গাছের মর্যাদা নির্ধারণের আবেদন আহ্বান বন অধিদপ্তরের
Published: 19th, February 2025 GMT
সারাদেশে বিশেষ ধরনের গাছ ও বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এ লক্ষ্যে, জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ, প্রাচীন বৃক্ষ এবং কুঞ্জবন ঘোষণার আবেদন আহ্বান জানানিয়েছে বন অধিদপ্তর।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১) অনুযায়ী এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সম্ভব হলে বৃক্ষ বা কুঞ্জবনের স্পষ্ট ছবিসহ আবেদন আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে [email protected] ইমেইলে পাঠানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।“
ডাকে আবেদন পাঠানোর ঠিকানা: প্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর, বন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭ ।
• ‘স্মারক বৃক্ষ’ হল যে সব গাছের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত মূল্য রয়েছে এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ বা পুরাতন বয়স্ক দেশীয় উদ্ভিদ বা শতবর্ষী বৃক্ষকে বলা হচ্ছে ‘স্মারক বৃক্ষ’।
• কোনো ধর্ম ও গোত্রের জনগোষ্ঠীর কাছে ধর্মীয় পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে স্বীকৃত কোন বৃক্ষকে ‘পবিত্র বৃক্ষ’ বোঝান হয়।
• ‘কুঞ্জবন’ হল কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও লতাগুল্মের সমাহার, যা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও প্রথাগত মূল্যবোধ রয়েছে।
এছাড়াও সংরক্ষণের স্বার্থে ৫০ বছর বা এর চেয়েও বেশি বয়সী গাছের তালিকা সরকার প্রস্তুত করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে।
স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ, প্রাচীন গাছ বা কুঞ্জবন চিহ্নিত করার নিয়মাবলী
১.
২. এলাকার নাম: গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা।
৩. কোনো হাওর-জলাভূমি, বনভূমি, পাহাড়ে অবস্থিত হলে তার নাম।
৪. ক্যাটাগরি: স্মারক বৃক্ষ/পবিত্র বৃক্ষ/প্রাচীন বা শতবর্ষী বৃক্ষ/ কুঞ্জবন।
৫. বৃক্ষ/কুঞ্জবনের আনুমানিক বয়স।
৬. যে বা যারা সংরক্ষণ করছেন তার/তাদের নাম।
৭. স্মারক বৃক্ষ/পবিত্র বৃক্ষ/প্রাচীন বা শতবর্ষী বৃক্ষ/ কুঞ্জবন হলে তার কারণ।
৮. বৃক্ষ/কুঞ্জবনের মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য।
৯. বৃক্ষটি/কুঞ্জবন সংরক্ষণ বা টিকে থাকার জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ/সমস্যা থাকলে সেটি উল্লেখ করা।
প্রস্তাবকারীর নাম, যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্যসহ আবেদন পাঠানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে বন অধিদপ্তর।
জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ, প্রাচীন বৃক্ষ এবং কুঞ্জবন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষকের টেলিফোন নম্বর: ৫৫০০৭১১১ এ যোগাযোগ করা যেতে পারে বলেও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বৈশাখে শতবর্ষীয় বাঁশির সুর বাজে যে গ্রামে
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দী গ্রামে বৈশাখের আগমনে এক অনন্য উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বাঁশি তৈরির প্রাচীন শিল্প এখানে এখনো জীবন্ত, যা গ্রামবাসীর মুখে হাসি ও শহরের মেলায় সুরের ছোঁয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে।
শ্রীমদ্দী গ্রামে প্রায় ১২০টি পরিবার বাঁশি তৈরির কাজে জড়িত। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারিগররা বাঁশ সংগ্রহ, ছিদ্র করা এবং রঙিন সাজসজ্জার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
স্থানীয় কারিগরদের মতে, এই প্রাচীন শিল্প কেবল একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া নয় বরং এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক শিকড়ের এবং আত্মার গভীর প্রতিফলন।
গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ বাঁশিশিল্পী আমির হোসেন (৬৫) তিনি বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন বাঁশি তৈরি করতেন, তখন এতে কেবল কারিগরি দক্ষতা নয়, আত্মার এক গভীর প্রেরণা ছিল। বৈশাখের আগমন ঘটতেই চাহিদা বেড়ে যায়। এক মাস ধরে চলা এই কার্যক্রমের মধ্যে দেশে নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাঁশি সংগ্রহ করে।”
এদিকে পরম্পরাগতভাবে পুরুষদের শিল্প মনে হলেও, শ্রীমদ্দীতে নারীরাও সমানভাবে অংশ নেয়।
গ্রামের গৃহবধূ রাহেলা খাতুন বলেন, “ঘরের কাজ শেষে আমরা মেয়েরা বসে বাঁশিকে সাজাই। প্রত্যেকটি বাঁশি যেন আলাদা এক গল্প বলে। আমাদের তৈরি বাঁশি এখন শহরের বড় মেলায় পৌঁছে যায়।”
নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গ্রামটি বৈশাখের আগমনে নতুন সুরে মাখিয়ে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক বৈশাখ আসলে শ্রীমদ্দীর বাঁশির চাহিদা বহুগুণে বেড়ে যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মেলায় এই বাঁশি জনপ্রিয় হস্তশিল্প হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা মূল্যের বাঁশি বিক্রি করা হয়।
এই সাথে বর্তমান তরুণরা ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন। ইউটিউব, ফেসবুক ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে শ্রীমদ্দীর বাঁশির ইতিহাস এবং কারিগরি প্রচার হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের কলেজ ছাত্র ফামিদুল বলেন, “আমরা এখন বাঁশি বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছি; বিদেশ থেকেও অর্ডার আসছে। ডিজিটাল মাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
হোমনা উপজেলার সংস্কৃতিকর্মী লুৎফর রহমান বলে, বাঁশির শিল্প শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের শিকড়ের- আমাদের আত্মার প্রতীক। প্রতিটি বাঁশি যেন দেশের ঐতিহ্য বহন করে।”
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুমি আক্তার, গ্রামটিতে বাঁশির সুর একসময়, শহর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়বে, তখন আমাদের মনে গেঁথে যায় শতবর্ষের ঐতিহ্য ও শিকড়ের প্রকৃত সুর।
এই প্রাচীন শিল্প কেবল একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং বাঙালির আত্মার, সাংস্কৃতিক গর্বের এবং জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষেলালিকা চাকমা বলেন, “শ্রীমদ্দি একটি এতিহ্যবাহী গ্রামে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পটাকে টিকিয়ে রেখেছে। অনেক পরিবার এই শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পয়লা বৈশাখসহ অন্যান্য যে দিবস আছে আমরা তাদের আমন্ত্রণ করি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করে আসছে।”
ঢাকা/এস