ডিসিদের নির্বাচনী আইন সর্বোচ্চ প্রয়োগের নির্দেশনা
Published: 19th, February 2025 GMT
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের নির্বাচনী আইন সর্বোচ্চ প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। একইসঙ্গে এখন থেকেই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ডিসিদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনি এসব আহ্বান জানান। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্য-অধিবেশনে অংশ নেয় ইসি।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “চারজন নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের সিনিয়র সচিব অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। বলতে গেলে একটা হেভিওয়েট ডেলিগেশন। এতে করে বোঝা যায়, আমরা এই সম্মেলনটাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সবাই এসেছি। আমার মনে হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরো কমিশন ডিসি সম্মেলনে এসেছে কি না, আমার জানা নেই, মনে হয় না।”
সিইসি বলেন, “আপনারা জানেন যখন জাতীয় নির্বাচন হয়, জেলা প্রশাসকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইনশৃঙ্খলাসহ পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ততা থাকে। আমরা তাদের এই মেসেজটা দিতে চেয়েছি, সামনে যে নির্বাচনটা আসছে, তারা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন নিজ উদ্যোগে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করব। আমাদের যা ক্ষমতা আছে তা আমরা প্রয়োগ করব। তাদের যে ক্ষমতা আইন দিয়েছে, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার কী কী ক্ষমতা, তা আমাদের একজন কমিশনার পড়ে শুনিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রো-অ্যাকটিভলি, অভিযোগের ভিত্তিতে নয়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, আপনারা সাংবাদিক বা কেউ একজন অভিযোগ করব, তা নয়। প্রো-অ্যাকটিভলি, নট রিঅ্যাকটিভলি। অ্যাকটিভলি যেকোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধ যাতে অ্যাড্রেস করা হয়, সে মেসেজটা আমরা দিয়েছি।”
সিইসি বলেন, “আমাদের ডিসিরা কিছু সাজেশন দিয়েছেন, তাদের কিছু অসুবিধার কথা বলেছেন। বিশেষ করে ট্রেজারিতে স্টোরেজ প্রবলেম বলেছেন। এনআইডি নিয়ে মানুষের হয়রানির কথা বলেছেন। আমরা এটা ক্লিয়ার করেছি যে এটা অ্যাড্রেস করার স্টেপ নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “যেহেতু আমি সিইসি, আমার তো সহযোগিতা চাইতেই হয়। রিটার্নিং অফিসার যারা থাকেন, এটা দয়া নয়, তারা আইনে বাধ্য এ ধরনের (নির্বাচনী) ডিউটি পালন করতে। আমরা চাই আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ।”
“আমরা বলেছি, আমরা একটা ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন দিতে চাই। জাতিকে উপহার দিতে চাই। আমরা যে ওয়াদা করেছি, সেই ওয়াদা পালন করতে চাই। এতে করে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের ভূমিকা আপনারা ১৬ আনা পালন করবেন। সেই অনুরোধ আমরা তাদের কাছে রেখেছি।”
সিইসি বলেন, “আমরা বলেছি যে, ইলেকশন ডে-তে বা ইলেকশনের দুই চার দিন আগে পরে নয়, এখন থেকে আপনারা ইলেকশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান। আপনার যেখানে যাবেন, সেখানে বক্তৃতার একটা অংশ যেন ইলেকশনকেন্দ্রিক থাকে।”
“মানুষ তো অনেকটা আমাদের ইলেকটোরাল সিস্টেমের ওপর আস্থা হারিয়েছে, আস্থার সংকট রয়েছে। যেখানে যাবেন, মানুষের ভোটের অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করবেন। তাহলে এটা একটা ইফেক্টিভ কাজ হবে।”
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা যেমন কমিশন নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি, আপনারা আমাদের সহযোদ্ধা। আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি, এই যুদ্ধ হলো- একটা সুন্দর ইলেকশন উপহার দেওয়ার যুদ্ধ। আপনারা (ডিসি) এখন থেকে কাজ শুরু করুন। তারা কথা দিয়েছেন, সেভাবে কাজ করবেন।”
“আমরা বলেছি যে আপনারা (ডিসি) ব্লেম গেম বাদ দিন। অমুকে এটা করেছে, তমুকে এটা করেছে, এজন্য আমরা পারিনি-এসব বাদ দিন। ব্লেম গেম নয়, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই, সামনের দিকে তাকাই। সামনে আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করি। অতীতে কী হয়েছে, তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে আমাদের কাজ ফেলে রাখতে পারব না। আমরা একসঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করব, তারা আমাদের ওয়াদা দিয়েছেন।”
সিইসি বলেন, “আগে নানাবিধ চাপ এসেছে তাদের উপরে। আমি তাদের নিশ্চিত করেছি, আমরা ওপর থেকে অবৈধ কোনো চাপ দেব না। আমরা আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করব। আপনারা আইনের সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করবেন। অন্যায় কোনো চাপ আপনাদের ওপর দেব না। আর ওপর থেকে কোনো চাপ এলে তা অ্যাবজর্ব করব আমরা। আপনাদের কোনো চাপের মধ্যে থাকতে হবে না। আমরা আইনের ঘাটতি দেখি না, প্রয়োগের ঘাটতি দেখেছি।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দিয়েছি। আমরা বলেছি এখন থেকে শুরু করুন। শুধু ভোটের দিনের জন্য বসে থাকবেন না। আপনাদের পুরোপুরি নিউট্রাল হতে হবে।”
জাতীয় নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে, কোনো টাইমফ্রেম দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো প্রধান উপদেষ্টা বলে দিয়েছেন, আর্লি হলে ডিসেম্বর, একটু দেরি হলে পরের বছরের প্রথম দিকে। সেটাতো তারা জানেনই।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জরুরি। এ বিষয়ে ডিসিরা কিছু বলেছেন কি না-জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “তারা বলেছেন, কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আছে।”
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এখন থ ক আম দ র বল ছ ন ক ষমত করব ন আপন র গ করব
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে ২৮ বস্তা টাকার পাশাপাশি প্রায় এক বস্তা চিঠি-চিরকুট পাওয়া গেছে। চিঠিতে কেউ প্রিয় মানুষের ভালোবাসা পেতে, কেউবা নিজের বিয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। কেউ নিজের সন্তানের রোগমুক্তি কামনা করেছেন। কেউ আবার পছন্দের দল বা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে পাগলা বাবার কাছে চিঠি লিখেছেন।
৪ মাস ১২ দিন পর আজ পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুক খোলা হয়। সিন্দুকে মোট ২৮ বস্তা টাকা, এক বস্তা চিরকুট, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। দিনভর গণনার পর এবার রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার।
দানের পাশাপাশি মনোবাসনা পূরণে কেউ কেউ সিন্দুকে চিরকুট বা চিঠি ফেলে যান। মানুষের ধারণা, এখানে চিরকুটের মাধ্যমে কিছু চাইলে, সেটাও পাওয়া যাবে। গতবার চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এবার বেনামি চিঠির পরিমাণ বেশি ছিল। কিছু চিঠিতে নাম থাকলেও ঠিকানা দেওয়া ছিল কম।
মো. ইমরান নামের এক তরুণ ভালোবাসার মানুষ রাবেয়াকে কাছে পেতে দানবাক্সে একটি চিরকুট রেখে গেছেন। চিঠিতে ইমরান লিখেছেন, ‘ইয়া পাগলা বাবা, আমাদের সালাম গ্রহণ করবেন। আমাদের আরজি কবুল করুন। আমাদের মনের বাসনা আপনি বোঝেন। ইমরান ভালোবাসে রাবেয়া আক্তারকে। রাবেয়ার পরিবার ইমরানকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি না। আপনি রাবেয়াকে এনে দেন।’
বেনামি একজন বিয়ের আকুতি জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি খুব অসহায়। আমার বিয়ে বারবার ভেঙে যাচ্ছে। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে চিন্তিত। চারপাশের মানুষের কটুকথা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি জানো আমি নির্দোষ ও নিরপরাধ। আমার বিয়েতে যদি কোনো বাধাবিপত্তি থাকলে তুমি সমাধান করে দাও...তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।’
আরও পড়ুনপাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া গেল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা১ ঘণ্টা আগেবেনামি আরেকটি চিরকুটে একজন পাগলা বাবার কাছে শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে জানতে চেয়েছেন, ‘পাগলা চাচা, শেখ হাসিনা কোথায়?’ আরেকজন ‘সাধারণ জনগণ’ নামে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে লিখেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও।’
রেহানা সারোয়ার নামের একজন সন্তান কামনা করে চিঠি লিখেছেন। তিনি নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ১২ বছর চলতাছে। কিন্তু এখনো আমি কোনো সন্তানের মা হতে পারলাম না। অনেক ডাক্তার দেখাইছি, কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই। আমি এমন কোনো দিন নাই, এমন কোনো রাত নাই, আমার আল্লাহর কাছে হাত তুলে কাঁদি নাই...আমাকে একটা নেক সন্তানের মা হওয়ার সুযোগ দেন।’
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া টাকা গণনার কাজ করছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ অন্যরা