‘রিয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচ আধুনিক ফুটবলের ক্লাসিকো’—গত বছরের এপ্রিলে রিয়াল-সিটির কোয়ার্টার ফাইনাল সামনে রেখে কথাটা বলেছিলেন সাবেক রিয়াল কোচ হোর্হে ভালদানো। কদিন আগে সিটির বিপক্ষে প্লে-অফের প্রথম লেগের আগে একই কথা বলেছিলেন কার্লো আনচেলত্তিও। এই দশকের অন্যতম সফল দুই দলের লড়াইয়ের উত্তাপ বুঝতে এর চেয়ে বেশি সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন আছে কি!

আরও পড়ুনএক দিনেই মেসির তিন ছেলের হাতে ট্রফি, চিরোর অবিশ্বাস্য ‘মেসি’ গোল১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগামী দিনগুলোয় আধুনিক ফুটবলে ধ্রুপদি লড়াইয়ের কথা বললে রিয়াল-সিটির লেখা রূপকথাগুলোর স্থান ওপরের দিকেই থাকবে। এর মধ্যে কোনো কোনো ম্যাচ সময়ের ব্যাপ্তি পেরিয়ে চিরকালীনও হয়ে গেছে। আজ রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কি তেমন কোনো ম্যাচই অপেক্ষা করছে? কবীর সুমনের গানের কথায় বললে, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’

তবে ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তির খোঁচাতেই বোঝা যাচ্ছে, পেপ গার্দিওলার সঙ্গে তাঁর পুরোনো হিসাব-নিকাশগুলো চুকানো বাকি, ‘রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজানোর আগে আমি তাকে (গার্দিওলা) জিজ্ঞেস করব—তোমাদের (ম্যান সিটির) পরের রাউন্ডে যাওয়ার ১ শতাংশও কি সম্ভাবনা আছে? সে কিন্তু আরও বেশি সম্ভাবনার কথাই জোর দিয়ে বলবে.

..কিন্তু এই পর্যায়ে দাঁড়িয়েও আমরা বলতে চাচ্ছি না, আমাদের ৯৯ শতাংশ সুযোগ রয়েছে।’

বার্নাব্যুতে অনুশীলনে রিয়াল মাদ্রিদ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই

ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।

পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।

পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।” 

ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।” 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ