সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে ছোলা ও খেজুর খেতে পছন্দ করেন মুসল্লিরা। ইফতারের অন্যতম এই দুই খাবারের দামে সুখবর রয়েছে ভোক্তাদের জন্য। সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়া, চাহিদার বিপরীতে বেশি আমদানি এবং সরকারের বিশেষ শুল্ক সুবিধার কারণে ছোলা ও খেজুর বিগত বছরের চেয়ে অনেক কমদামে কেনার সুযোগ মিলবে এবছর।

খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে এবার কেজিতে প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে পাওয়া যাবে। ছোলার দাম গত বছরের চেয়ে কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা কমে কেনার সুযোগ পাবেন ভোক্তারা। 

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চলতি বছর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় এবারের রমজানে এই দুটি খাদ্য পণ্যের দাম কমছে। 

আরো পড়ুন:

ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত

রমজানে পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ব্যবসায়ীরা জানান, আগে সিন্ডিকেট করে নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী ছোলা ও খেজুর আমদানি করার সুযোগ পেতেন। এই বছর কোনো সিন্ডিকেট নেই। অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী ছোলা ও খেজুরসহ রমজানে প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আমদানি করেছেন। বিশ্ব বাজারে ছোলার দামও তুলনামূলক কম। ফলে এবারের রমজানে ছোলার বাজারে স্বস্তি থাকছে। 

ছোলা আমদানি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড.

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “চাহিদার তুলনায় এই বছর অনেক বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। আসন্ন রমজানে সারাদেশে ছোলার চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার মেট্রিক টন। পুরো বছরে ছোলার চাহিদা সর্বোচ্চ দেড়লাখ টন। এর বিপরীতে চলতি অর্থ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ টন। যা চাহিদার বিপরীতে ১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। ফলে এবারে ছোলার দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই।” 

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ছোলা বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার ছোলার সরবরাহ বেশি। বন্দর থেকে অব্যাহতভাবে ছোলা খালাস হচ্ছে। গত বছরের তুলানায় এই বছর ছোলার দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কম। দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” 

নগরীর বহদ্দার হাট কাঁচা বাজারের খুচরা ছোলা বিক্রেতার তোফাজ্জল আহাম্মেদ বলেন, “এবছর ছোলার দাম বাড়েনি। বরং কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মান ভেদে গতবছর যে ছোলা ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই ছোলা এখন ১০৫ টাকা। এ ছাড়া সর্বনিম্ন ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরেও ছোলা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে দাম আরও কিছুটা কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।” 

এদিকে, ছোলার দামের পাশাপাশি রমজানে ইফতারে প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামেও এবছর সুখবর থাকছে ভোক্তাদের জন্য। আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়া এবং সরকারি সিদ্ধান্তে খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ও শুল্ক কমানোর ফলে মান ভেদে খেজুরের দাম সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। 

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারি বাজার ফলমণ্ডি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবের যে মাবরুম খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৬০০ টাকা কেজি দরে, সেই খেজুর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কমে ১২০০ টাকা কেজি দরে। সৌদি আজওয়া খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। এই বছর সেই খেজুরের দাম ৮০০ টাকা কেজি। সবচেয়ে কম দামের যে নরম খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, সেই খেজুর এই বছর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। 

চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক মায়েদা ডেটস-এর কর্ণধার মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খেজুর আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়েছে। এছাড়া কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারন করেছে। কমানো হয়েছে খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু। এর ফলে এই বছর খেজুর আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজারে দাম কমেছে।” 

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) পরিসংখ্যান মতে, পবিত্র রমজানে সারা দেশে খেজুরের চাহিদা থাকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন খেজুর। যা চাহিদার চেয়ে অন্তত ৪ হাজার টন বেশি। এছাড়া পাইপলাইনে আরো খেজুর আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানির ফলে এ বছর খেজুরের দাম বৃদ্ধির কোনো শঙ্কা নেই। গত বছরের চেয়ে এই বছর অনেক কম দামেই রোজাদাররা খেজুর কেনার সুযোগ পাবেন বলে আমদানিকারক ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন আমদ ন গত বছর র চ য় খ জ র আমদ ন বছর ব ক র র ব পর ত এই বছর ১৫ ট ক রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাইকার সঙ্গে ৬৭০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি- জাইকা। চুক্তির আওতায় জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) ঋণের মাধ্যমে ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ও মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্পের (অষ্টম কিস্তি) জন্য সবমিলিয়ে ৮৫ হাজার ৮১৯ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন দেওয়া হবে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।  

জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয় মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমাহিদে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি।

ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় একটি ফুড সেফটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ভবন, খাদ্য পরীক্ষাগার কক্ষ, প্রশিক্ষণ ভবন, অফিস ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে খাদ্য নিরাপত্তা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে যৌথভাবে কাজ করবে জাইকা এবং  বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ প্রকল্পের ঋণের সুদের হার নির্মাণ কাজের জন্য ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও পরামর্শক সেবার জন্য শুন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছরের প্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছর।

মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্পের আওতায় ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, সড়ক ও সেতু। এ প্রকল্পের অষ্টম কিস্তির হার নির্মাণ কাজ ও যন্ত্রপাতির জন্য ১ দশমকি ৯৫ শতাংশ ও পরামর্শক সেবার জন্য শুন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছর। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ