নেত্রকোনায় চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, শ্যামগঞ্জ-জারিয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ
Published: 19th, February 2025 GMT
নেত্রকোনার পূর্বধলায় একটি যাত্রীবাহী চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে হঠাৎ করে আগুন ধরে। পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া রেলপথের জারিয়া আনসার ক্যাম্প বালুঘাটা সেতুর কাছে বলাকা ডাউন ট্রেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বেলা একটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পূর্বধলা স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ-জারিয়া রেলপথে প্রতিদিন পাঁচটি ট্রেন আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে একটি বলাকা ডাউন ট্রেন রয়েছে। অন্য চারটি লোকাল ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে ওই পথে চলাচল করে। আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বলাকা ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে পূর্বধলার জারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি পূর্বধলা স্টেশনে পৌঁছে। এর তিন মিনিট পর ওই স্টেশন থেকে পরের স্টেশন জারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জারিয়া আনসার ক্যাম্প বালুঘাটা সেতুর কাছে পৌঁছালেই ট্রেনের ইঞ্জিনে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা আগুন নেভাতে চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ট্রেনে থাকা যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে জারিয়া যাচ্ছিলাম। পূর্বধলা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার প্রায় ১৫ মিনিট পরই ট্রেনের ইঞ্জিনে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক কালো ধোঁয়া আর আগুন দেখতে পাই। আতঙ্কে যাত্রীরাও হইহুল্লোড় শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনে থাকা লোকোমাস্টার ট্রেন থামাতে বলেন। এরপর স্থানীয় লোকজন পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ইঞ্জিনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ট্রেনে থাকা যাত্রী বা অন্য কোনো বগির ক্ষতি হয়নি।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জারিয়া এলাকার বাসিন্দা তরিকুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি ইঞ্জিনে আগুন ধরা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন বালুঘাটা সেতু এলাকায় এসে থেমেছে। আগুন দেখে স্থানীয় নারী-পুরুষ সবাই গামলা, কলসি, বালতিতে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কাছে পানি থাকায় আমরা সবাই মিলে প্রায় ৯০ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছায়।’
এ বিষয়ে পূর্বধলা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আবুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইঞ্জিনের একটি যন্ত্র থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে জেনেছি। আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে চালক সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন থামিয়ে দেন। আগুনে ইঞ্জিনটির ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুরো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যাবে। আর আগুন লাগা ইঞ্জিনটি বেশ পুরোনো ছিল। ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধারকারী ট্রেনের ইঞ্জিন রওনা হয়েছে। ট্রেনটি শ্যামগঞ্জ জংশনে নিয়ে যাওয়া হবে। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য মগঞ জ জ র য়
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ুদূষণে ঢাকাকে ছাড়াল কোন ৩ শহর
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্রের রোগ) মেডিসিন বিভাগে শয্যাসংখ্যা ৩৭। গতকাল সোমবার প্রতিটি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগী আসলে ছিল ৯০–এর বেশি। কারণ, শয্যায় স্থান না হওয়ায় অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে আছেন। এ তথ্য জানালেন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক রোগীর শয্যার বিপরীতে আরও দুই রোগী রাখতে হচ্ছে। কারণ, শয্যাসংকট। দিন দিন শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ছে। শহরে যে দূষণ, তাতেই এ অবস্থা।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখা হয়। চলতি মাসে রোগীসংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভাগ সূত্র জানাচ্ছে।
রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়চলতি মার্চ মাসে (২৩ তারিখ পর্যন্ত) ময়মনসিংহের বায়ুদূষণ রাজধানী ঢাকার চেয়ে বেশি। দেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক বেশি হয়। তবে এ মাসে ময়মনসিংহসহ রংপুর ও রাজশাহীর বায়ুর মানও ঢাকার চেয়ে খারাপ। চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত রাজশাহীর বাতাস। এ তথ্য খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক বলছিলেন, ‘ঢাকার বাইরে দূষণ বাড়ছে, এটা আমরা দেখছি। এটা কেন হচ্ছে, কিছু কারণও অনুমান করেছি। কিন্তু তারপরও এটা দুশ্চিন্তার বিষয়।’
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুর মান নির্ণয়ের জন্য নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এর মধ্যে অনেক বেশি পরিচিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এয়ার নাউ। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও প্রায় নিয়মিত দিনভিত্তিক বায়ুমানের অবস্থা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। এর তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিদিন অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, ক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড এবং ওজোনের মান দেখে। দেশের ৩১টি স্টেশনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এসব দূষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান শুধু অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (জিএম ২.৫) মান দেখে। সে অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুর যে মান পর্যবেক্ষণ করে, তা আরও বিস্তৃত।
ঢাকার চেয়ে বেশি দূষণ ৩ নগরে
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫১ হলে তাকে ভালো বলা হয়। মান ৫১ থেকে ১০০ হলে বায়ুর মান মাঝারি। ১০১ থেকে ১৫০ বায়ুর মান সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকারক বলে গণ্য হয়। বায়ুর মানকে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয় যদি মান ১৫১ থেকে ২০০–এর মধ্যে থাকে। খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়, মান যখন ২০১ থেকে ৩০০–এর মধ্যে থাকে। আর ৩০০–এর বেশি মান হলে তা হয় দুর্যোগপূর্ণ। এ হিসাবে মার্চের ২৩ দিনের একদিনও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুরের মানুষ নির্মল বায়ু পায়নি।
চলতি মাসের ২৩ দিনের মধ্যে চার দিন বাদ দিয়ে ১৯ দিনের দূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সে চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল রাজশাহীতে—গড় মান ২০৩। এরপর ছিল ময়মনসিংহে—মান ১৯৮। উত্তরের আরেক নগর রংপুরের মান ছিল ১৮৭। চার নগরীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম ছিল ঢাকার মান—১৭৮। দিনের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল ১২ মার্চ রংপুরে—৩২৩। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষণও ছিল এ শহরে ১১ মার্চ। এর মান ছিল ৩০৯। তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষণ ছিল ১ মার্চ—রাজশাহীতে। এর মান ছিল ৩০৩।
ঢাকার বাইরে এত দূষণ কেন
ময়মনসিংহ শহরের রাস্তায় হাঁটলে একটি সাধারণ দৃশ্য প্রায় সর্বত্র চোখে পড়ে। তা হলো, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন উপচে পড়ছে আবর্জনা। এসব পরিষ্কার করতে নগর কর্তৃপক্ষের তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। নির্মাণকাজের ধুলাবালুতে আশপাশ প্রায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সেসব দেখারও তেমন কেউ নেই।
রংপুর শহরতলিতে ইটের ভাটা আছে অনেক। এগুলোর দূষণ প্রায় অনিয়ন্ত্রিত।
রাজধানীর বাইরে যানবাহন, কলকারখানা, বর্জ্য পোড়ানো, ইটভাটা ইত্যাদি দূষণের নানা উৎসের উপস্থিতি কম। তারপরও দূষণ এত বেশি কেন বিভাগীয় এসব শহরে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা, চালের কল এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।’
দেশের বায়ুদূষণের একটি বড় উপাদান আন্তসীমান্ত দূষিত বায়ুপ্রবাহ। যেটি ভারতের হরিয়ানা ও দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোরের মতো অঞ্চল ঘুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে এর প্রবেশের পথ উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা রংপুর। তাই এখানে এবং রাজশাহীতে স্থানীয় উৎসের পাশাপাশি এই বায়ুপ্রবাহের দায় আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সালাম। তিনি বলেন, আন্তসীমান্ত বায়ুকে কারণ দেখিয়ে অবশ্য স্থানীয় উৎসগুলোর নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত হচ্ছে। এর দায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এড়াতে পারে না।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও ময়মনসিংহ]