড়ে দিয়েছি।

কেন কিশোরকে আটক করা হলো– জানতে চাইলে খানজাহান আলী থানার ওসি (তদন্ত) সনজিত কুমার ঘোষ বলেন, ‘ওই কিশোরকে আটক করা হয়নি’। কয়েকবার কিশোরের বাবার নাম ও ঠিকানা তাঁকে দেওয়া হলে, প্রতিবারই তিনি আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, কুয়েটের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা অসুস্থ হওয়ায় প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো.

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওই কিশোরকে নির্যাতন এবং পরে তাকে প্রিজন সেলে আটকে রাখা আরও অমানবিক। পুলিশ তদন্ত না করে এভাবে কাউকে প্রিজন সেলে রাখতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে একই সেলে শিশু-কিশোরকে রাখা আইনের লঙ্ঘন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র জন স ল স ঘর ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক অবরোধমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে সেনাবাহিনী

সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করলে দেশের অর্থনীতিসহ সব সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সড়ক অবরোধমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে সেনাবাহিনী। যত কম সময়ের মধ্যে মুক্ত করা যায়– এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ককে অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে।  

কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গত দুই মাসে নিয়ন্ত্রণ করেছে ২৩২টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ৩৭টি, সরকারি সংস্থা ও অফিস-সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্য ঘটনা ৯৫টি। 

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগে সেনাবাহিনী কোনো বাধা পাচ্ছে না। এই ক্ষমতা যেখানে যতটুকু ব্যবহারের দরকার, সেটা করা হচ্ছে। অপরাধী গ্রেপ্তারের পর অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর বিচারকার্যে সেনাবাহিনীর কিছু করার থাকে না। 

গুজবে সেনাবাহিনী বিচলিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে সরকারের নির্দেশে দেশ-জাতির পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সততা, ন্যায়নীতি, প্রত্যয় ও সহনশীলতার সঙ্গে এটি করা হচ্ছে। 

শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও দেখেছেন মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে দীর্ঘ মিছিলে কালো পতাকাধারীদের রহিত করেছে সেনাবাহিনী। কালো পতাকাধারী হলেই জঙ্গি, এর প্রমাণ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী সোচ্চার আছে।  

সেনাপ্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশে সেনাবাহিনী প্রধানের সফর একটি ‘রুটিন অ্যাফেয়ার’। সেখানে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। বেশ কিছু মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেছেন। এতে আমাদের সামরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রগাঢ় হবে বলে বিশ্বাস করি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ