ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কয়েক সপ্তাহের অভিযানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ঐতিহাসিক ও গবেষকেরা বলছেন, ১৯৬৭ সালে আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ ভূখণ্ডে বাড়িঘর ছাড়া হওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।

পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের তিনটি অংশে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়ি কিংবা মসজিদ, বিভিন্ন মিলনায়তন, বিদ্যালয়, পৌর কার্যালয়ের ভবন, এমনকি খামারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, জেনিন ও তুলকারেম এবং তুবাস এলাকার কাছে ‘বেড়ে চলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ দমানোর চেষ্টায় এ অভিযান পরিচালনা করছে তারা। ইসরায়েলি বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন বা ‘সন্ত্রাসী হামলার’ পরিকল্পনা করছেন, এমন অস্ত্রধারীরাই এ অভিযানের নিশানায় রয়েছেন।

পশ্চিম তীরে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকজনের অনেকে ওই সব মানুষের উত্তরসূরি, যাঁরা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ওই সময়কাল ফিলিস্তিনিদের কাছে নাকবা বা বিপর্যয় হিসেবে পরিচিত। নতুন করে ফিলিস্তিনিদের এ বাস্তুচ্যুতি সাময়িক হলেও তা তাঁদের মনে পুরোনো ইতিহাসের বেদনাদায়ক স্মৃতিই ফিরিয়ে আনছে।

তবে ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িঘর থেকে স্থায়ীভাবে উৎখাত করা ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) শাসিত এলাকাগুলোয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার গোপন চেষ্টা ইসরায়েলের এই অভিযান। এ অভিযান শুরুর আগে সম্প্রতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পশ্চিম তীরে সক্রিয় স্থানীয় বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

পশ্চিম তীরে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকজনের অনেকে ওইসব মানুষের উত্তরসূরি, যাঁরা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ওই সময়কাল ফিলিস্তিনিদের কাছে নাকবা বা বিপর্যয় হিসেবে পরিচিত। নতুন করে ফিলিস্তিনিদের এ বাস্তুচ্যুতি সাময়িক হলেও তা তাঁদের মনে পুরোনো ইতিহাসের বেদনাদায়ক স্মৃতিই ফিরিয়ে আনছে।

আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এখানকার শরণার্থীশিবিরগুলো অচল হয়ে পড়েছে। এগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত। সেনারা (ইসরায়েলি বাহিনী) যদি এখান থেকে চলেও যায়, তবু এগুলো মেরামত করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই।হাকিম আবু সাফিয়ে, তুলকারেম শরণার্থীশিবির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা

অভিযানে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জন নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। তবে তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর এখনো ওই ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই বাড়িছাড়া। পশ্চিম তীরের ইতিহাসবিষয়ক দুই ফিলিস্তিনি ও দুই ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞের মতে, প্রায় দুই যুগ আগে ২০০২ সালে এ ভূখণ্ডে একই রকমের অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। সে অভিযানে যত ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন, এবার হয়েছেন তার চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি জাগরণকালে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের কয়েকটি শহরে ওই অভিযান চালিয়েছিল। বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওই জাগরণ শুরু হলেও পরে ইসরায়েলে বেসামরিক লোকজনের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে।

২০০২ সালে যেমনটা ঘটেছে, তেমনটা এবারও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অনেকেরই আর ফেরার মতো বাড়িঘর অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা, সাম্প্রতিকতম অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে বহু ফিলিস্তিনির বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, নষ্ট করেছে রাস্তাঘাট, উপড়ে ফেলেছে পানি ও বিদ্যুতের লাইন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জেনিন থেকে বাড়িঘর ছেড়ে যান ১ হাজারের মতো মানুষ। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় এখানে বাস্তুচ্যুত লোকের সংখ্যা সেটিও অনেক গুণ ছাপিয়ে গেছে। এ তথ্য স্থানীয় লিডারশিপ কাউন্সিলের।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ল কজন র ব ড় ঘর ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান যুগে বর্ষবরণ

বঙ্গীয় নববর্ষের স্বাতন্ত্র্য কোথায়? ছদ্মনামা লেখক এ বি এম ইংরেজি ১৯৬৭ সালে ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এর পয়লা বৈশাখ ক্রোড়পত্রে লিখেছেন, ‘ঈদের উদ্‌যাপন হয় পুরো মুসলিম জাহানে,’ খ্রিষ্টান নিউ ইয়ার-এর প্রথা তো এ দেশে ব্রিটিশদের আমদানি; ‘বছরে শুধু একটা দিনই আমাদের গ্রামগুলো বিশেষ বঙ্গীয় রং আর উৎসবের চিহ্নে সেজে ওঠে।’ বাংলা নববর্ষ যেহেতু বিশেষভাবে দেশজ, অন্য কোনো উৎসবের সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে না।

পাকিস্তান যুগের সংবাদপত্রে বঙ্গীয় নতুন সন উদ্‌যাপনের যে ভাষ্য ধরা পড়েছে, সেগুলোর ওপর ভর করে এই লেখায় আমার কাজ তিনটি। প্রথমত, এটা ব্যাখ্যা করা যে ঠিক কোন অর্থে বাংলা বর্ষপঞ্জির মহল বা তালুক হচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, কীভাবে বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন উদ্‌যাপনের প্রথা আধুনিক অর্থে ‘ঐতিহ্য’ হয়ে উঠল। এবং সর্বশেষে নববর্ষের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কের প্রশ্নটিকে কীভাবে ফায়সালা করা হয়েছিল। বাংলা সন একান্তভাবে দেশজ—এ বি এমের এই দাবি সামান্য সঠিক হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কথাটির মানে পাকিস্তান যুগে ছিল এই যে, বাংলা সন নির্দিষ্টভাবে বাংলার ভূগোলের মধ্যে প্রবিষ্ট। বাংলা সনের যে হিজরি এবং মোগল নছব, সেটার জিকির সূত্রে পঞ্চাশের দশক থেকেই এই ভূগোল বা স্থানিকতার কথাটা উঠতে থাকে। মোগল যুগে দরবারি বর্ষপঞ্জি হিজরি হলেও ‘পাকিস্তান অবজারভার’ তাদের ১৯৫৫ সালের নববর্ষ প্রতিবেদন-এ জানাচ্ছে: কৃষিভিত্তিক পূর্ববঙ্গে—যেখানে প্রকৃতির অলঙ্ঘ্য নিয়মে ষড়ঋতু ৩৬৫ দিন ঘিরে আবর্তিত—চান্দ্রমাসের হিজরি সন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে বাধ্য। অর্থাৎ, একদিকে বাংলার প্রকৃতির আবর্তন এবং সেই প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শ্রমের নানা রকম ধরন, আর অন্যদিকে হিজরি সনের, মধ্যে একটি অসামঞ্জস্য আছে। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সিধা জবানে: চান্দ্রমাসের হিজরি সন মেনে তারিখ ঠিক করলে ‘তাহা প্রত্যেক বৎসর ফসল তোলার সময়ের সাথে মেলে না।’ (১৯৬৯)

১৩৭৩ বঙ্গাব্দের (১৯৬৭ সাল) পয়লা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তান যুগে বর্ষবরণ