গবির প্রত্যাশার সমাবর্তন নিয়ে হতাশায় শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, February 2025 GMT
দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে সমাবর্তন। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় এর জন্য মুখিয়ে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে সমাবর্তন হওয়ার খবরে উদ্দীপনা ছড়ালেও ধীরে ধীরে তা নির্জীব হয়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২ হাজার ৩৮৮ শিক্ষার্থী, যা মোট যোগ্য শিক্ষার্থীর ৩৪.
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৬ দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই ঘোষণার বাইরে সমাবর্তনে উপস্থিতির নিয়মকানুনসহ অন্যান্য এজেন্ডা প্রকাশ করেনি। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বাড়তি খরচ, অতিথি নিয়ে আসাতে বিধিনিষেধসহ নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়েছেন বলে দাবি তাদের।
এছাড়া সমাবর্তন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখে এ আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। পাঁচ দফা নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির পরও প্রায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন না করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
বিশেষ করে সমাবর্তন আয়োজনের বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তা নির্দেশনা নিয়ে ব্যঙ্গ করে শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বুলবুল লিখেছেন, “রেজিস্ট্রেশনের আগে কোন নিয়ম দেওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের পর এসব নিয়ম মানি না।”
প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী মো. রায়হানুল কবির রকি মন্তব্য করেছেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অযোগ্য। তার প্রমাণ এসব নিয়মাবলী।”
ফিজিওথেরাপির সাবেক শিক্ষার্থী ইমন চৌধুরী বলেন, “প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার যোগাযোগের ঘাটতি প্রকট। অনেক শিক্ষার্থী বিভ্রান্ত হয়েছেন সময় পরিবর্তনের কারণে। দীর্ঘ সময় পর সমাবর্তন আয়োজন হলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এটি ব্যাহত হয়েছে।”
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনসারী রোমিও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তাদের হাতেই সমাবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ অযোগ্য প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থেকেই অনেকেই নিবন্ধন করেননি।”
গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) সাবেক ভিপি জুয়েল রানা বলেন, “প্রশাসন বারবারই সমাবর্তনকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখে আসছে। শিক্ষার্থীদের অনাস্থা ও অসন্তোষের কারণেই অনেকে নিবন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচিত এই প্রহসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।”
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। রেজিস্ট্রেশন কম হওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তনের বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। একাধিকবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলেও সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেকেই নিবন্ধন করেননি। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও একটি কারণ। তবে সমাবর্তন সফল করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
গত ২০১৪ সালে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ সমাবর্তন আয়োজিত হয়েছিল। এরপর উপাচার্য না থাকাসহ বেশকিছু কারণে দীর্ঘদিন সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ২০২৪ সালেই সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্টের পর আবারো ভাঁটা পড়ে আয়োজনে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ চতুর্থ সমাবর্তন।
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন অন ক ই
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটে গ্রাফিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ‘শোকের গ্রাফিতি এক দফার ডাক’ শিরোনামে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসজুড়ে নানা ধরনের গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন করা হয়। গ্রাফিতিতে ‘বাহ ভিসি চমৎকার সন্ত্রাসীদের পাহারাদার’, ‘এখানে সমস্ত ক্ষমতাধর নিজেরে ভাবিছে ঈশ্বর’, ‘এক দফা এক দাবি ভিসি মাসুদের পদত্যাগ’, ‘ভিসি গদি ছাড়’—এসব স্লোগান লিখতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গালিব রাহাত বলেন, ‘‘আমাদের ভেতর যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, সেটা এভাবে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই। আমাদের অভিভাবক প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে বলতে চাই, আমরা ভালো নেই; কুয়েটের ছাত্ররা ভাল নেই। এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু সরব না।’’
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কুয়েট ভিসি, প্রো ভিসি, ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কুয়েট কর্তৃপক্ষ।
গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা জোর করে ক্যাম্পাসের প্রবেশে করে হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ ছাত্রকে বহিষ্কার এবং আগামী ২ মে হল খুলে দেওয়া ও ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত দেয় সিন্ডিকেট সভা। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৬ এপ্রিল ছয়টি আবাসিক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্ররা।
অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/রাজীব