বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, আহত ১৩
Published: 19th, February 2025 GMT
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ফেসবুকে লাইভ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমান দিপুর (৬৪) বাড়িতে দুই দফায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে দলীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুরি পাড়ার শ্মশান রোডের বিএনপি নেতা দিপুর বাড়িতে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, মফিজুর রহমান দিপু উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, তার স্ত্রী নোয়াখালী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার, তার ছেলে বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব দাউদ উর রহমান ফারহান ও তার ছোট ছেলে চৌমুহনী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান ফাহিম।
গত রোববার রাত ৮টার দিকে তার বড় ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ফারহান ফেসবুক লাইভে এসে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন কথা বলে।
হামলার শিকার বিএনপি নেতা দিপু বলেন, “ছেলের ফেসবুক লাইভ শেষ হলে একই দিন রাত ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস আমাকে মুঠোফোনে কল দেয়। এক পর্যায়ে হুমকি দিয়ে বলে তোর ছেলেকে ফেসবুক লাইভ ডিলেট করতে বল। তা না হলে তোর পরিবারকে শেষ করে দিব। তোর ছেলে আমাদের ইঙ্গিত করে কথা বলেছে। এর পরের দিন সোমবার রাত ১০টার দিকে একদল অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা করার উদ্দেশ্যে এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া দিলে তারা আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনায় আমার ছেলে বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।”
দিপু অভিযোগ করে বলেন, “পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল, তার ভাই জাহাঙ্গীর ও সোহাগের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশীয় অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমার বসত ঘরের দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, টিনের বেড়া ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলে ফারহান, স্ত্রী পারভীনসহ আমার পরিবারের পাঁচ জনকে বেধড়ক মারধর করে। হামলাকারীরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর অনুসারী। তাদের নির্দেশে এ হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।”
ভুক্তভোগী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, “একই দিন রাত ৯টার দিকে কামাক্ষা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বুলুর অনুসারী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাবুলের ছেলে যুবদল নেতা সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাজন, সাইফুল ও কায়েসের নেতৃত্বে ২৫-৩০ অস্ত্রধারী দ্বিতীয় দফায় আমার বসতঘরে হামলা চালায়। এসময় আমাদের দেখতে আসা ছয়জন ছাত্রদল কর্মী ও দুই প্রতিবেশি নারী, ছেলেকে বাঁচাতে গেলে আমাকেসহ ১৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আটটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং আমার গলার একটি চেইন ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চৌমুহনী কলেজের ডিগ্রি শাখার ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নাহিদকে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকত বুলু প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেন। বুলুর নামেই স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। আমার ছেলের অপরাধ ছিল চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কথা বলা, যারা সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ছোট ভাই জাবেদের ভোট করেছে, তাদের নিয়ে কথা বলা।”
অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস বলেন, “হামলার বিষয়টি আমিও শুনেছি। ফারহান মাদক সেবন করে, এ নিয়ে কার কার সাথে ঝগড়া হয়েছে। এর আগেও অসামাজিক কার্যকলাপে ছিল এবং চাঁদাবাজি, নেশার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বাবা-মা আমাদের দল করে। আমি কাউকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়নি। আমার নির্দেশে কোনো হামলা হয়নি। আমি কেন কারো বাড়িতে হামলা করতে নির্দেশ দেব?”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “দিপু ও তার স্ত্রীকে আমি নেতা বানিয়েছি। তার ছেলে বহিষ্কৃত। তাদের মত ব্যক্তির বাড়িতে আমি কেন হামলার নির্দেশ দেব। তারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। আমি শুনেছি দিপুর ছেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষার সাথে বেয়াদবি করেছে।”
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান হামলার বলেন, “এটা মনে হয় তাদের দলীয় কোন্দল। ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফারহানকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকে দলীয় মনোমালিন্য ছিল। দুই দফায় ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ঢাকা/সুজন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র ক ন দ র য় ব গমগঞ জ আম র ছ ল ছ ত রদল র রহম ন দল র স চ ম হন আম র ব উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারী পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আবরার ফাহাদ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে জিলা স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়। কর্মসূচিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজও উপস্থিত ছিলেন।
আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রায় সবার হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা ফেস্টুন। তাঁরা আবরারের হত্যাকারীদের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। আগে থেকেই পলাতক (জিসান, তানিম, রাফিদ) ও সদ্য পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তাঁরা।
মানববন্ধনে বলা হয়, এ রকম স্পর্শকাতর একটি মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গেছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা।’
মানববন্ধনে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক। আর কোনো বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ উঠুক। দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করে দেশের মানুষকে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল করে তুলতে হবে।’
জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর জেলাতে মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এর পেছনে ছিলেন। যাঁরা আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতিতে ফিরতে হবে এবং ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আবরারের প্রশ্নে তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আবরারের হত্যাকারী ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগকেও সেভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আবরারের আত্মার শান্তি মিলবে না।
মানববন্ধনে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে পলাতক সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধিদল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি দেন।