যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে ৭৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬:৪০ টার দিকে বেসাইডের ১১১তম প্রিসিঙ্কট সদর দফতরের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (NYPD) চিফ অফ প্যাট্রোল ফিলিপ রিভেরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬:৪০ টার দিকে ৭৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার গাড়ি থেকে নেমে  ১১১তম প্রিসিঙ্কট সদর দফতর, ৪৫-০৬ ২১৫তম স্ট্রিটের দিকে এগিয়ে যান এবং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। কথোপকথনের সময়  তিনি বিল্ডিংয়ের ঠিক বাইরে পুলিশের দিকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র তাক করেন।

তিনি আরও বলেন, অফিসাররা তাকে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন, তবে তিনি তা অমান্য করেন এবং পুলিশের দিকে বন্দুক তাক করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে চারজন অফিসার গুলি চালান।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধ ব্যক্তি বুকে একাধিক গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে নিউইয়র্ক-প্রেসবিটারিয়ান-কুইন্স হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃদ্ধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে একটি গ্রেপ্তারের রেকর্ড রয়েছে। তবে তার সাম্প্রতিক অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই।

ঘটনাস্থল থেকে একটি লোডেড কোবরা .

৩৮ স্পেশাল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশের গুলিতে নিজের জীবন শেষ করতে চেয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

এটি ১১১তম প্রিসিঙ্কট স্টেশনহাউসে ছয় বছরের মধ্যে এই দিয়ে দ্বিতীয়বার পুলিশের গুলির ঘটনা ঘটল। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এক ব্যক্তি গাড়ি দুর্ঘটনার পর পুলিশের দিকে ছুরি হাতে তেড়ে গেলে পুলিশ তাকে গুলি করেছিল।

এনওয়াইপিডি জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনো কর্তব্য লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন উইয র ক ন উইয র ক অফ স র

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ টাকার ফলে শুল্ক–কর দিতে হয় ১৩৬ টাকা

আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের ওপর শুল্ক-করের ‘অত্যাচার’ যেন বেড়েই চলেছে। বিদেশি ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বসানো হয়েছে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও। আবার বাড়ানো হয়েছে অগ্রিম কর। বসানো হয়েছে অগ্রিম ভ্যাটও। বিদেশি ফলে শুল্ক–করারোপের সর্বশেষ সংযোজন ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ১০০ টাকার ফল আমদানি করলে ১৩৬ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়। সেখানে বিদেশি ফল আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল বন্দর এলাকা পার হলেই ১০০ টাকার ফলের দাম হয়ে যায় ২৩৬ টাকা। বাজার পর্যন্ত আসতে এই দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও যোগ হয়, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়েই চাপে।

রমজানের সময় আপেল, নাশপাতি, আঙুর, কমলা, মাল্টা ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু বাড়তি শুল্ক–করের কারণে এবার বিদেশি ফল আমদানি কমে গেছে।

শুল্ক কর কত

বর্তমানে ফল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১০ শতাংশ অগ্রিম কর, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আছে। মোটামুটি যত ধরনের শুল্ক-কর আছে, সবই আরোপ করা হয়েছে বিদেশি ফল আমদানির ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে শুল্ক-কর ভার ১৩৬ শতাংশ।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত আমদানি পণ্যের মধ্যে গাড়ি ও মদ-সিগারেটের পর তাজা ফল আমদানিতেই সবচেয়ে বেশি শুল্ক-কর দিতে হয়।

শুল্ক-করের চাপ বেড়ে চলেছে

গত মাসে আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টা, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি করা ফলের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে ফল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছিল। ওই সময় দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। এ কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসায় সরকার। ফল আমদানিকারকদের দাবি, সাধারণত জরুরি অবস্থা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়। এখন দেশে ওই ধরনের পরিস্থিতি নেই। তারপর ফল আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বহাল রয়েছে।

ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি ২০২৩–এ বলা হয়েছে, শুধু জরুরি প্রয়োজনেই নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো যেতে পারে। কিন্তু ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

৪০% মুনাফা কতটা বাস্তবসম্মত

গত বছর ফল আমদানির ওপর অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এই ১০ শতাংশ অগ্রিম কর সমন্বয় করতে হলে অন্তত ৪০ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। কিন্তু এই ধরনের পচনশীল পণ্যে ১৫-২০ শতাংশের বেশি মুনাফা হয় না। ফলে যাঁরা নিয়মকানুন মেনে ফল আমদানি করেন, তাঁরা এত মুনাফা করতে পারেন না। কয়েক বছর ধরে কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠী ফল আমদানিতে নেমেছে। অভিযোগ আছে, ১০ শতাংশ অগ্রিম করের সুযোগ নিয়ে অনেকে কালোটাকা সাদা করছেন।

মূল্য সংযোজন নেই, কিন্তু ভ্যাট আছে

বিদেশি ফল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম কর দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিদেশি আপেল, আঙুর, নাশপাতি, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি ফল যে কার্টনে আসে, তা শুল্কায়নের পর সেভাবেই বাজারে আসে। ফলে খুব বেশি মূল্য সংযোজনের সুযোগ নেই। অথচ ভ্যাট দিতে হয়।

এ বিষয়ে তাজা ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আপেল, কমলা, নাশপাতি, মাল্টা এসব আর বিলাস পণ্য নয়। রোগীর পথ্য হিসেবে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি পুষ্টিমান নিশ্চিত করতেও ফল বেশ চলে। পবিত্র রমজান মাসেও ফলের বেশ চাহিদা থাকে। তাই এসব ফলের ওপর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর কমানো উচিত।

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে আপেল, নাশপাতির মতো বিদেশি ফল উৎপাদন হয় না বললেই চলে। দেশীয় পণ্য সুরক্ষা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই এত শুল্ক-কর আরোপ করার যুক্তি নেই। শুল্ক–কর বেশি হওয়ায় চোরাই পথে ফল আমদানি বেড়ে গেছে।

তাজা ফল বিলাস পণ্য নয়

তাজা ফলকে বিলাস পণ্য হিসেবে মনে করে না ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৬ সালের এসেনশিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশকীয় পণ্য’। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, মাল্টা, কমলা এসব এখন আর বিলাস পণ্য নয়। রমজানের সময় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকে। আবার রোগীর জন্য এসব ফল খাওয়াতে বলেন চিকিৎসকেরা। তাই এসব পণ্যে শুল্ক-কর কমানো উচিত।

সম্প্রতি আমদানি করা ফলের শুল্ক-কর কমাতে এনবিআরকে সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। তাতে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, অগ্রিম কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ৫ শতাংশ আগাম কর বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

আমদানি কমেছে

বর্তমানে বিদেশ থেকে ৩৮ ধরনের ফল আমদানি হয়। এনবিআরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আপেল আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ, মাল্টা ৭০ শতাংশ, আঙুর ২৯ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মেন্ডারিন ৫১ শতাংশ, আঙুর ২১ শতাংশ, আপেল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নাশপাতি ৪৫ শতাংশ, আনার ও ড্রাগনের ৩২ শতাংশ আমদানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়।

এনবিআরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে। এসব ফল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ