সব পদেই বিনা ভোটে জয়ী হতে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা
Published: 19th, February 2025 GMT
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সে পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ছে না প্রার্থীদের। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সমিতির ১৫টি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁরা সবাই বিএনপি–সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবী।
বুধবার বিকেলে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একসঙ্গে সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। সর্বশেষ গত বছররে ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের কেউই এ বছর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের ভাষ্য, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, এমন ৩২ আইনজীবীকে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। যার কারণে আওয়ামী লীগপন্থী কোনো আইনজীবী মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, গত সোমবার ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ। বুধবার জমা এবং একই দিন বিকেলে যাচাই-বাছাই। বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও আগামী ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুনকুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার লড়ছেন না আওয়ামী লীগপন্থীরা৭ ঘণ্টা আগেপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, বুধবার বিকেলে যাচাই-বাছাইয়ে ১৫ জনের মনোনয়ন বৈধ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চারটি পদে দুজন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিটি পদে একজন করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময়। যেহেতু কোনো পদে একাধিক প্রার্থী নেই, তাই সেদিন তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করা হতে পারে।
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মো.
আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই আগাম মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৌশলে আমাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে এবারের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমার তিন দিনের সময় দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে এক দিন। আমরা যেন মামলার কারণে আসতে না পারি, এ জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়ম করা হয়েছে, সশরীর হাজির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হবে।’
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে যেই কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করছি, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগপন্থী। কুমিল্লায় কিন্তু অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়নি। তারা মামলার ভয়ে মনোনয়নপত্র না কিনলে আমাদের কী করার আছে? আমরা কোনো গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করিনি। আপনি যদি নির্বাচন করেন, আপনার ফরম অন্য কেউ নেবে কেন?’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় তপন থ ল ইসল ম আইনজ ব কর ছ ন আওয় ম হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন।
আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াকফ এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াকফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়।’
তিনি জানান, ১৩শ, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব।
তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।”
আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, “হাজার বছর আগে ওয়াকফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’
আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের আট লাখ ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে চার লাখই ওয়াকফ বাই ইউজার।
এদিকে, নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ৮ জন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চার জন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখতে দেবেন? খোলাখুলি বলুন।”
বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। আদালত বলেছে, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধনের পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে সংহিসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
শাহেদ/সুচরিতা