অস্ট্রেলিয়ায় দুই মুসলিমকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ
Published: 19th, February 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ গত সপ্তাহে মেলবোর্নের একটি শপিং সেন্টারে দুই মুসলিম নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ৩১ বছর বয়সী এক নারীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মেলবোর্নের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসকো ভ্যালের ওই নারীকে বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই ভুক্তভোগীকে তাদের মাথা ঢাকা পোশাকের কারণে হামলা করেছিলেন।
আরো পড়ুন:
সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ডুবে হোয়াইটওয়াশ অস্ট্রেলিয়া
এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে সরে দাঁড়ালেন স্টার্ক
তার বিরুদ্ধে এপিং শপিং সেন্টারে হিজাব পরিহিত ৩০ বছর বয়সী এক গর্ভবতী নারীকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা এবং এর ১০ মিনিট পর হিজাব পরিহিত ২৬ বছর বয়সী আরেক নারীকে ধাক্কা ও চড় মারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি-বিরোধী একাধিক হামলার পর, দেশটির সরকার ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর নতুন আইন পাস করার দুই সপ্তাহ পর এটি ঘটল।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই ঘটনাকে ‘নিন্দনীয়’ বলে নিন্দা করেছেন। তিনি এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, তার সরকার মুসলিম-বিরোধী হামলার ঘটনাগুলোকে ইহুদি-বিরোধী হামলার তুলনায় কম গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষের ওপর সব হামলাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিই এবং তাদের সকলেরই আইনের পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত।”
গতকাল মঙ্গলবার, অস্ট্রেলিয়ার ইসলামোফোবিক বিরোধী সংগঠনের মুখপাত্র আফতাব মালিক দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন এবিসি নিউজকে বলেছেন, “সকল ধরনের ঘৃণা বন্ধ করা উচিত এবং দেশটির নেতাদের মেলবোর্নে এই ঘটনার নিন্দা জানানো উচিত।”
চলতি সপ্তাহের শুরুতে, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের সভাপতি রাতেব জেনেইড দেশটিতে মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সরকারের প্রতিক্রিয়াকে ‘খুব অপর্যাপ্ত’ বলে অভিহিত করেন।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার ফেব্রুয়ারির শুরুতে পাস হওয়া নতুন আইনগুলোকে ‘ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর আইন’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
নাৎসি স্যালুটের মতো ঘৃণার প্রতীক ব্যবহারের জন্য এক থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান রাখা রয়েছে।
ইহুদির ওপর হামলা দেশটিতে তীব্র বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠার পর আইন সংস্কার করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে, ইসরায়েলি রোগীদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশের অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী
পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।
তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।
তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।
শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।
পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।