বিপুল পরিমাণ সম্পদের গোপন নথি সরিয়ে ফেলেছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে ওইসব নথি উদ্ধার করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ টিমের সদস্যরা।

মঙ্গলবার রাতে নথিগুলো উদ্ধার করা হলেও দুদকের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয় আজ বুধবার দুপুরে।

দুদক জানায়, শহিদুল হকের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অনুসন্ধান কার্যক্রমের এক পর্যায়ে দুদক গোয়েন্দা তথ্য পায়- শহিদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সম্বলিত নথিপত্র তার একজন নিকট আত্মীয়ের কাছে দু'টি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, নথিপত্রগুলো গোপন রাখার জন্য সে আত্মীয় অপর এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান। এ সব নথিপত্রে শহিদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম শহিদুল হকের আত্মীয়ে বাড়িকে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তল্লাশিকালে দুইটি বস্তায় মোট ৩৮ প্রকৃতির ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে বিপুল মূল্যমানের সম্পদের দলিল, বিভিন্ন গোপনীয় চুক্তিপত্র, ডিড অব এগ্রিমেন্ট,  পাওয়ার অব অ্যাটর্নী, সংঘ স্মারকের ছায়ালিপি, অফার লেটার, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ইত্যাদি।
 
প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ সম্পদের এ তথ্য অনুসন্ধান কার্যক্রমে সহায়ক হবে বিবেচনায় কমিশনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় আলামতগুলো জব্দ করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক আইজ প

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তানের কতটা ক্ষতি করতে পারে

চুক্তিটি কীভাবে কাজ করে

ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করার আগে এই চুক্তির ফলে আসলে কী হতো, তা স্মরণ করা যেতে পারে। কয়েক বছরের আলোচনার পর বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতার ১৯৬০ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই আন্তসীমান্ত পানিচুক্তিগুলোর একটি।

এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীকে দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত করা হয়েছে। ভারতের ভাগে পড়েছে পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী। নদীগুলো হলো রাবি [ইরাবতী], বিয়াস [বিপাসা] ও শতদ্রু। পাকিস্তানে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদী। নদীগুলোর নাম হলো সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব [চন্দ্রভাগা]। এই তিন নদীই সিন্ধু অববাহিকার প্রায় ৮০ শতাংশ পানির উৎস।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি জলবিদ্যুৎ এবং সীমিত সেচের মতো অ-ভোগ্য উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। তবে এসব নদীর পানি ধরে রাখা বা এমন করে তাদের প্রবাহ ভিন্ন দিকে ঘোরানোর অনুমতি নেই, যা ভাটি অঞ্চলের নদীগুলোতে প্রবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব কড়াকড়ি পরিকল্পনা করেই সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে, যা উভয় পক্ষ মেনে চলতে বাধ্য। চুক্তির মধ্যে প্রকৌশলগত নকশা বৈশিষ্ট্য এবং চুক্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

এই চুক্তি পাকিস্তানের কাছে ভাগের পানি পাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। এর ওপর ভিত্তি করেই নিজেদের সম্পূর্ণ সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রয়োজনীয় পূর্বাভাস দিয়ে থাকে দেশটি।

চুক্তিতে সহযোগিতা ও সংঘাত নিরসনের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। একটি স্থায়ী সিন্ধু কমিশন রয়েছে, যেখানে উভয় দেশ থেকে একজন করে কমিশনার রয়েছেন। তথ্য বিনিময়, নতুন প্রকল্প পর্যালোচনা এবং নিয়মিত বৈঠক করা তাদের কাজ।

মতবিরোধ দেখা দিলে বহুস্তরবিশিষ্ট প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তা সমাধান করার কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত প্রশ্নগুলো প্রথমে কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। অমীমাংসিত বিষয়গুলো একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়ে থাকে। আর আইনি বিরোধগুলো আন্তর্জাতিক সালিস আদালতে পাঠানো যেতে পারে, যেখানে বিশ্বব্যাংক উভয় ফোরামেই ভূমিকা পালন করবে। ভারতের বাগলিহার ও কিষাণগঙ্গা বাঁধ নিয়ে মতবিরোধ সমাধানের জন্য এই প্রক্রিয়া এর আগেও ব্যবহার করা হয়েছে।

কোনো দেশের একতরফা পদক্ষেপ ঠেকাতেই চুক্তিটি এককভাবে নকশা করা হয়েছে। চুক্তিটির মেয়াদ কবে শেষ হবে, সেটার সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি। স্থগিতের কোনো বিধান নেই। দ্বাদশ ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, দরকার হলে কেবল পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমেই চুক্তিটি সংশোধন করা যেতে পারে, তবে এমনটি কখনো হয়নি।

হাইড্রোলজিক বা জলবিজ্ঞানের বাস্তবতা

এখন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, ভারত কী একতরফাভাবে পাকিস্তানে পানির প্রবাহ ‘বন্ধ’ করতে পারে? তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, ‘না’। উচ্চ প্রবাহের মৌসুমে পানির চলাচলে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, সেই মাত্রায় পানির প্রবাহ বন্ধের কোনো এখতিয়ার ভারতের নেই।

সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব অনেক বড় নদী। মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তুষার গলে এই নদীগুলোতে কয়েক শ কোটি ঘনমিটার জল পরিবাহিত হয়। ভারতে এই নদীগুলোর উজানে বাগলিহার ও কিষাণগঙ্গা বাঁধসহ কিছু অবকাঠামো রয়েছে। কিন্তু এসব অবকাঠামোর কোনোটি এত বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য নকশা করা হয়নি। এগুলো এমন কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা সীমিত পানি সংরক্ষণ করেই পরিচালিত হয়। এসব প্রকল্পের প্রভাব এতই সামান্য যে ভারত যদি সমন্বয় করে একযোগে সব বাঁধের পানিও ছাড়ে, তাতেও নদীগুলোর প্রবাহের সময়ে কেবল সামান্য পরিবর্তন আসবে।

উল্লিখিত উচ্চপ্রবাহের সময়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানির মোট পরিমাণ এত বেশি হয় যে তারা নিজেদের উজানের অঞ্চলগুলোকে প্লাবিত করে ফেলে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলোর বরাদ্দ করা বেশির ভাগ প্রবাহ আগে থেকেই ভারত ব্যবহার করে আসছে। তাই নদীগুলোর ওপর নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে, ভাটিতে তাদের প্রভাব আরও সীমিত হয়ে আসবে।

তবে শুষ্ক মৌসুম নিয়েই সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। কারণ, তখন অববাহিকাজুড়ে পানির প্রবাহ কমে যায়, ফলে পানি ধরে রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন সময়ের হিসাবটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই চুক্তি কার্যকর না থাকলে শুষ্ক মৌসুমে কী হবে, সেটাই বড় ভাবনার বিষয়।

মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ভারত চুক্তির কাঠামোর বাইরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলে তা নতুন অবকাঠামো তৈরির দরজা খুলে দেবে, যা পাকিস্তান অংশের প্রবাহের সময় এবং পানির পরিমাণের ওপর [ভারতকে] আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেবে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। যেকোনো বৃহৎ আকারের বাঁধ বা পানি অন্যদিকে সরানোর প্রকল্প নির্মাণ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানি ধরে রাখার যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তা সীমিত ও ভূতাত্ত্বিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। নতুন সুযোগ-সুবিধা নির্মাণের জন্য বিপুল অর্থেরও দরকার আছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি আরও বেশি।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোতে ভারতের নতুন বড় ধরনের জলাধার নির্মাণের যেকোনো প্রচেষ্টাকে যুদ্ধের উসকানি হিসেবে দেখা হবে। আজকের উপগ্রহের যুগে এই ধরনের অবকাঠামোগুলোকে লুকিয়ে রাখা যাবে না। তা রাজনৈতিকভাবে তো বটেই, সম্ভব হলে সামরিকভাবে মোকাবিলা করা হতে পারে।
সিন্ধু অববাহিকা ঘিরে জলবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাও আছে। চেনাব বা ঝিলামের মতো নদীর উচ্চপ্রবাহ আটকে রাখলে ভারতের উজানের অঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। আর সিন্ধু অববাহিকা থেকে ভারতের অন্যান্য অংশে পানি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিতে গেলে প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ ও জ্বালানি খরচের প্রয়োজন হবে, যার ন্যায্যতা প্রমাণ উত্তেজনাহীন শান্তির সময়ে বেশ কঠিন হবে।

অববাহিকাসংক্রান্ত জটিলতার বাইরে ওই অঞ্চলে নতুন অবকাঠামো তৈরি হলে সুনাম ও কৌশলগত ঝুঁকিরও বিষয় আছে। ভারত নিজেই ব্রহ্মপুত্র ও চীন থেকে উৎপন্ন অন্যান্য নদীর ভাটি অঞ্চলের দেশ। এই বাস্তবতার কারণেই ভারত ঐতিহাসিকভাবে ভাটি অঞ্চলের অধিকারকে সম্মান করে থাকে। কিন্তু এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করে বা চুক্তির বিষয়ে একতরফা কাজ করার মাধ্যমে ভারত এমন নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা একদিন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। এমন পদক্ষেপ নিলে ভারতকে যে মূল্য দিতে হবে না, তা বলা যায় না। এই ধরনের পদক্ষেপের পর অন্যান্য আন্তর্জাতিক আলোচনায় নিজেকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করা ভারতের জন্য কঠিন হবে।

পাকিস্তানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব

ভারত যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে, তার ভৌত ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধ থাকলেও চুক্তি সুরক্ষার বিষয়ে এরই মধ্যে আস্থায় যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি এই কারণে নয় যে আগামীকাল থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। বরং তা এই কারণে, যে চুক্তিটি ভারত সমর্থন করেছে, তা কখনোই অনিশ্চয়তার জন্য করা হয়নি। সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের প্রবাহ আমাদের [পাকিস্তানের] কৃষি, শহর ও জ্বালানি ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এই পানির বিকল্প নেই।

পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভারতের পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার প্রভাব (বাস্তবায়ন হলে) সুদূরপ্রসারী হতে পারে। পাকিস্তানের সেচব্যবস্থা বিশ্বের বৃহত্তম সেচব্যবস্থাগুলোর একটি, যা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর প্রবাহের পূর্বাভাসযোগ্য সময়ের ওপর নির্ভর করে। এসব প্রবাহের ওপর ভিত্তি করেই চারপাশের কৃষকেরা ফসল চাষের পরিকল্পনা করেন। খালের সময়সূচি কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সেই ছন্দ সামান্য ব্যাহত হলেও জলব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করবে।

পূর্বাভাস নিয়েই সবচেয়ে বড় তাৎক্ষণিক ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানে আসা পানির মোট পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বদলে না গেলেও, সেই পানির আগমনের সময়ে সামান্য পরিবর্তন হলেও তা প্রকৃতই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। গম রোপণ মৌসুমে বিলম্ব হলে অথবা শীতের শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেলে বপনের সুযোগ হাত ছাড়া হতে পারে, উৎপাদন কমতে পারে বা উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। মিঠাপানির প্রবাহ কমার কারণে সিন্ধু বদ্বীপ এরই মধ্যে সংকুচিত হতে শুরু করেছে। উজানের প্রবাহে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা এই সংকোচনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। উপকূলীয় মানুষের জীবিকা ও মৎস্যজীবীদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।

পাকিস্তান অংশে সিন্ধু নদের জেগে উঠা চরে হাঁটছেন মানুষ। ১৫ মার্চ, জমশোরো

সম্পর্কিত নিবন্ধ