ঢাকাই সিনেমার বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি। ব্যক্তি জীবনে তার প্রেম-বিয়ে নিয়ে মাঝে মধ্যেই গুঞ্জন শোনা যায়। সম্প্রতি তরুণ গায়ক শেখ সাদীর সঙ্গে তার প্রেমের খবর রটে। তাদের একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে। ইদানীং পরীমণি তার ফেসবুক পেজে শেখ সাদীর গাওয়া গানও শেয়ার করছেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে শেখ সাদীর গাওয়া নতুন গান ‘মনে নাই দয়া’। গানটি পরীমণি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছেন। ভালোবাসার ইমোজি দিয়ে এক শব্দের একটি ক্যাপশন দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

গান নিয়ে পরীমণির সেই ফেসবুক পোস্টে একজন মন্তব্য করেছেন, “এভাবে সাদী ভাইকে ‘ছ্যাঁকাটা’ না দিলেও হতো, পরী।” এমন মন্তব্যে পরীমণিও চুপ থাকেননি। কিছুক্ষণ পরই উত্তরে এ অভিনেত্রী লেখেন, “কেবল তো শুরু। সারাজীবনই দেব।” পরীমণির উত্তরে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে পরিচয় করালেন পরীমণি

ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দুনিয়া জয় করা যায়: পরীমণি

পরীমণির পোস্টে সাদা রঙের ভালোবাসার ইমোজি দিয়েছেন শেখ সাদী। এমন ইমোজিতে সন্তুষ্ট হননি পরীমণি, তা মন্তব্যে বোঝা গেছে। পাল্টা মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, “লাল লাগবে আমার।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার আইসিসিতে করার দাবি

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) করার দাবি উঠেছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদন জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যবচ্ছেদ, দায় ও বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। আজ রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, জাতিসংঘ যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, দেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় সেসব (তথ্য-উপাত্ত) তারা বাংলাদেশকে দেবে না। আর বিচারের অগ্রগতি ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে। তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়নি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের অনুসন্ধানের তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে দিতে রাজি আছে, যদি সেই (বিচার) প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয় বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছ কীভাবে হবে—আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকলে তারা (জাতিসংঘ) সহযোগিতা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচার এখনো ঠিকমতো হয়নি। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন অনুসরণ করেনি।

সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনে করেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো ধীরগতি বা নীরবতা অবলম্বন করে, তাহলে হয়তো জনগণ আবার রাজপথে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ‘সেই পরিস্থিতির দিকে যদি বাংলাদেশ যায়, তাহলে আমরা মনে করি, এখানে একটা গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘চামড়া গন্ডারের মতো’ বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘জনতা আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করতে আপনারা বাধ্য। যদি মনে করেন অবাধ্য হবেন, কোনো কানাগলি পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে পরের সরকারে আসার পথ পরিষ্কার করবেন—এই সুযোগ আপনাদের বাংলাদেশ আর দেবে না।’

আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে উল্লেখ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, কারণ আওয়ামী লীগের বিষয়ে, হাসিনার বিষয়ে যদি কোনো সুরাহা বাংলাদেশে না হয়, তাহলে কোনো নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে তা সুষ্ঠুভাবে হবে না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দেশে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যতটা নির্বাচনমুখী আলাপে অভ্যস্ত, বিচার এবং সংস্কারের প্রশ্নে তাদের অবস্থান ততটা শক্ত নয়।

ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে, এ আলাপের মধ্যেই এখন পর্যন্ত সরকার যেতে পারেনি মন্তব্য করে আখতার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের বিচার দাবি করতে হবে। সরকার অপারগতা প্রকাশ করলে জনতার মধ্য থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে নিতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা বীভৎসতা ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি জেল-জরিমানার মধ্য দিয়ে হতে পারে না উল্লেখ করে আখতার বলেন, তাদের ফাঁসি হতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারবে না বা এভিডেন্স (তথ্যপ্রমাণ) শেয়ার করতে পারবে না, যত দিন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড আমাদের আইনে আছে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশ অন্তত স্থগিত রাখার সুযোগ ছিল। তাতে দেশের লাভ হতো। বিচারিক প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে সহায়তা পাওয়া যেত।

রাশনা ইমাম বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের ঘাটতি আছে। তার জন্য গণ-অভ্যুত্থানের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্য ‘কংক্রিট এভিডেন্স’ হতে পারে না বলেও মনে করেন রাশনা ইমাম। তিনি বলেন, নিয়মিত আদালতে গণহারে মামলা হচ্ছে, গায়েবি মামলা হচ্ছে। এগুলোও বিচারপ্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, সরকার বিচার করতে আগ্রহী, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সক্ষমতা নিয়ে ভীষণ সন্দেহ আছে যে আদৌ তারা এই বিচার করতে পারবে কি না। গত চার-পাঁচ মাসে এমন কোনো কিছু তারা দৃশ্যমান করতে পারেনি যে তারা এই বিচার করতে পারবে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ থাকবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ, জাতিসংঘ একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে, যেখানে প্রতিবেদন কীভাবে করা হবে, কারা করবে ইত্যাদি বিষয়ে। এই প্রতিবেদনও সেভাবেই করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল, তবে তা নেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তদন্তও আরও গতিশীল হওয়া উচিত ছিল। যাঁরা অপরাধের আলামত ধ্বংস করছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী হুমায়রা নূর, শহীদ মিরাজের বাবা আবদুর নূর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সেলের সম্পাদক মোশফিকুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ