ফতুল্লার ইউরোটেক্স শ্রমিকদের ফের সড়ক অবরোধ, যাত্রীদের ভোগান্তি
Published: 19th, February 2025 GMT
মামলার প্রত্যাহার, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ ও লে-অফ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেয়াপর দাবিতে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইউরোটেক্স নিটওয়্যারের শ্রমিকরা। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় তারা সড়ক অবরোধ করে। এতে করে ওই সড়কে অসংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম র্দুভোগের শিকার হয় যাত্রী সাধারণ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করেন। এবং শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।
শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকার রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ইউরো টেক্স নিটওয়্যার লিমিটেডে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করে। শ্রমিকেরা গত ১১ই ফেব্রুয়ারি এক মাসের বকেয়া বেতন, ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে আসছিল। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় কারখানায় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কারখানার কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে চাকরিচ্যুত ২৮ শ্রমিককে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় ভাংচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে কারখানার শ্রমিকেরা মামলা প্রত্যাহার ও ছাটাইকৃত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মালিকপক্ষ কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত লে-অফ ঘোষণা করে। এই ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকেরা মামলা প্রত্যাহার, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ এবং লে-অফ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নগরের চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় পুনরায় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংকরোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
ৎঅজুফা বেগম নামে এক শ্রমিক বলেন, কোনো কারণ ছাড়া শ্রমিকদের ছাঁটাই করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত মাসের বেতনও দেয়নি। এতে আমরা কাজ বন্ধ করে দিলে হামলা চালায়। এতে আমি হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভজেলা গার্মেন্টস ও সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এম এ শাহীন বলেন, মালিকপক্ষ ২৭ জন শ্রমিকের নামে মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে। এলাকার মাস্তানদের লেলিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে পুলিশ হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসী দ্বারা ভয় ভীতি দেখানো বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা বলেন, পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্মকর্তা রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সময় ইউরোটেক্স নিটওয়্যারের শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা করে আসছিল। তাদের বিশৃঙ্খলার কারণে মালিকপক্ষ মামলা করে। মঙ্গলবার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছিল। তখন মালিকপক্ষ জানায় আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী মামলার কাজ চলবে। সেই সঙ্গে শ্রম আইনে ৯৫ জন শ্রমিককে ছাটাই করবেন।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ম ল কপক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাকির কারামুক্ত, গাড়িবহর নিয়ে অনুসারীদের বরণ
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান সাজার মেয়াদ শেষে কারামুক্ত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে কারামুক্ত হন তিনি।
এদিকে জাকির খানকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফোরকান ওয়াহিদ জানান, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে আজ রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের মুক্তির খবরে আজ সকাল থেকে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শহরের দেওভোগ এলাকায় জাকির খান তাঁর বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকার পর গোপনে দেশে ফিরে এসে রাজধানীর বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় পরিচয় গোপন করে সপরিবার বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ জাকির খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে জাকির খানসহ সব আসামি খালাস পান।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সাজা শেষে জাকির খান কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি ২৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন। তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, সেই মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন।