অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকেছে। উপদেষ্টাদের কথাবার্তায় মনে হয়, তারা কোনো একদিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। সেই সন্দেহের উদ্রেক যদি হয় বাংলাদেশের জনগণের কাছে, তাহলে আপনাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এদেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে।”

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালীতে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে নোয়াখালী জেলা বিএনপি সমাবেশের আয়োজন করে।  

আমীর খসরু বলেন, “সংস্কারের গল্প বলে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। নতুন নতুন অনেক কথা শুনছি। কখনো বলে আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কখনো বলে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপরে জাতীয় নির্বাচন। আবার শুনি, তারা সংস্কার করে যাবে, শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে। এ সমস্ত কথা বলার সুযোগ নেই। তাদেরকে সেই জায়গায়, সেই দায়িত্ব কেউ দেয়নি।”    

আরো পড়ুন:

ইন্দ্রজিত সাহা
মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প চালু করেছিল বিএনপি সরকার

আ.

লীগের শাসনামলে দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি: দুলু

তিনি আরো বলেন, “বিএনপি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বদ্ধ পরিকর। বিএনপির রাজনীতি এ দেশের মানুষের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকারের একমাত্র দায়িত্ব আগামী দিনে দেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের (অন্তর্বর্তী) যদি সংস্কারের খুব বেশি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা যে কমিশনের রিপোর্টগুলো তৈরি করেছে, সেগুলো আমরা আগামী সংসদে পেশ করতে রাজি আছি। সংসদে আলোচনা করে সবাই মিলে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন সেটা করব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। সংস্কারের ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যাথার প্রয়োজন নেই।”    

নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলোর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ চাই
  • এনসিপির কাছে প্রত্যাশা
  • বিদ্যমান সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না: ফরহাদ মজহার
  • সয়াবিন তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের
  • তারা যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করেনি, তখন খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০
  • তারা যখন সংস্কারের দন্তস্য উচ্চারণ করেননি তখন খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন: বিএনপি
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি বিএনপির, কী আছে বর্ণনায়
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলল বিএনপি
  • বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশটির জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র