তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা
Published: 19th, February 2025 GMT
তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা, একরাশ হাহাকার! আপন বলে কেউ বেঁচে নেই তার। বাবা-মায়ের আদর, স্নেহ, বুঝে উঠার আগেই শিশুটিকে হাসপাতালের শয্যায় রেখেই পৃথিবী ছাড়লেন সুমন মিয়া ও শারমিন। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় গ্যাসের আগুন হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরে। আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করে সুমনের পরিবার। তিন মাসের সুমাইয়া তখনও ঘুমে। সুমন তার দুই সন্তান নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। তারপরও সুমাইয়ার শরীরের ৭ শতাংশ ঝলসে যায়। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই ঘটনায় আরও ১১ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আটজন। তাদের মধ্যে তিনজনের আশঙ্কাজনক।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারমিন মারা যান বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান। তিনি বলেন, ‘৪২ শতাংশ পোড়া নিয়ে শারমিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার অবস্থা আগে থেকেই জটিল হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। আজ সকালেও অস্ত্রোপচার করা হয়। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেলো না। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি মারা যান। এর আগে গত রোববার ভোর রাতে শিউলি আক্তার এবং রোববার দুপুরে সুমন মারা যান। শিউলি আক্তারের শরীরের ৯৫ শতাংশ এবং সুমনের শরীরের ৯৯ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
একই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সুমাইয়ার। বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঁচতলার ৫২০ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছে। ক্ষুধা পেলেই কাঁদছে শিশুটি। নিরুপায় শিশুটির কান্না থামাতে সুমনের সহকর্মী রাশেদের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বুকের দুধ দিচ্ছেন। শুধু সুরাইয়াকে দুধ খাওয়ার জন্য তার পাশের শয্যায় ভর্তি তিনি।
শারমিন সুলতানা সমকালকে বলেন, ‘আমার নিজেও একটা আট মাসের সন্তান রয়েছে। সন্তানের মর্ম আমি বুঝি। বুকের দুধের অভাবে শিশুটি কষ্ট পাবে এটি মেনে নিতে পারছিলাম না। স্বামীর সহকর্মী দগ্ধ হওয়ার খবর শুনি নিজেই হাসপাতালে চলে এসেছি।’
বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও আটজনের চিকিৎসা চলছে। তারা হলেন- জহুরা বেগম (৭০), মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ফটোসাংবাদিক এম সাদেক পেশাদারত্বের সঙ্গে কখনো আপস করেননি
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রথম আলোতে কর্মরত সদ্য প্রয়াত কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক এম সাদেকের স্মরণসভা, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, গণমাধ্যমে পথচলার শুরু থেকেই এম সাদেক পেশাদারত্বের কাজ করে গেছেন। তিনি পেশাদারত্বের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। চাইলেই অপসাংবাদিকতায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু এম সাদেক পেশাদারত্বের বাইরে কখনোই নিজেকে বিলিয়ে দেননি। তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও সংকট থেকেই বোঝা যায়, পেশাগত জীবনে তিনি কতটা সৎ ছিলেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সম্মেলনকক্ষে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক। মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন নগরের কান্দিরপাড় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, খায়রুল আহসান, গোলাম কিবরিয়া, শহিদুল্লাহ, দিলীপ মজুমদার, বাহার রায়হান, ওমর ফারুকী, এম ফিরোজ মিয়া, তাওহীদ হোসেন, আতিকুর রহমান প্রমুখ।
প্রথম আলোর পক্ষে বক্তব্য দেন কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান ও কুমিল্লার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা। প্রয়াত এম সাদেকের পরিবারের পক্ষে তাঁর ছোট ভাই জামাল হোসেন ও একমাত্র সন্তান কাউসার আহমেদ স্মরণসভায় কথা বলেন। সহকর্মীদের অনেকে ও পরিবারের সদস্যরা এম সাদেকের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এম সাদেক কুমিল্লার ফটোসাংবাদিকতায় অনন্য ছিলেন উল্লেখ করে সহকর্মীরা বলেন, এম সাদেকের তোলা ছবিগুলো কুমিল্লার প্রতিচ্ছবি ছিল। তিনি পারিবারিক জীবন অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার করেছেন। কিন্তু কখনোই নিজের পেশাকে কলুষিত করেননি তিনি। তিনি শুধু ভালো ছবিই তুলতেন না, তিনি একজন ভালো মানুষও ছিলেন।
বক্তারা আরও বলেন, এম সাদেকের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয় সভা থেকে। এ ছাড়া তাঁর কাজগুলো নিয়ে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।
গত সোমবার বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে কুমিল্লা নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ফটোসাংবাদিক এম সাদেক। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কুমিল্লা শহরতলির গোমতী নদীর পাড়ে চানপুর এলাকায় এম সাদেক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এম সাদেকের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নগরীর অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা এম সাদেক এক ছেলে, স্ত্রী, পুত্রবধূ, নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী-শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
আরও পড়ুনপ্রথম আলোর কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক এম সাদেক আর নেই১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫