দামে কম হলেও পাঙাস মাছকে যে কারণে অবহেলা করতে নেই
Published: 19th, February 2025 GMT
মাছ ছাড়া বাঙালির চলে না। দামের কারণে অনেকেরই ইলিশ–রুই-কাতলা খুব একটা পাতে তোলা হয়ে ওঠে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের ভরসা তাই পাঙাশ। কম দাম হওয়ার কারণে অনেকেই মনে করেন যে পাঙাশ মাছে তেমন কোনো পুষ্টি উপাদান নেই। তাই এই মাছ খেলে তেমন কোনো উপকারিতাও পাওয়া যাবে না। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ১০০ গ্রাম কাঁটা ছাড়া পাঙাশ মাছে আছে ৬৭৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৫ গ্রাম আমিষ, ১১ গ্রাম ফ্যাট, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ১৩০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১ দশমিক ৮৫ মিলিগ্রাম জিংকসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।
পাঙাশ মাছের উপকারিতা১.
পাঙাশ মাছ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভালো উৎস হওয়ার কারণে দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করে দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. পাঙাশ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি আসিড ইপিএ ও ডিএইচএ পাওয়া যায়। এসব উপাদান স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে, স্মরণশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় ঠিক রাখতেও এগুলো কার্যকর।
আরও পড়ুনপেট ফাঁপা কমাতে যে ৫টি ফল খাবেন০৭ জানুয়ারি ২০২৫৩. মাছের ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, যা অস্টিওপোরোসিস ও এথেরোস্ক্লেরোসিসের বিকাশকে প্রতিহত করে।
৪. খনিজ উপাদানগুলো মস্তিষ্কের কার্যকলাপ স্বাভাবিক করে। স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৫. এ ছাড়া পাঙাশ মাছে থাকা জৈব অ্যাসিড দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করতে, নখের ভঙ্গুরতা দূর করতে এবং চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র্যাডিকেলকে প্রতিহত করে প্রাথমিক টিস্যু ও কোষের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
৬. আমিষে ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, এর মধ্যে কিছু অত্যাবশ্যকীয়। খাবারে কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তার ওপর নির্ভর করে আমিষের গুণমান। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাঙালিরা যেসব মাছ খেয়ে থাকে, তার মধ্যে পাঙাশ মাছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড বেশি পাওয়া যায়। এরপর তেলাপিয়া ও রুই মাছ। এক গ্রাম আমিষে ২৭৭ মিলিগ্রাম অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকা উচিত। সেখানে পাঙাশে আছে ৪৩০ মিলিগ্রাম। তাই পাঙাশ মাছ গ্রহণ করার মাধ্যমে দেহে আমিষের চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব।
আরও পড়ুনকেন খাবেন সকালে এই পাঁচ পানির যেকোনো একটি ২১ জানুয়ারি ২০২৫সাবধানতাবেশির ভাগ পাঙাশ মাছ এখন কৃত্রিমভাবে পুকুরে চাষ করা হয়। চাষের সময় যে খাবার দেওয়া হয়, সেগুলোর কারণে পাঙাশ মাছ ক্ষতিকর হতে পারে। পাঙাশ মাছ সংরক্ষণের জন্য প্রচুর প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক বা রাসায়নিক যেসব পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তা দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাজা মাছের বদলে সংরক্ষিত পাঙাশ মাছ গ্রহণের ফলে দেখা দিতে পারে শারীরিক জটিলতা।
আবার পাঙাশ মাছে যেহেতু অতিরিক্ত তেল থাকে, সে জন্য অতিরিক্ত গ্রহণে রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে বা দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা।
রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত না হলে এই মাছ গ্রহণের ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনমুক্তাগাছার জমিদারবাড়িতে কীভাবে ইলিশ মাছ কাটা হতো জানেন?৩১ আগস্ট ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ম ইন উপ দ ন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।
২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।