বইমেলায় ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
Published: 19th, February 2025 GMT
ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
অমর একুশে বইমেলায় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ।
কথাসাহিত্যিক ও রম্য লেখক এবং রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান, গ্রন্থটির প্রকাশক ও অনার্য পাবলিকেশন্সের সত্ত্বাধিকারী শফিক রহমান, লেখক ও সাংবাদিক হাসান মাহামুদ, কথাসাহিত্যিক সাইফ বরকতুল্লাহ।
আরো পড়ুন:
স্মরণীয় একটি উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখি: মাসউদ আহমাদ
বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ১৩ নতুন বই প্রকাশিত
বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, “বই হচ্ছে একজন লেখকের কাছে সন্তানের মতো। প্রথম সন্তানের জন্মদানের যে আনন্দ, উত্তেজনা, শিহরণ, রোমাঞ্চ, সেটি তুলনাহীন। এই অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছিলাম ১৯৮২ সালে, অনেক আগে, যখন ছাত্র ছিলাম। এই অভিজ্ঞতা ওনার (এস এম জাহিদ হাসানের) হয়েছে আরো পরে, এজন্য ওনার রোমাঞ্চ, আনন্দ আরো বেশি থাকবে।”
হাসান হাফিজ বলেন, “এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে, উনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর লিখেছেন। উনি (‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক) অনেক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মধ্যে আছে, ‘দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপরে, একটি শিশিরবিন্দু’। বইটির পাঠক প্রিয়তা আশা করছি।”
বক্তব্য রাখেন ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক এস এম জাহিদ হাসান
এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের পরিচয়। সংস্কৃতি, ঐতিহ্যই বলে দেয় আমরা কে, কোথায় ছিলাম, কোন দিকে যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। বড় হয়ে বই পড়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান, স্থাপনা ও গুণী ব্যক্তিদের আরো বিশদে জানার চেষ্টা করেছি। যত জেনেছি তাদের প্রতি তত ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্মেছে। চলার পথে যেখানেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের খোঁজ পেয়েছি, সেখানেই ছুটে গিয়েছি দেখার জন্য। এসব স্থাপনার সৌন্দর্য, গাম্ভীর্য আমাকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু যখন দেখেছি অনেক স্থাপনা সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। ব্যক্তিগত ভালোলাগা, দায়বোধ আর পাঠককে জানানোর ইচ্ছা থেকে এসব স্থাপনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতিধন্য স্থান সম্পর্কে লিখেছি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য, স্থাপনা সম্পর্কে আমাদের দেখা সৌন্দর্য আর অনুভূতির আলোটুকু পাঠকের মনে ছড়িয়ে পড়ুক, এইটুকুই প্রত্যাশা।’’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক নেতা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, সাংবাদিক নুরুজ্জামান তানিম, নাজমুল হোসেন ফারুক, আসাদ আল মাহমুদ প্রমুখ।
‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ
‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থে উঠে এসেছে বাংলার সংস্কৃতি, গৌরবময় ঐতিহ্য আর বিশেষ ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিধন্য সব স্থানের সর্বশেষ পরিস্থিতি। জাহ্নবী চৌধুরানীর সন্তোষ ভাসানীর গল্প বলে, আশি দুয়ারী বাড়িতে একজন মানুষও নেই!, বাড়ির নাম ‘উত্তর তরফ’, দিগন্ত বিস্তৃত মিঠামইন, এগারোসিন্দুর পাড়ে, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, চিত্র পাড়ে সুলতানের নাও-সহ মোট ২৮টি ভ্রমণগদ্য।
প্রকাশক: অনার্য
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
মূল্য: ৩০০ টাকা
স্টল নম্বর: ৩০৪-৩০৭
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম বইম ল অন ষ ঠ ন পথ র ব
এছাড়াও পড়ুন:
তরুণেরা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা
তরুণেরা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক–২০২৫ প্রদান উপলক্ষে এক ভাষণে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমরা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী এবং সৃজনশীল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যে কোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চাইতে দুঃসাহসী। তারা যেমন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়, তেমনি একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবীর সৃষ্টি করতে চায়। নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত।’’
‘‘তারা (তরুণেরা) ঘুনে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সকল সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল সুযোগ নিশ্চিত করা, মানুষের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনো রকম বিঘ্নিত না-হয় এবং পৃথিবীর ওপর বসবাসরত সকল প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো ক্রমেই বিঘ্নিত না হয়।’’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপনের স্মরণীয় দিনে আমরা তরুণদের এই স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এই কামনা করছি। দেশের ভবিষ্যৎ রচনায় পথ দেখিয়ে যারা আজ জাতির পক্ষ থেকে স্বীকৃতি পেলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং তাদেরকে আবারো অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’
‘‘দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যারা আজ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন তাদের দেশবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথ প্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।’’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে সুযোগ এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণের। আজ এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দেশমাতৃকার জন্য বিভিন্ন লড়াই-সংগ্রাম, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যে সকল সাহসী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সকলকে।’’
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।’’
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ বছর শিল্পকলায় পাঁচজন, সাংবাদিকতায় একজন, সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে একজন, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় একজন, শিক্ষায় একজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দলগতভাবে চারজন, সমাজসেবায় একজন, ভাষা ও সাহিত্যে দুজন, গবেষণায় একজন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে জাতীয় নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে।
শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে পদক পাওয়া পাঁচজন হলেন- চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) এবং ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা। আজিজুর রহমানের পক্ষে তার কন্যা আলিয়া রহমান বিন্দি ও নিরোধ বরণ বড়ুয়ার মেয়ে শিল্পী ফাল্গুনী বড়ুয়া পদক গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকতায় এবার একুশে পদক পেয়েছেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর)। তার পক্ষে পদক নেন তার স্ত্রী। সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে পদক পেয়েছেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এছাড়া সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন বিশিষ্ট তিনজন। ভাষা ও সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন কবি হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) এবং শহীদুল জহির (মরণোত্তর)। হেলাল হাফিজের পক্ষে তার বড় ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ এবং শহীদুল জহিরের পক্ষে তার বড় ভাই হাবিবুল হকের কাছে পদক হস্তান্তর করা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দলগতভাবে একুশে পদক পেয়েছেন মেহেদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা।
গবেষণায় মঈদুল হাসান একুশে পদক পেয়েছেন। এছাড়া ক্রীড়াক্ষেত্রে একুশে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। জাতীয় নারী ফুটবল দলের পক্ষে দলনেতা সাবিনা খাতুন ও সহযোগী দলনেতা মারিয়া মান্দা পদক গ্রহণ করেন।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ঢাকা/হাসান//