ইবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে জায়িম-রিফাত
Published: 19th, February 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সভাপতি হিসেবে দৈনিক নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাজমুল হক জায়িম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিব রিফাত নির্বাচিত হয়েছেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়রি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্বব্যিালয়ের প্রেস কর্ণারে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বব্যিালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
নির্বাচিত অন্য সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি মুতাছিম বিল্লাহ রিয়াদ (মানবজমিন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা (ডেইলি অবজারভার), অর্থ সম্পাদক নিয়ামতুল্লাহ মুনিম (খবরের কাগজ), দফতর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান (যায়যায়দিন), প্রচার সম্পাদক মোর্শেদ মামুন (কালবেলা), কার্যনির্বাহী সদস্য ইদুল হাসান ফারহান (দিনকাল), জামাল উদ্দিন (শিক্ষাবার্তা)।
নির্বাচন পরবর্তী দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী।
এছাড়াও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ও ইউট্যাবের ইবি সভাপতি ড. তোজাম্মেল হোসেন, গ্রিন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, লালন শাহ হল প্রাধক্ষ্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসানসহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নবনির্বাচিত সভাপতি তাজমুল হক জায়িম বলেন, “ইবি সাংবাদিক সমিতি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সত্যের সারথি হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ক্যাম্পাস তথা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে আসছে। ফলে ইবিসাস ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে। এ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সভাপতি হিসেবে যে গুরুদায়িত্ব আমাদের কাঁধে এসেছে আমরা সেই দায়িত্ব পালনে সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”
নতুন নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “এ দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সব ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তাদের আমি এখানে যেভাবে দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাই- সব জায়গায় এ ধারা অব্যাহত থাকুক। সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেক। তোমাদের সাংবাদিকতা হবে সৎ, কল্যাণ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তোমাদের মাধ্যমে উঠে আসুক বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, পরে উদ্ধার
বসতবাড়ির মাত্র ১৯ শতক জমি লিখে না দেওয়ায় নাসির উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে রোগী সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে। পরে ভাগ্নের জিডির ভিত্তিতে ৯ দিন পর ভুক্তভোগীকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড দোলং গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আবির মোল্লার ছেলে। তার স্ত্রীর নাম বেদেনা খাতুন (৪৫)।
এলাকাবাসী জানান, নাসির উাদ্দন ও বেদেনা দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। এদের মধ্যে বড় মেয়ে নাজমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে একই উপজেলার বোয়াইলমারী গ্রামের মৃত কিতাব মাস্টারের ছেলে আসাদ হোসেনের সঙ্গে। ছোট মেয়ে শামসুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে পৌর সদরের আফ্রাতপাড়া মহল্লার মিছা প্রামানিকের ছেলে জাহিদ প্রামানিকের সঙ্গে। একমাত্র ছেলে মাসুম মোল্লা (২১) সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বিএ (অনার্স) প্রথমবর্ষের ছাত্র।
আরো পড়ুন:
৩২ ওমরাহ যাত্রীর ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি পরিচালক
ফতুল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৩
অভিযোগে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটার কাজ করে সংসার চালান নাসির উদ্দিন। এক বছর আগে রামনগর গ্রামের মোফাজ্জল সরদারের কাছ থেকে বাৎসরিক ৪৫ হাজার টাকায় জমি লীজ নেন তিনি। সেই জমি আবাদ করে স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। এক মাস আগে বসতবাড়ির ১৯ শতক জমি নাসির উদ্দিনকে লিখে দিতে বলেন তার ছেলে মাসুম। না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছেলে তার বাবাকে মারধরও করেন।
লীজ নেওয়া জমির মালিক মোফাজ্জল সরদারকে নাসির উদ্দিনের স্ত্রী-সন্তান বলেন তারা আর জমি লীজ নিবেন না। কিন্তু নাসির উদ্দিনের ইচ্ছা তিনি জমি লীজ নিয়ে আবাদ করবেন। তাতে বাধ সাধেন তার স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম এবং জামাই আসাদ। এ নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। তখন নাসির উদ্দিনের ভাগ্নে শরীফুল ইসলাম জানতে পেরে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। নাসিরের স্ত্রী-সন্তান তাকে ভুল বুঝে সমাধান করতে দেননি।
ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন বলেন, “গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে আমাকে বেঁধে পাবনায় নিয়ে যায় এক ডাক্তারের কাছে। সেখানে আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে নিয়ে বাড়িতে আসে। আমি সেই ওষুধ খাই নাই ভয়ে। ইনজেকশনের ব্যথা এখনো আছে। তারপর আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। এর মধ্যে গত ১২ মার্চ আবারো জমি লিখে নিতে চান ছেলে মাসুম, স্ত্রী বেদেনা, মেয়ে জামাই। তাতে রাজী না হওয়ায় ১৩ মার্চ ভোরা রাতে রোগী সাজিয়ে হাত-পা ও কোমড় বেঁধে তারা আমাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে পাশের বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল সুরমা ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে আসে। সুস্থ মানুষ হয়েও স্ত্রী, সন্তান, জামাইয়ের ষড়যন্ত্রে সেখানে ৯ দিন ভর্তি ছিলাম।”
নাসির উদ্দিনের ভাগ্নে শরীফুল ইসলাম বলেন, “নিখোঁজ মামার সন্ধান চেয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলেননি। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৯ মার্চ চাটমোহর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করি। পরে পুলিশ জানতে পারে, পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে মানসিক রোগী হিসেবে ভর্তি রয়েছেন নাসির উদ্দিন। এ ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান নাসির উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশকে। ২১ মার্চ বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন মামার স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম। টের পেয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের আটক করি। এরপর ওইদিনই তাদের সঙ্গে করে পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে গিয়ে নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম বলেন, “নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর সবাই ধীরে ধীরে সব জানতে পারে। এটা একটা অমানবিক ঘটনা। সামান্য জমির জন্য বাবাকে কোনো ছেলে এভাবে পাগল সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে রাখতে পারে জানা ছিল না। এরা অমানুষ। সবাইতো নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলছে, কারো তো মনে হলো না তিনি পাগল। এমন বউ-ছেলের শাস্তি হওয়া উচিত।”
নাসির উদ্দিনের অভিযুক্ত ছেলে মাসুম মোল্লা বলেন, “আমার বাবা রাতে ঘুমায় না। মধ্যরাতে ঘরের বাইরে এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কথাবার্তাও অসংলগ্ন বলেন। এর আগেও ডাক্তার দেখাইছি। ডাক্তার বলছেন, তার মাথায় সমস্যা আছে। আবার মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। সেখানেও তাকে দেখে ওষুধ লিখে দেন ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ডাক্তার। পরে সরকারি হাসপাতালে সিট না থাকায় পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করি। এখানে আমাদের নামে যেসব কথা আব্বা বলছেন তা সঠিক নয়।”
নাসির উদ্দিনের স্ত্রী বেদেনা খাতুন বলেন, “ডাক্তার বলছে তার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকেও যখন তখন যা তা ভাষায় বকাবকি করেন। জমি লিখে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়। তখন ছেলে জামাই মিলে ডাক্তার দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি জোরাজুরি করছিলেন সে জন্য তাকে বাঁধা হয়েছিল। এখন তিনি যদি সুস্থ হন ভালো কথা।’
চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘অভিযোগটি পাওয়ার পর সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। তখন সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অফিসারকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে আসলে নাসির উদ্দিন মানসিক রোগী কি না জানার চেষ্টা করি। সেখান থেকে নিশ্চিত হই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ নন।”
তিনি আরো বলেন, “হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে আমার পরিচিত বন্ধু ডাক্তারকে পাঠিয়ে জানতে পারি, ওই ওষুধও মানসিক রোগীর ওষুধ নয়। নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে আনার পর তার ইচ্ছামতো যেখানে তিনি নিরাপদ মনে করেন সেখানে থাকতে বলা হয়েছে। আসলে নাসির উদ্দিনের জামাই আমাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ