খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের দাবি ‘পুরোপুরি মেনে না নেওয়ায়’ উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককেও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠাবেন বলে তাঁরা জানান।

সমাবেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা কেউ নিজেদের নাম ও ব্যাচ বলেননি। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এখন অভিভাবকশূন্য আছি। আমাদের কোনো ভিসি, প্রো-ভিসি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নেই। অভিভাবকশূন্য ক্যাম্পাসে আমরা হলেই অবস্থান করব।’

এর আগে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।

সিন্ডিকেটের সভায় গতকাল মঙ্গলবার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গতকালের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

গতকাল রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; গতকালের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ।

আরও পড়ুনকুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ সব ভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক১৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র জন ত গতক ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীর মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ক্ষোভ

বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। পাশাপাশি এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বকেয়া মজুরির দাবি করতে গিয়ে কর্মচারীর মৃত্যুর দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও হয়রানি ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের সব খাতের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাস পরিশোধ এবং কৃষকের পণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে বেতন–ভাতার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে রাম প্রসাদ সিং (৪০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। রাম প্রসাদ গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেডের সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়েও ন্যূনতম বকেয়া মজুরি ও কারখানা খোলার দাবিতে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের বারবার রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্টাইল ক্রাফটস লিমিটেডের ২৫০ শ্রমিক তাঁদের ১৪ মাসের বকেয়া মজুরি এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে ৫ দিন ধরে ঢাকার বিজয়নগরে অবস্থিত শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে আন্দোলনরত অবস্থায় কোম্পানির একজন কর্মকর্তা স্ট্রোক করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সকাল থেকে টিএনজেড গ্রুপের আ্যাপারেলস ইকো প্লাস লিমিটেডের প্রায় ৭০০ জন শ্রমিক ৩ মাসের বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে অবস্থান করেছেন। এ ছাড়া সিলেটের কালাগুল, বুরজান, ছড়াগানসহ চারটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা ১৪ সপ্তাহ ধরে মজুরি এবং ৮ সপ্তাহ ধরে রেশন পাচ্ছেন না।

চাষিদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, কোল্ডস্টোরেজের মালিকেরা রাতারাতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া দ্বিগুণ করেছেন। ফলে কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখতে পারছেন না কৃষকেরা; বরং উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। টমেটো ও পেঁয়াজচাষিদের ক্ষেত্রে একই রকম ঘটনা দেখা যাচ্ছে। পোশাকশ্রমিক, চা–শ্রমিক, আলু, টমেটো, পেঁয়াজচাষিসহ এই মেহনতি মানুষদের চরম অনিশ্চয়তা ও বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সচিবালয় অভিমুখে আন্দোলনরত শ্রমিকরা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
  • মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীর মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ক্ষোভ