মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প চালু করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পাবনা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়ার ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিত সাহা।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাবনা পৌর সদরের শালগাড়িয়ায় শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, “বিএনপি সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। মন্দিরভিত্তিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। বিএনপি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় রোজা ও পূজা একসঙ্গে হয়েছে, কখনো হাঙ্গা-দাঙ্গামার সৃষ্টি হয়নি।”

আরো পড়ুন:

আ.

লীগের শাসনামলে দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি: দুলু

ইউপি নির্বাচন আগে হলে আ.লীগ ঢুকে পড়বে : টুকু

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও হিন্দু ট্রাস্টির পাবনা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মলয় কুমার দাস রায়, পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার জিতু, পাবনা সংবাদপত্র মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আদনান উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাবেক সভাপতি শুভ মজুমদার।

মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পাবনার সহকারী প্রকল্প পরিচালক নিরুপম ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে পাঁচজন শিক্ষক ও পাঁচজন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা স্মারক এবং অন্যদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ও গণশ ক ষ অন ষ ঠ ন মন দ র সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

অনেক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা এখনো বাকি

সরকার নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তৈরি পোশাকশিল্পের অনেক কারখানা এখনো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি। তবে আন্দোলনে থাকা ছয় কারখানার শ্রমিকের পাওনার একটা অংশ পরিশোধের ব্যবস্থা হয়েছে, এমনটা জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার দপ্তর।

শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, গতকাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ১৯ শতাংশ কারখানা ঈদের বোনাস এবং ৭৯ শতাংশ কারখানা মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। যদিও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানার বোনাস দেওয়া শেষ। আর নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, ৮০ শতাংশ কারখানা বোনাস দিয়েছে। উভয় সংগঠনের দাবি, আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার সব কারখানা বেতন-বোনাস দেবে।

বকেয়া বেতন-বোনাস ও অন্যান্য পাওনার দাবিতে গতকাল পঞ্চম দিনের মতো শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল প্লাস ইকো, টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস ও অ্যাপারেল আর্ট কারখানার শ্রমিকেরা। পাশাপাশি স্টাইল ক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স কারখানার শ্রমিকেরাও ক্ষতিপূরণের দাবিতে অবস্থান করেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার দপ্তর গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস ইকো লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে। স্টাইলক্রাফট এবং ইয়াং ওয়ান্সের বকেয়া ক্ষতিপূরণ দিতে শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। সভায় শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।

এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বন্ধ থাকা গাজীপুরের মাহমুদ গ্রুপ ও ময়মনসিংহের ভালুকার রোর ফ্যাশনের শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মাহমুদ গ্রুপের দুটি কারখানার শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ সহায়তার ১১ কোটি টাকা ছাড় করেছে। রোর ফ্যাশনের মালিক পলাতক থাকায় শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল প্লাস ইকোর শ্রমিক রেখা আক্তার মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা এখনো পাওনা বুঝে পাননি। যতক্ষণ তাঁরা বকেয়া পাবেন না, ততক্ষণ শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করবেন। তিনি জানান, গত জানুয়ারি মাসের আংশিক বেতনের পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ (অর্ধেক) মাসের বেতন, ঈদ বোনাস এবং দুই বছরের ছুটির টাকা তাদের পাওনা রয়েছে। ২২ মার্চ পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেছেন শ্রমিকেরা।

একাধিক শ্রমিকনেতা বলেন, ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে পোশাকশ্রমিকের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানায় সমস্যা তুলনামূলক কম হলেও সাব কন্ট্রাকটিং বা ঠিকায় কাজ করে, এমন ছোট ছোট কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধের অবস্থা নাজুক। বেশির ভাগই ৫০০-১০০ টাকা ঈদ বোনাস দিচ্ছে। মার্চের বেতন না দেওয়ার কারখানার সংখ্যাই বেশি। এসব কারখানা নজরদারি করার দায়িত্ব সরকারের।

ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতির পাশাপাশি শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ছুটি-সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। মালিকপক্ষকে চলতি মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতনও দিতে হবে। ঈদ সামনে রেখে প্রণোদনা বাবদ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার।

পোশাকশিল্পের বেতন-ভাতা পরিস্থিতি

ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) ডিজিটাল মানচিত্র অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা আছে ৩ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। বিকেএমইএর সচল সদস্য কারখানা ৬১৩টি।

বিজিএমইএ দাবি করেছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত শ্রমিকের ঈদ বোনাস দিয়েছে। আর মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৮৩ শতাংশ কারখানা। এখন পর্যন্ত ১০টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেয়নি।

যদিও বিজিএমইএর ১ হাজার ৫৫৫ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলছে, প্রায় ১৬ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত বোনাস দেয়নি। বেতন বকেয়া আছে ৮০ শতাংশ কারখানার।

শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান সঠিক নয় উল্লেখ করে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাল (আজ) শুক্রবার ও পরশু (কাল) শনিবার সব কারখানা মার্চের অর্ধেক বেতন দিয়ে ছুটি দেবে। আপাতত বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো সংকট নেই। বন্ধ কারখানাগুলোর সমস্যাও সমাধান করা হয়েছে।

বিকেএমইএ দাবি করেছে, ৪৯০ কারখানা গতকাল পর্যন্ত শ্রমিকের বোনাস পরিশোধ করেছে। আর মার্চের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেছে ৩৬৭ কারখানা। অবশ্য বিকেএমইএর ৫৮১ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলছে, ৯০ শতাংশ কারখানার বেতন এখনো বাকি। বোনাস দিয়েছে ৩৪ শতাংশ কারখানা।

শিল্প পুলিশের তথ্য ঠিক নয় বলে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা ছিল। কয়েকজন মালিক মিলে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে কারখানাটির সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। কাল-পরশুর (আজ ও কাল) মধ্যে সব কারখানা বেতন-ভাতা দিয়ে শ্রমিকদের ছুটি দেবে।

পিছিয়ে অন্য শিল্পকারখানাও

তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে অন্য শিল্পকারখানার বেতন–ভাতা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে শিল্প পুলিশ। সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৬ হাজার ৮০৫ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলেছে, ১ হাজার ৯২৪ বা ২৮ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত ঈদ বোনাস দেয়নি। এখনো মার্চের বেতন দেয়নি ৪ হাজার ৯৪২টি বা ৭৩ শতাংশ কারখানা।

জানতে চাইলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় ভরপুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। এরপরও বেতন-ভাতা নিয়ে যা হচ্ছে, তা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে ঈদের আগে তৈরি পোশাকসহ অন্য খাতের শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো কারখানার মালিক সময়মতো শ্রমিকের বেতন-ভাতা না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ