কুষ্টিয়ার মানুষ তামাকের মধ্যে বসে আছেন: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
Published: 19th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ার মানুষ তামাকের মধ্যে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আজ বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করে।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘এখানে কেউ বললেন না তামাকের কথা। এই সভার পরেই দৌলতপুর উপজেলায় যাব। আমার তো মনে হয়, সেখানে তামাক ছাড়া কিছুই দেখব না। গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ বড় বাধা। ধীরে ধীরে তামাক চাষ বন্ধ করে আমাদের খাদ্য উৎপাদনে যেতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনারা যাঁরা যুবক আছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আছেন, তাঁদের এই বিষয়টি দেখা দরকার।’
রবি মৌসুমে তামাক চাষের জমিতে ডাল হতে পারত উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘মসুর, শর্ষে অনেক কিছু হতে পারত। সেগুলো না করে পুরো এলাকা বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। কেমন করে গরু–ছাগল পালন করবেন? আসলে তামাকপাতা তো একটা বিষ, নিকোটিন। তাহলে সেই নিকোটিন বিষ আমরা উৎপাদন করছি। ফলে গরু-ছাগল উৎপাদন অনেক কমে গেছে। হাঁস–মুরগি পালনের জায়গা নেই।’
গবাদিপশুর ওষুধ অনেক সময় নিরাপদ না বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে অনেক সময় কাজ করে। বিশেষ করে ওষুধের গায়ে যে দাম লেখা থাকে, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের ওষুধের ক্ষেত্রে অন্যায় করলে যে ধরনের অপরাধ হয়, প্রাণীর ওষুধের ক্ষেত্রেও সমান অপরাধ।’
মতবিনিময় সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের খামারিরা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সভায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
গণমানুষের কণ্ঠস্বর
দেশ-মাটি-মানুষের শিল্পী ফকির আলমগীর। ‘গণ’ শব্দটির সঙ্গে ফকির আলমগীরের নাম যুগলবন্দি হয়ে আছে। দেশমাতৃকার জন্য নিবেদিত এ সংগ্রামী শিল্পীর ৭১ বছরের বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ২৩ জুলাই ২০২১ সালে। এই খ্যাতিমান শিল্পীর দীর্ঘ জীবন খুব মসৃণ ছিল না।
ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত দিনটিই ফকির আলমগীরের জন্মতারিখ। ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আসাদের মিছিলের সহযোদ্ধা ছিলেন ফকির আলমগীর। দেশাত্মবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতে সোচ্চার ছিল তাঁর বিপ্লবী দরাজ কণ্ঠ।
আত্মপ্রত্যয়ে অবিচল থেকেছেন এই সংগ্রামী শিল্পী। একজন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এ শিল্পী পৃথিবীর সব বিপ্লবী নেতার প্রতিই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-কষ্ট-যাতনা তাঁর দরাজ কণ্ঠে প্রকাশ পেত। তিনি সংস্কৃতিকে ড্রয়িংরুম থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজপথে।
ফকির আলমগীর শুধু গণসংগীত শিল্পী নন; রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে তিনি আদর্শিকভাবে গণসংগীতে সমন্বয় করেছেন। তাঁর কণ্ঠ রাজপথ ও বাংলার জনপদে দিন বদলের কথাই বলেছে।
ম্যান্ডেলা, পিটসিগার, বেঞ্জামিন মলয়েস্বি, ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর বিপ্লবী কণ্ঠস্বর মহাসমুদ্রের কলতানে কল্লোল সৃষ্টি করেছে।
নিজাম উল হক, আবদুল লতিফ, কামাল লোহানী, সাধন ঘোষ, সাধন রায়, আবু বকর সিদ্দিক, আলতাফ মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, ভূপেন হাজারিকা, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসে গণসংগীতে নিবেদিত শিল্পীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
ফকির আলমগীর লোকজ ঐতিহ্য ও কৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন অনেক বই। তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’। জীবদ্দশায় তাঁর শেষ বই ছিল পবিত্র হজব্রত নিয়ে লেখা ‘ইহরাম থেকে আরাফাত’। অনেক পাণ্ডুলিপি রয়ে গেছে অপ্রকাশিত। তাঁর মৃত্যুর পর সংগ্রাম ও লাল-সবুজের পতাকা, সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশান্তর, মায়ের মুখ বইগুলো আমি উদ্যোগ নিয়ে প্রকাশ করেছি।
ফকির আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ৩০ বছর চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের গণযোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ২০০৭ সালে অবসরে যান।
জীবনে অনেক পুরস্কার ও পদক লাভ করেছেন তিনি। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ফেলো, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক, ভাসানী পদক, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মমতা ব্যানার্জি কর্তৃক সংগীতে মহাসম্মাননা পেয়েছেন।
দেশের দুঃসময়ে, সুসময়ে ফকির আলমগীরের কণ্ঠের গান কখনও থেমে থাকেনি। তিনি দেশ-মাটি-মায়ের সঙ্গে ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়েছিলেন। বিদেশের মোহ কোনোদিন তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। স্বদেশের প্রতি এ রকম দায়বদ্ধতা তাঁকে জনগণের প্রাণের কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। দেশ-জননীর তিনি আদরের সন্তান।
গান শুধু গানের জন্য নয়; গান জীবনের জন্য। প্রান্তিক মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনা, জীবনে বেঁচে থাকার নানা অনুষঙ্গ তাঁর গানে উঠে এসেছে জীবন্ত হয়ে।
ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন তাঁর লেখা বই, গান ও গণমানুষের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য। এই মহৎ শিল্পীর চিরবিদায়ের তৃতীয় বছর অতিক্রান্ত। দেশের মানুষের কাছে তাঁর জন্য দোয়া কামনা করছি। আজ জন্মদিনে ফকির আলমগীরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি।
সুরাইয়া আলমগীর: প্রয়াত শিল্পী ফকির আলমগীরের সহধর্মিণী এবং ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি