গোপালগঞ্জে ‘গুরুজনে কর নতি’ ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবা ও শিক্ষকের পা ধুইয়ে দিল তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার কোটালীপাড়া উপজেলার এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় এ ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সন্তানরা তাদের পা ধুইয়ে দেয়। এমন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবাসহ গুরুজনদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা বাড়ার পাশাপাশি আলোকিত জীবন গড়ে উঠবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুল মাঠে চেয়ারে বসে আছেন মা-বাবা আর গুরুজন। তার পাশেই পানি, ফুল, ধুপকাঠি আর মোমবাতি নিয়ে বসে আছে সন্তান। কিছুক্ষণ পরই এক সঙ্গে মা-বাবা আর গুরুজনদের পা ধুয়ে-মুছে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে ফুল ছিটিয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছে সন্তানরা। এমন ভক্তি দেখে মা-বাবার দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। আর মা-বাবাকে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত সন্তানও।

এ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মা-বা, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির প্রায়োগিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি নিবেদনের শপথ গ্রহণ করে। 

গতকাল বিকেলে এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.

সিদ্দিক নুর আলম। এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিদ্যানুরাগী খগেন্দ্র নাথ গাইন, ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি যতীন্দ্র নাথ বল্লভ, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সুনিল চন্দ্র বিশ্বাস বক্তব্য রাখেন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কোয়েল বাইন বলেন, ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় আমাদের গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, জীবনে বড় হতে গেলে গুরুজনদের আশীর্বাদ ও দোয়া প্রয়োজন। তাদের আশীর্বাদ ও দোয়া ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী গৌরি বল্লভ বলেন, ‘এবারই প্রথম এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-বাবা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম। এখন মনে হচ্ছে, আমি মা-বাবা ও শিক্ষকদের কতটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি।’

অভিভাবক দীলিপ কুমার বাইন বলেন, ‘গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে এই ধরণের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধার উন্নতি হবে।

এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈ বলেন, শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শেখাতে এমন আয়োজনের কথা চিন্তা করি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা জাগ্রত করতে আগামীতেও এমন আয়োজনের কথা জানান তিনি।

কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলম বলেন, ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটবে। তারা সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ অন ষ ঠ ন র ম গ র জন

এছাড়াও পড়ুন:

স্মৃতিসৌধে লাল পতাকা হাতে আ.লীগের পক্ষে মিছিল, আটক ৩

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাল পতাকা হাতে একদল লোক আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করেছেন। এসময় উপস্থিত জনতা তাদের ধাওয়া দেয় এবং কয়েক জনকে মারধর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে। 

বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ফিরে যাওয়ার সময় মিছিল করেন তারা। 

হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির জানান, আনুমানিক সকাল ১১টার সময় ৫/৬ জন জাতীয় স্মৃতি সৌধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। এমন অভিযোগে তাদের আশুলিয়া থানা পুলিশ আটক করে। 

আরো পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্বের লড়াই চলমান: বজলুর রশীদ

শ্রদ্ধার ফুলে সিক্ত স্মৃতিসৌধের বেদি

আটককৃতরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা (৪৭), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম (৫০), আশুলিয়ার কলমা এলাকার মো. সোহেল পারভেজ (৪১)।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, লাল পতাকা হাতে অন্তত ৫০ জন লোক সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে মারধর করেন। একপর্যায়ে পুলিশ এসে তিনজনকে আটক করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে যায়।

আটকের পর পুলিশের গাড়িতে অবস্থানকালে আটককৃতদের একজন বলেন, ‍“আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জাতীয় স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের অবদান। তাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলাম।”

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ