ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি চাইলেও তা শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে নয় বলে জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। খবর এনডিটিভির।

ফক্স নিউজের শন হ্যানিটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্য এবং আমেরিকার শুল্ক কাঠামো নিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ সময় ইলন মাস্কও উপস্থিতি ছিলেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ট্রাম্প সরকার ভারতের জন্য বরাদ্দ ১৮২ কোটি টাকা (২ কোটি ১০ লাখ ডলার) অনুদান ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ভরতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। তার পর তাঁর এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছি, তিনি এখানে ছিলেন, আমি বললাম, আমরা পারস্পরিক শুল্ক চালু করব। আপনারা যা নেবেন, আমরাও তাই নেব। তিনি (মোদি) বললেন, না, না– এটা আমি পছন্দ করি না। আমি বললাম, না, না– আপনারা যা নেবেন, আমরাও তাই নেব। আমি সব দেশের সঙ্গেই এটা করছি। সে সময় ট্রাম্পের পাশে বসে থাকা ইলন মাস্ক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এটা ১০০ শতাংশ, গাড়ি আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।

ট্রাম্প আরও বলেন, আমার সঙ্গে কেউ তর্ক করতে পারবে না। যদি আমি বলি ২৫ শতাংশ, তারা বলবে, ‘ওহ, এটা ভয়ংকর’। আমি আর এটা বলি না, কারণ আমি বলি, ‘তারা যা নেবে, আমরাও তাই নেব।’ আর তার পরেই তারা তখন থেমে যায়।

এদিকে মোদির সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরের পর উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালের শরৎকালে একটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ) সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা লউন

গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিং স্বাভাবিক ঘটনা হইলেও এইবার উহা অস্বাভাবিক হারে দেখা দিবার আশঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হইবার কারণে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করিতে পারে। বিশেষত আসন্ন রমজান মাসে গরম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাইবে। তৎসহিত সেচ মৌসুম যুক্ত করিলে ধারণা করা কঠিন নহে, মার্চ-এপ্রিল হইতে বিদ্যুতের চাহিদা হইবে দেড় গুণ। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেও উহা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে। 

বিশেষ করিয়া অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে বেসরকারি খাত হইতে বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি। কিন্তু ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে সরকারের বিপুল ঋণ রহিয়াছে। সেই কারণে অর্থ সংকটে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি ফার্নেস অয়েল ও কয়লা আমদানিতে হোঁচট খাইতেছে; গ্যাস খাতের পরিস্থিতিও তথৈবচ। বকেয়া ও ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হইতে পারে। অন্যদিকে দেশীয় উৎস হইতেও গ্যাসের জোগান হ্রাস পাইতেছে। সকল কিছু মিলাইয়া এইবার গরমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িবে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

ইহা স্পষ্ট, সরকার জ্বালানি সাশ্রয় নীতির উপর গুরুত্ব দিয়াছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ইতোমধ্যে সতর্ক করিয়াছেন, আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসি ব্যবহার করিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, তৎসহিত আইনগত ব্যবস্থাও লওয়া হইবে। সরকারের হিসাব অনুসারে, এসির কারণে প্রায় চার সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হইয়া থাকে, যথায় উহার তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহার করিলে অন্তত দুই সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব হইবে। এই লক্ষ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করিবেন, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করিবেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সচিবালয়সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে এই নীতি কার্যকর করিবেন।

আমরা মনে করি, জ্বালানি সাশ্রয়ের এই নীতি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী এবং মানুষ যাহাতে এই ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকে তজ্জন্য বিদ্যুৎ অপচয় রোধেও বৎসরব্যাপী সরকারকে প্রচার-প্রচারণা চালাইতে হইবে; কেবল জ্বালানি সাশ্রয়ের নীতি গ্রহণে বিদ্যুতের সংকট কাটিবে না। রমজান মাস হইতে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নাই। জ্বালানি উপদেষ্টা সরকারের আর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করিয়াছেন বটে, তবে এই লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখিবে বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ইতিপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, গ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং হইলেও শহরবাসী বেশি সুবিধা ভোগ করিত। এইবার সরকার শহর ও গ্রামে সমান হারে এই লোডশেডিং বণ্টন করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। আমরা চাই, এই ক্ষেত্রে রুটিন করা হউক; কোথায় কখন বিদ্যুৎ যাইবে সেইভাবে রুটিন মানিলে উহাতে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হ্রাস পাইবে।

অস্বীকার করা যাইবে না, গত সরকারের জ্বালানি খাতের ভুল নীতির প্রভাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপরেও পড়িয়াছে। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করিবার বিকল্প নেই। কিন্তু আসন্ন রমজান মাস ও সেচ মৌসুমের কথা চিন্তা করিয়া সরকারকে আপাত ব্যবস্থারূপে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে জ্বালানি আমদানি করিতেই হইবে। মনে রাখিতে হইবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না করিলে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হইবে। তজ্জন্য জ্বালানি চাহিদার আলোকে জরুরি ভিত্তিতে জোগান দিতে সরকারকে সচেষ্ট হইতে হইবে। ইহাকে অগ্রাধিকার দিয়া এখনই ব্যবস্থা লওয়া জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ