ধর্মস্থান আইন নিয়ে পিটিশন দায়েরের একটি সীমা রয়েছে: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
Published: 19th, February 2025 GMT
ভারতে ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন (প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট) পরিবর্তন করা বা না করা—এই দুইয়ের পক্ষে–বিপক্ষে একাধিক আবেদন সর্বোচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট গত সোমবার বলেন, ধারাবাহিকভাবে এই আইন নিয়ে আবেদন বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের একটি ধর্মস্থান আইনের বৈধতা ও সেই সংক্রান্ত আবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, পিটিশন দায়ের করার একটি সীমা রয়েছে। এটার অবসান হওয়া দরকার। অনেক পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন আইনজীবী বেঞ্চকে এ বিষয়ে নতুন আবেদনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করার পরে দুই সদস্যের বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
ভারতের যেসব আইন নিয়ে এই মুহূর্তে প্রবল বিতর্ক হচ্ছে, সেগুলোর অন্যতম হলো ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলনের পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সরকারের আমলে প্রণীত এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের ধর্মস্থানগুলো যে অবস্থায় ছিল, তাদের সেই অবস্থায় রাখতে হবে। কোনো ধর্মস্থানকে পরিবর্তন বা বিকৃত করা যাবে না। এই আইন থেকে শুধু বাবরি মসজিদকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। যা পরে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করে সেই জায়গায় রামমন্দির গড়ে তুলেছে।
তবে এই আইনের তাৎপর্য হলো, এর ফলে অন্য অসংখ্য মসজিদ, মাজার বা অন্যান্য ধর্মীয় স্থান ভাঙা বা বিকৃত করা যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদন সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে এবং পড়ছে। অন্যদিকে আইনটিকে অবিকৃত রাখতেও একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন আবেদন করেছে। এই আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতেই পিটিশন দায়েরের অবসানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আদালত বলেন, ইতিমধ্যেই গৃহীত আবেদনের ভিত্তিতে আবার শুনানি হবে আগামী এপ্রিলে।
এর মধ্যেই ভারতের একাধিক রাজ্য যেমন আসাম বা উত্তর প্রদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাধিক ধর্মীয় স্থান ভাঙা বা বিকৃত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উত্তর প্রদেশের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে উত্তর প্রদেশের পূর্ব দিকে অবস্থিত কুশিনগরে একটি মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করা হবে না।
ধর্মস্থানবিষয়ক আইন পরিবর্তনের মূল মামলাটি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য ছিল, ‘আমরা আজ উপাসনার স্থান আইনের বিষয়টি নেব না। এটা তিন বিচারপতির বেঞ্চের ব্যাপার। মার্চে এটি তালিকাভুক্ত করতে হবে। এপ্রিলে শুনানি হবে।’
আইনটি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে—আইনটি পরিবর্তন করা হলে ভারতে অরাজকতা সৃষ্টি হবে এবং একাধিক ধর্মস্থান ভেঙে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
আবার আইনটি পরিবর্তনের পক্ষের শক্তি বলেছে, কয়েকটি মসজিদ সরানোর সম্ভাবনা থাকলেও অসংখ্য মসজিদের ওপরে আক্রমণ হবে, এমন ধারণা ভুল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন আইন এক ধ ক ক ত কর মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
১৪ বছরের কম বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করল অস্ট্রিয়া, ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ
অস্ট্রিয়া সরকার ১৪ বছরের কম বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য হিজাব বা স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ সিদ্ধান্তের পর দেশটিতে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। নিন্দা জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
সরকারের দাবি, নতুন এ আইন নারী–পুরুষের সমতার প্রতি তাদের ‘স্পষ্ট অঙ্গীকার’। তবে এর আগে ২০২০ সালে একই ধরনের একটি আইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক বলে অস্ট্রিয়ার সাংবিধানিক আদালত বাতিল করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমুসলিম নারীদের পোশাকেই কেন সরকারি নিয়ন্ত্রণ০৬ অক্টোবর ২০২৩নতুন আইনটি সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আইন ভেঙে মাথা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ মুসলিম পোশাক পরলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৮০০ ইউরো (প্রায় ৯৪০ ডলার) জরিমানা করা হতে পারে।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক উদারপন্থী নিওস দলের সংসদীয় নেতা ইয়ানিক শেটি দাবি করেন, এ আইন কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। তাঁর ভাষায়, ‘এটি এ দেশের মেয়েদের স্বাধীনতা রক্ষার একটি ব্যবস্থা।’
নতুন আইনটি সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আইন ভেঙে মাথা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ মুসলিম পোশাক পরলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৮০০ ইউরো (প্রায় ৯৪০ ডলার) জরিমানা করা হতে পারে।শেটি আরও বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রায় ১২ হাজার শিশু প্রভাবিত হবে। তাঁর দাবি, হিজাব মেয়েদের “যৌনভাবে’ উপস্থাপন করে।
এর আগে ২০১৮ সালে অস্ট্রিয়া সরকার সরকারি স্কুলে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু ২০২০ সালে সেই আইন বাতিল করে দেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত।
এ আইন কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। এটি এ দেশের ‘মেয়েদের স্বাধীনতা রক্ষার’ একটি ব্যবস্থা।ইয়ানিক শেটি, অস্ট্রিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের শরিক নিওস দলের সংসদীয় নেতানতুন এই নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি এ আইনকে ইসলামবিদ্বেষী ও মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদের প্রকাশ বলে আখ্যা দিয়েছে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি এ আইনকে ইসলামবিদ্বেষী ও মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদের প্রকাশ বলে আখ্যা দিয়েছে।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নতুন আইনটি মুসলিম মেয়েদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি করে এবং এটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান পূর্বধারণা ও নেতিবাচক ধারণা আরও উসকে দিতে পারে।
অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটি ইন অস্ট্রিয়া (আইজিজিওই)–ও নতুন এ আইনের নিন্দা জানিয়েছে।
নতুন আইনটি মুসলিম মেয়েদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি করে এবং এটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান পূর্বধারণা ও নেতিবাচক ধারণা আরও উসকে দিতে পারে।আইজিজিওইর সভাপতি উমিত ভুরাল বলেন, ‘রাষ্ট্রস্বীকৃত একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের সদস্যদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। তাই ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে, এমন যেকোনো আইন সাংবিধানিক কি না, তা পর্যালোচনা করানোর ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
উমিত ভুরাল আরও বলেন, ‘শিশুদের প্রয়োজন সুরক্ষা, শিক্ষা ও সচেতনতা—প্রতীকী রাজনীতি নয়। আমরা জবরদস্তি প্রত্যাখ্যান করি। আমরা স্বাধীনতা রক্ষা করি।’
আরও পড়ুনবোরকা, হিজাবে ছাত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট০৯ আগস্ট ২০২৪আরও পড়ুনকর্ণাটকের স্কুল থেকে হিজাব নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে২২ ডিসেম্বর ২০২৩