কুষ্টিয়ার মানুষ তামাকের মধ্যে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আজ বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করে।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘এখানে কেউ বললেন না তামাকের কথা। এই সভার পরেই দৌলতপুর উপজেলায় যাব। আমার তো মনে হয়, সেখানে তামাক ছাড়া কিছুই দেখব না। গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ বড় বাধা। ধীরে ধীরে তামাক চাষ বন্ধ করে আমাদের খাদ্য উৎপাদনে যেতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনারা যাঁরা যুবক আছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আছেন, তাঁদের এই বিষয়টি দেখা দরকার।’

রবি মৌসুমে তামাক চাষের জমিতে ডাল হতে পারত উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘মসুর, শর্ষে অনেক কিছু হতে পারত। সেগুলো না করে পুরো এলাকা বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। কেমন করে গরু–ছাগল পালন করবেন? আসলে তামাকপাতা তো একটা বিষ, নিকোটিন। তাহলে সেই নিকোটিন বিষ আমরা উৎপাদন করছি। ফলে গরু-ছাগল উৎপাদন অনেক কমে গেছে। হাঁস–মুরগি পালনের জায়গা নেই।’

গবাদিপশুর ওষুধ অনেক সময় নিরাপদ না বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে অনেক সময় কাজ করে। বিশেষ করে ওষুধের গায়ে যে দাম লেখা থাকে, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের ওষুধের ক্ষেত্রে অন্যায় করলে যে ধরনের অপরাধ হয়, প্রাণীর ওষুধের ক্ষেত্রেও সমান অপরাধ।’

মতবিনিময় সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের খামারিরা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সভায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.

আবদুল ওয়াদুদ, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে লম্বা ছুটি ঢাকা ছাড়বে পৌনে দুই কোটি মানুষ

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বৃহত্তর ঢাকা ছাড়বে। তারা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা। ঈদে ঘরমুখো এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবেন সড়কপথে। বাকি ৪০ শতাংশ নৌ ও রেলপথে যাবে। এ হিসাবে, এবার সড়কপথে ঈদযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার। নৌপথের ঘরমুখো যাত্রী সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৬৯ লাখ ৮ হাজার।   

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ঈদ-পূর্ব যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পর্যবেক্ষণের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন প্রতিবেদন, গবেষক, সামাজিক সংগঠন প্রতিনিধি ও পরিবহনবিষয়ক সংস্থার বরাত দিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের এই সংখ্যাগত ধারণা  জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ার কারণেও বেশি সংখ্যক মানুষ ঘরমুখো হবে। আগে ঈদের ছুটি তিন-চার দিন হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে এবারই প্রথম ঈদুল ফিতরের ছুটি দাঁড়াচ্ছে ৯ দিন। গতকাল রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রতিবেদন যা বলছে

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের মতো জনবহুল শিল্প ও বাণিজ্যিক শহরের ৫০ শতাংশ এবং জেলার অন্যান্য স্থানের ২০ শতাংশ মানুষ আবাসস্থল ছেড়ে যায়। এ হিসাবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার (জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ) মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। উল্লেখিত পাঁচ জেলার অন্যান্য স্থান থেকে যাবে আরও ২০ লাখ ২০ হাজার (জনসংখ্যার ২০ শতাংশ)। ঈদযাত্রায় সড়কে এবারও জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাগুলো ইতিবাচক। সরকার নির্বিঘ্ন ঈদ যাতায়াতের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনা কার্যকর হলে জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

যদিও প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে বলে স্বীকার করেছে সংগঠন দুটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল সংখ্যক মানুষকে মাত্র এক সপ্তাহে সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা সড়ক পরিবহন খাতের নেই। দূরপাল্লার অনেক সড়কের কোনো কোনো স্থানের এখনও বেহাল দশা। সারাদেশে সড়কে পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

ঈদুল ফিতরের পর ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা হওয়ায় আরও তিন দিন যুক্ত হয়েছে ঈদের ছুটির তালিকায়। কারণ, এর পরের দু’দিনই শুক্র ও শনিবার। সেই হিসাবে এবার ঈদ ঘিরে টানা ৯ দিনের অবকাশ যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। তবে এ ছুটি ১১ দিনও সম্ভব হতে পারে। ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল ছুটি থাকছে নির্বাহী আদেশে। তার আগে ২৮ মার্চ পড়েছে শুক্রবার। ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি। পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি। এ ছাড়া ঈদের আগের বৃহস্পতিবার ছুটি মিললে এবার টানা ১১ দিনের ছুটি কাটানো যাবে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে রোববার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ছুটিতে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দপ্তর বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন– বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতায় পড়বেন না। চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। জরুরি কাজে সম্পৃক্ত দপ্তরগুলোও এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
       
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ