২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ বুধবার রায়ের এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। 

এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, ২৭তম বিসিএসে ফল প্রকাশের পর সেটি ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন সেনাশাসিত সরকার বাতিল করে দিয়েছিল। তারা দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এই ক্ষমতা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছিল না। এমনকি দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি পিএসসি আইন ও বিধিতে নেই। বিষয়টি আপিল বিভাগের শুনানিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপি সরকারের আমলে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। পরে ওই বছরের ৩০ জুন জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ওই ফল বাতিল করে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার। এরপর মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট করেন উত্তীর্ণরা। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন রিটকারীরা। 

অন্যদিকে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ২৭তম বিসিএসের দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফল অনুযায়ী দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩২২৯ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরে হাইকোর্টে তিন রিট দায়ের করেন প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ওই তিনটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। যা কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন বাতিল হওয়া ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণরা। ৭ নভেম্বর রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করে তা শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে প্রথম পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত রিভিউ আবেদনকারীদের আইনি লড়াইয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। আজ ওই আবেদনের শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স এস আপ ল র ম খ ক পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য় সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের যেভাবে ট্রাম্পের শুল্কের জবাব দেওয়া উচিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন তাঁর ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে ১৮০টির বেশি দেশের আমদানির ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন, সেই দিনটি একটি মনুষ্যসৃষ্ট অর্থনৈতিক সুনামির সূচনার দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

অনেকেই ইতিমধ্যে এ ঘটনাকে ১৯৩০ সালের প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারের স্মুট-হাওলি ট্যারিফ আইনের সঙ্গে তুলনা করছেন, যা কি না পাঁচ বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৬৬ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল এবং বিশ্বমন্দাকে আরও তীব্র করে তুলেছিল। ট্রাম্পের শুল্ক (যার অধিকাংশ হঠাৎই ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) আর্থিক বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের মন্দার কবলে পড়তে পারে।

এ অবস্থায় অন্য অর্থনীতিগুলোর কী করা উচিত? চীন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজেদের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক দেশ হিসেবে চীনের প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ট্রাম্প প্রায় সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, তবু চীন স্পষ্টভাবে তার প্রধান লক্ষ্য। 

শুধু শুল্ক নয়, চীনের নীতিনির্ধারকদের আরও তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দুই বছর দুর্বল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের পর সেপ্টেম্বর মাসে সরকার আরও আক্রমণাত্মক মুদ্রানীতির পথে হেঁটেছে। ফলে ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

ট্রাম্পের প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধের সময় যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা গিয়েছিল, এবারও ঠিক তা–ই হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ বৃদ্ধির পর নতুন করে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চীনও একই হারে পাল্টা শুল্ক বসায় এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নতুন ব্যবস্থা নেয়। এরপর ট্রাম্প আবার শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করেন, জবাবে চীন তার শুল্ক ৮৪ শতাংশে উন্নীত করে। এরপর ট্রাম্প আবারও বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেন, এরপর আরও বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করেছেন। 

চীনা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কীভাবে এই শুল্কের জবাব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো ধরনের ছাড় দিলে আরও আগ্রাসন বাড়বে। চীনের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্তও এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তবু আশা করা যায়, উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজে পাবে।

শুধু শুল্ক নয়, চীনের নীতিনির্ধারকদের আরও তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দুই বছর দুর্বল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের পর সেপ্টেম্বর মাসে সরকার আরও আক্রমণাত্মক মুদ্রানীতির পথে হেঁটেছে। ফলে ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক চীনের ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং ২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে কঠিন করে তুলতে পারে। রপ্তানি হ্রাস পেলে সামগ্রিক চাহিদা কমে যাবে, শিল্প খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন আরও বাড়বে এবং মূল্য পতনের চাপ তীব্রতর হতে পারে। এসব সম্ভাব্য প্রভাবের কথা মাথায় রেখে চীনের নীতিনির্ধারকদের সাহসী ও লক্ষ্যভিত্তিক মুদ্রানীতি নিতে হবে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার উচিত হবে সুদের হার ও ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ অনুপাত আরও কমিয়ে মুদ্রানীতিকে আরও শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া। 

আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কাঘাত মোকাবিলায় আসিয়ানের যা করা উচিত১৯ ঘণ্টা আগে

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক চীনের অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে, বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে। বর্তমানে চীনের ভোগ ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র প্রায় ৫৬ শতাংশ, যা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। এ কারণে চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে। চলতি বছরের মার্চে সরকার নতুন একটি ‘বিশেষ উদ্যোগ’ চালু করেছে, যার লক্ষ্য ভোগ ব্যয় বাড়ানো। তবে এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেয়ে স্বভাবতই কঠিন। কারণ, ঘরোয়া ব্যয় অনেকটাই নির্ভর করে মানুষের আয় ও আস্থার ওপর, আর এ দুটি বিষয়ই সময় নিয়ে বাড়ে। 

সবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের এই দুঃখজনক রূপে আত্মকেন্দ্রিক নীতির কারণে বিশ্বনেতৃত্বে একধরনের শূন্যতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক দশকে বহু দেশ (বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায়) উন্মুক্ত বাজারব্যবস্থার সুফল ভোগ করেছে। এখন চীনের উচিত এসব দেশের সঙ্গে এককভাবে ও যৌথভাবে কাজ করে এ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা এবং মুক্তবাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা।

গত এক বছরে চীন আন্তর্জাতিক বিনিময় সহজ করতে একতরফাভাবে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ডেনমার্ক, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ চালু করা। এমন উদ্যোগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।

স্বস্তির বিষয় হলো, এই তিন ক্ষেত্রে চীনা নীতিনির্ধারকেরা ইতিমধ্যে কিছু অগ্রগতি দেখিয়েছেন। এখন বিশ্ব একটি নতুন উন্নয়ন পর্যায়ে প্রবেশ করছে, আর এই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে প্রথমে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া; তারপর বৈশ্বিক অর্থনীতি রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া।

হুয়াং ইপিং পিকিং ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের ডিন ও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার আর্থিক নীতি কমিটির সদস্য

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগদান সারলেন ঋতাভরী
  •  শৈশবে নিয়ে গেল যৌবনের দিন
  • মোহামেডানের হোঁচটের দিনে আবাহনীর জয় 
  • হ্যাটট্রিক জয়ের পর মিলল হারের স্বাদ
  • দুই কার্গো এলএনজি কেনায় ব্যয় ১১৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা
  • ‘ফেসবুক গল্পের’ উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা
  • শারমিন-ফারজানায় টাইগ্রেসদের চ্যালেঞ্জিং স্কোর
  • মোটরসাইকেলের জন্য ডেকে নিয়ে হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
  • ২ উইকেটে ১৩৪ থেকে ২২৭ রানে থামলো বাংলাদেশ 
  • চীনের যেভাবে ট্রাম্পের শুল্কের জবাব দেওয়া উচিত