বিজিবির আপত্তির মুখে অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন থেকে সরে এল বিএসএফ
Published: 19th, February 2025 GMT
ফেনীর পরশুরামের নিজকালিকাপুর সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আপত্তির মুখে অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন থেকে সরে এসেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ওই এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুহুরী নদীতে বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। যার কিছু অংশের কাজ নিয়ে বিএসএফ আপত্তি জানিয়েছে।
স্থানীয় গ্রাসবাসী ও বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে সীমান্তে লাগানো বাতি বন্ধ করে বালুর বস্তা দিয়ে তিনটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের কাজ শুরু করে বিএসএফ। তবে বিজিবির মৌখিক প্রতিবাদের মুখে সেসব আবার সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.
বিএসএফের অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বিজিবি টহল দল সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল অংশ হিসেবে ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় সীমান্তের ওপারে বালুর বস্তা ফেলে বিএসএফের তিনটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের প্রস্তুতি দেখতে পান বিজিবির সদস্যরা। পরে বিজিবি আপত্তি জানালে বিএসএফ অস্থায়ী পোস্ট তিনটির সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০২টি স্থানে ভেঙে যায়। এতে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। ভয়াল সেই বন্যায় অন্তত ৩০ জন নিহত হন। বন্যা প্রতিরোধেই বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধোঁয়ার ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য
বাইরে ও ঘরের ভেতর উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের বায়ুর মান আশঙ্কাজনক। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’-এ জানা যায়, ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ এবং নগর হিসেবে ঢাকা ছিল বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত। গত বছর বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। যদিও এটা ২০২৩ সালের তুলনায় অল্প কমেছে, তাও এ পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে কমপক্ষে ১৫ গুণ।
যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস শিশুর বেড়ে ওঠা ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ও হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন রোগে ২০২১ সালে ৫ বছরের কম বয়সী ১৯ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়।
বায়ুদূষণের কারণে বাতাসের মান হ্রাস পায়, যার ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে শিশুদের ওপর। তারা হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুরা গর্ভাবস্থা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বায়ুদূষণ তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করে।
জন্মের পর বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে বায়ুদূষণে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয় শিশুস্বাস্থ্যে। তাদের শরীর ও মস্তিষ্ক ধারাবাহিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। তারা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নেয় এবং তা কখনও কখনও শরীরের তুলনায় বেশি। অনেক শিশু মুখ দিয়েও শ্বাস নেয়, বায়ুদূষিত হলে যা আরও বেশি ক্ষতির কারণ। দূষিত বায়ুতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণে এর ঘনত্ব (যেমন ধুলা ও ধোঁয়া) বেশি থাকে। এ ছাড়া নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে তারা পরিবেশদূষণের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। দূষিত অতি ক্ষুদ্রকণা তাদের শ্বাসযন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করে সহজেই রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।
বাইরের দূষিত বাতাস ছাড়াও ঘরের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের দূষিত বাতাসে থাকতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম কয়েলের ধোঁয়া। ঘর মশামুক্ত রাখতে অনেকে সারারাত বদ্ধ কক্ষে কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন, যা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি শিশুদের আশপাশে ধূমপান করলে সে ধোঁয়াও নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়া শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানিসহ তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি তাদের ফুসফুসের সক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বায়ুদূষণ ও ধোঁয়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া।
মশার কয়েলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ত্বকের জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার কয়েলের ধোঁয়া দীর্ঘ সময় বা উচ্চমাত্রায় গ্রহণ করলে এ সমস্যাগুলো আরও গুরুতর হতে পারে। দেশের দীর্ঘস্থায়ী বায়ুদূষণ সমস্যা এবং যানবাহনের ধোঁয়া নবজাতকদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর পাশাপাশি মশার কয়েলের ধোঁয়া আরেকটি বিপদ হিসেবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশে নবজাতকদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যে কোনো শিশু চিকিৎসকের চেম্বারে গেলে দেখা যায়, ১-১২ মাস বয়সী শিশুরা প্রায়ই বিভিন্ন নাসাপ্রদাহের সমস্যায় ভুগছে। এর প্রধান কারণ হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা দূষিত বাতাস গ্রহণ করছে, যা মশার কয়েলের ধোঁয়া এবং অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকারক কণায় ভরপুর। বায়ুদূষণের ফলে শিশুদের মধ্যে কম জন্ম-ওজন, হাঁপানি, ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও অ্যালার্জির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই এসব ব্যাপারে মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুর সুরক্ষায় প্রশাসনকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোহাম্মদ জাকারিয়া: কমিউনিকেশন প্রফেশনাল