ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটির অ্যান্টিবায়োগ্রাম হাতে পেলেন। অ্যান্টিবায়োগ্রাম হলো নির্দিষ্ট সময়ে একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত যেসব রোগী এসেছেন, সেসব রোগের জীবাণুগুলোর ওপর অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার এক বৈজ্ঞানিক দলিল।

সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণু শনাক্তকরণের আগে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ক্ষেত্রে এই দলিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে  মুমূর্ষু এবং জরুরি সেবা প্রয়োজন, এমন রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

গতকাল বুধবার হাসপাতালে ‘ওয়ার্কশপ অন ক্লিনিক্যাল এনগেজমেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্টিউআর্ডশিপ অ্যান্ড অ্যান্টিবায়োগ্রাম ডিসেমিনেশন অব ঢাকা মেডিকেল কলেজ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে এই অ্যান্টিবায়োগ্রাম উপস্থাপন করা হয়।

গেল বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা যেসব ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছিলেন, সেগুলোর ওপর কোন ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ কতটা কার্যকর ছিল, তারই সারসংক্ষেপ হিসেবে এই অ্যান্টিবায়োগ্রাম উপস্থাপন করা হয়।

বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমণের হার বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। রোগের জটিলতার পাশাপাশি খরচের অঙ্কটাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের চিকিৎসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের বিষয়ে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। আর চিকিৎসকদেরও আন্তর্জাতিক নীতিমালা এবং স্থানীয়ভাবে সংক্রামক রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর কার্যকারিতার ধরন অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন রোগীকে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নির্দেশনা দেবেন। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর হার অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য একজন চিকিৎসকের হাতে অ্যান্টিবায়োগ্রাম থাকা প্রয়োজন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.

সাজ্জাদ বিন শহীদের নেতৃত্বে বিভাগটির সব শিক্ষকের সম্মিলিত প্রয়াসে এই অ্যান্টিবায়োগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োগ্রাম উপস্থাপন করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. উম্মে সাওদা। ২০২৪ সালে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও ওয়ার্ড বা কেবিনে ভর্তি থাকা রোগী এবং বহির্বিভাগে আগত রোগীদের জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কেমন ছিল, আলাদাভাবে সেটির উল্লেখ রয়েছে অ্যান্টিবায়োগ্রামে। এই অ্যান্টিবায়োগ্রাম কার্ড তুলে দেওয়া হয় ক্লিনিক্যাল বিভাগের চিকিৎসকদের হাতে।

অ্যান্টিবায়োগ্রাম কার্ডকে কাজে লাগিয়ে সংক্রামক রোগের চিকিৎসাসেবার মান আরও বাড়বে বলে মনে করে বক্তারা। তাতে রোগের জটিলতার হার কমার পাশাপাশি সংক্রামক রোগে মৃত্যুহারও কমিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল এনগেজমেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামের ওপর কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা সহজেই রোগীদের জন্য সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক বেছে নিতে সক্ষম হবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহম্মদ। আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রতিনিধি ডা. এস এম শাহরিয়ার রিজভী, রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাবেয়া সুলতানা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ বিন শহীদ এবং বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও শিক্ষকরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের অধীনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কনটেইনমেন্ট প্রোগ্রাম এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের সার্বিক সহায়তা করে ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই অ য ন ট ব য় গ র ম ম ড ক ল কল জ র চ ক ৎসক র র চ ক ৎসক অন ষ ঠ ন র জন য উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানি বিভিন্ন অপকৌশল ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আড়ালে প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব বন্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা। শনিবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় এ দাবি করেন তারা। 

‘জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে তারা জানান, তামাক ব্যবহারজনিত কারণে দেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার জন অকালে মারা যায়। প্রতিরোধযোগ্য অকাল মৃত্যু কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক (এফসিটিসি)–এর আলোকে বিদ্যমান আইনের ছয়টি ধারা সংশোধন জরুরি।

সেগুলো হলো- পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে প্রর্দশনী নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ নিষিদ্ধ করা, দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

কর্মশালায় হার্ট ফাউন্ডশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু তামাক কোম্পানি আইন সংশোধনে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা রাজস্ব ও কর্মসংস্থান হারানোর ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে। 

২০২১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য, পানীয় এবং তামাকপণ্য বিক্রি করে এরকম খুচরা দোকানের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১, যারা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেই তামাকপণ্য বিক্রি করে থাকে। তাই কর্মসংস্থান হারানোর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।

হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা তুন নেসা মালিক। হার্ট ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফরসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের
  • কুমিল্লা মেডিকেলে ৪ সংবাদকর্মীর ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলা