আমাদানি বেশি, রমজানে কম দামে মিলবে ছোলা-খেজুর
Published: 19th, February 2025 GMT
সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে ছোলা ও খেজুর খেতে পছন্দ করেন মুসল্লিরা। ইফতারের অন্যতম এই দুই খাবারের দামে সুখবর রয়েছে ভোক্তাদের জন্য। সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়া, চাহিদার বিপরীতে বেশি আমদানি এবং সরকারের বিশেষ শুল্ক সুবিধার কারণে ছোলা ও খেজুর বিগত বছরের চেয়ে অনেক কমদামে কেনার সুযোগ মিলবে এবছর।
খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে এবার কেজিতে প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে পাওয়া যাবে। ছোলার দাম গত বছরের চেয়ে কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা কমে কেনার সুযোগ পাবেন ভোক্তারা।
দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চলতি বছর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় এবারের রমজানে এই দুটি খাদ্য পণ্যের দাম কমছে।
আরো পড়ুন:
ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত
রমজানে পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ব্যবসায়ীরা জানান, আগে সিন্ডিকেট করে নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী ছোলা ও খেজুর আমদানি করার সুযোগ পেতেন। এই বছর কোনো সিন্ডিকেট নেই। অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী ছোলা ও খেজুরসহ রমজানে প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আমদানি করেছেন। বিশ্ব বাজারে ছোলার দামও তুলনামূলক কম। ফলে এবারের রমজানে ছোলার বাজারে স্বস্তি থাকছে।
ছোলা আমদানি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড.
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ছোলা বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার ছোলার সরবরাহ বেশি। বন্দর থেকে অব্যাহতভাবে ছোলা খালাস হচ্ছে। গত বছরের তুলানায় এই বছর ছোলার দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কম। দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
নগরীর বহদ্দার হাট কাঁচা বাজারের খুচরা ছোলা বিক্রেতার তোফাজ্জল আহাম্মেদ বলেন, “এবছর ছোলার দাম বাড়েনি। বরং কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মান ভেদে গতবছর যে ছোলা ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই ছোলা এখন ১০৫ টাকা। এ ছাড়া সর্বনিম্ন ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরেও ছোলা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে দাম আরও কিছুটা কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।”
এদিকে, ছোলার দামের পাশাপাশি রমজানে ইফতারে প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামেও এবছর সুখবর থাকছে ভোক্তাদের জন্য। আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়া এবং সরকারি সিদ্ধান্তে খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ও শুল্ক কমানোর ফলে মান ভেদে খেজুরের দাম সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারি বাজার ফলমণ্ডি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবের যে মাবরুম খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৬০০ টাকা কেজি দরে, সেই খেজুর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কমে ১২০০ টাকা কেজি দরে। সৌদি আজওয়া খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। এই বছর সেই খেজুরের দাম ৮০০ টাকা কেজি। সবচেয়ে কম দামের যে নরম খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, সেই খেজুর এই বছর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে।
চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক মায়েদা ডেটস-এর কর্ণধার মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খেজুর আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়েছে। এছাড়া কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারন করেছে। কমানো হয়েছে খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু। এর ফলে এই বছর খেজুর আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজারে দাম কমেছে।”
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) পরিসংখ্যান মতে, পবিত্র রমজানে সারা দেশে খেজুরের চাহিদা থাকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন খেজুর। যা চাহিদার চেয়ে অন্তত ৪ হাজার টন বেশি। এছাড়া পাইপলাইনে আরো খেজুর আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানির ফলে এ বছর খেজুরের দাম বৃদ্ধির কোনো শঙ্কা নেই। গত বছরের চেয়ে এই বছর অনেক কম দামেই রোজাদাররা খেজুর কেনার সুযোগ পাবেন বলে আমদানিকারক ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন আমদ ন গত বছর র চ য় খ জ র আমদ ন বছর ব ক র র ব পর ত এই বছর ১৫ ট ক রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শুরু হচ্ছে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা, খুশি জেলেরা
ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য ২০১৫ সাল হতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে সরকার। ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় এ অবরোধের বিরোধিতা করে আসছিলেন জেলেরা।
প্রতিবেশী জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে পালন করেন সময়সীমা কমিয়ে পেছানোর জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। তাই জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
অবরোধের সময়সীমা কমিয়ে পুনর্বিন্যাস করায় উচ্ছ্বসিত রয়েছেন জেলেরা। তাই এ অবরোধকে স্বাগত জানিয়ে ইতোমধ্যে অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে থেকে তীরে ফিরেছেন। এছাড়া এখনো যে সকল জেলেরা গভীর সমুদ্রে রয়েছেন তারা ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে তীরে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা। তবে অবরোকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদেয় প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো, নিষেধাজ্ঞা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনা প্রদানের এবং সাগরে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।
মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলে আমির হোসেন বলেন, “২০১৫ সাল থেকে ৬৫ দিনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে সরকার। এ সময় ভারতের অবরোধ না থাকায় তারা আমাদের দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যেত। অবরোধের পর সম গভীর সমুদ্রে গিয়ে আমরা ফিরতাম খালি হাতে। আমরা শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছি। তবে এবছর সরকার সময়সীমা এক সপ্তাহ কমিয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে। এতে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি অবরোধের পর আমাদের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের যেন অবরোধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেওয়া হয়।”
লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব জেলে মোসলেম মিয়া বলেন, “আমরা শুনেছি এই ৫৮ দিনে মাত্র ৭৭ কেজি করে চাল পাবো। আমার পরিবার ছয় সদস্যের। এ চাল আসলে অপ্রতুল। তাই সরকারে কাছে অনুরোধ আমাদের যেন চালের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অনেক সময় প্রকৃত জেলেরা চাল পায় না। আমরা যারা নিবন্ধিত জেলে রয়েছি আমরা যেন চাল পাই, সে ব্যবস্থা যেন করা হয়।”
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “জেলায় প্রায় ৮১ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ৪৭ হাজার। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে প্রত্যেক জেলেকে ৭৭ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। এছাড়া অবরোধ শতভাগ সফল করতে আমাদের প্রচারণা চলছে। অবরোধকালীন সময়ে সমুদ্রে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ টহল পরিচালনা করবেন।”
ঢাকা/ইমরান/টিপু