অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা প্রজন্ম দেশে অন্তত দুই দশক প্রভাব রাখবে: উপদেষ্টা নাহিদ
Published: 19th, February 2025 GMT
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে প্রজন্ম বা যে তারুণ্য তৈরি হয়েছে, অন্তত আগামী দুই দশক বাংলাদেশে তারা প্রভাব রাখবে। রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি—সমাজের সব ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব এবং নেতৃত্ব তৈরি হবে। ফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে যে সরকার বা রাজনৈতিক দল ধারণ করতে পারবে, তারাই সফলতা পাবে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫–এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তরুণেরা বলে দিয়েছে, নতুন বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধিত্ব বা হিস্যা লাগবে। কারণ, তরুণেরা এত দিন সহ্য করেছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের ব্যর্থতার ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। ফলে আগামীর বাংলাদেশের যেকোনো সিদ্ধান্তে তরুণেরা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা যে সরকার বা রাজনৈতিক দল ধারণ করতে পারবে, তারাই আসলে সফলতা পাবে। তারুণ্যের শক্তি ইতিবাচকভাবে কাজে লাগুক—এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে পেশিশক্তি–নির্ভর ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি অবসান ঘটাতে হবে। ছাত্ররা দেশের জন্য ছাত্রদের পক্ষে রাজনীতি করবে, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে—এমনটাই আকাঙ্ক্ষা।
ফ্যাসিবাদের দোসরেরা এখনো সমাজের নানা জায়গায় রয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর, ফ্যাসিবাদের প্রবণতা, ফ্যাসিবাদী চিন্তা এবং সেই ব্যক্তিগুলো সমাজের নানা জায়গায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলমান আছে। যারা ঘৃণ্য কাজে, দুর্নীতির কাজে সহযোগী ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে যারা মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করতে প্রশাসনের ব্যক্তি হয়ে জনগণের বিপক্ষে কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই একটি ব্যবস্থা আসবে।
তারুণ্যের উৎসবের বিষয়ে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-তরুণদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতেই তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী উদ্দীপনাকে উজ্জীবিত করতেই এ উৎসব। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হবে, বেদনা দূর হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তরুণদের ট্রমা দূর করতেই সারা দেশে তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসব উপলক্ষে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৫ লাখ তরুণ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। নারীদের জন্য আলাদা করে প্রায় তিন হাজার ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, এখন একটি ট্রানজেশনাল সময় যাচ্ছে। এ সময় সমাজের যারা তরুণ, তারা বিভ্রান্তি কিংবা ট্রমার মধ্যে আছে। তাদের পথ দেখাতেই দেশব্যাপী তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নিগার সুলতানা। অনুষ্ঠানের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি কবিতা, অভ্যুত্থানের ড্রোন ভিডিও দেখানো হয়। এরপর প্রদর্শন করা হয় গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রামাণ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’। পরে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণের শিল্পীরা। অতিথিদের বক্তব্য শেষে আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ণ য র উৎসব র অন ষ ঠ ন র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নতুন নামের বিষয়ে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এবারের শোভাযাত্রায় নতুন রং, গন্ধ ও সুর পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এবার চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হবে, এতে সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখা যাবে। এই শোভাযাত্রা হবে বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো– প্রত্যেকের। এ জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রথমে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে শুরু হয়েছিল। পরে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে সবাই যদি একমত হয়, তবে আবার নাম পরিবর্তন হতে পারে। এবারের শোভাযাত্রাটি আর বাঙালিদের শোভাযাত্রা না। কেন্দ্রীয়ভাবে এটিকে ডাকা হবে, যে নামে সবাইকে একটা ছাতার মধ্যে আনা যায়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউনেস্কো আগামীবার জানবে এ শোভাযাত্রা আরও বড় হয়েছে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। ইউনেস্কোর এটাতে খুশি হওয়ার কারণ হবে, আপত্তি করার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং এতদিন অনেকগুলো জাতি-গোষ্ঠীকে মাইনাস করে এসেছিলাম। এটাকে সংশোধন করছি।’ অনুষ্ঠানটি পুনর্বিবেচিত হয়েছে, তাই এর নামটিও পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে রক কনসার্ট হচ্ছে। যেখানে চাকমা, গারো, মারমা ও বাংলা ব্যান্ড– সবাই পারফর্ম করবে। এ ছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বাউল ও ফকিররা গান গাইবেন। ওদের একটা উৎসব হবে সেখানে। ১৪ এপ্রিল সংসদ ভবনের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোর আয়োজন করা হবে। চীনের দূতাবাসের সহযোগিতায় ড্রোন শো হবে। বিকেলে গান শুনবেন, সন্ধ্যার পর দেখবেন সংসদ ভবনের ওপর বাংলার আকাশের ড্রোন দিয়ে কিছু ইমেজ তৈরি করা হচ্ছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুরের ধারার গানের অনুষ্ঠান হবে। মেলার মতো আয়োজনও সেখানে করা হবে। ঢাকার নানান জায়গায় উৎসব ছড়িয়ে যাবে। সূর্যাস্তের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে– এবার আমাদের নির্দেশনা এটা না। কোন অনুষ্ঠান কখন শেষ হবে, সেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ঠিক করে নেবে।’ তিনি জানান, এবার প্রতিটি জেলা ও উপজেলার জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যে জেলাগুলোতে ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজন আছেন, সেগুলোতে বরাদ্দ আরও বেশি হবে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, নববর্ষের আয়োজন নিয়ে কাল (আজ) বৈঠক হবে। নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে। ঈদের ছুটি শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।